ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘এ অর্জন বেঁচে থাকবে অনন্তকাল’

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ৬ আগস্ট ২০১৬

‘এ অর্জন বেঁচে থাকবে অনন্তকাল’

এবার রিওতে বেশ ফুরফুরে মেজাজে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশী প্রতিযোগীদের। অন্যান্য আসরগুলোতে অংশগ্রহণই মূল লক্ষ্য থাকলেও এবার পদক জয়ের স্বপ্ন বুনছেন লাল-সবুজের দেশের এ্যাথলেটরা। গলফার সিদ্দিকুর রহমান ও শূটার আব্দুল্লাহ হেল বাকীকে নিয়ে প্রত্যাশার পারদটা উর্ধমুখী। রিওতে এ দু’জনকে বেশ আত্মবিশ্বাসী দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে বাংলার টাইগার উডস সিদ্দিকুরকে। দেশসেরা এই গলফার জনকণ্ঠকে দেয়া একান্ত সাক্ষাতকারে জানিয়েছেন, জাতীয় পতাকার সম্মান রক্ষার জন্য তিনি তার সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করবেন। গোটা দেশবাসীর আকাক্সিক্ষত গলফ ইভেন্টে সিদ্দিকুরের মিশন শুরু হবে আগামী বৃহস্পতিবার। এর আগে বাংলাদেশ সময় শনিবার ভোরে হয়ে যাওয়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পতাকা বহন করার কথা ৩১ বছর বয়সী সিদ্দিকুরের। যা হয়ত ইতোমধ্যে টিভি পর্দার কল্যাণে সবাই দেখেছেন। অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মার্চপাস্টে মাঠে নামার আগে সাক্ষাতকারে নিজের অভিব্যক্তির কথা জানান সিদ্দিকুর। লাল-সবুজের পতাকা বহন করার সুযোগ পেয়ে আবেগাল্পুত হয়ে পড়েন এই স্বপ্নসারথী। তিনি জানান, এটাই তার জীবনের সেরা অর্জন। সিদ্দিকুর বলেন, ‘খেলাধুলায় সাফল্য-ব্যর্থতা আছে। থাকে নানা স্মৃতি। সাফল্য হৃদয়ে দাগকাটে মধুর হয়ে। আর ব্যর্থতায় রক্তক্ষরণ। কিন্তু এই সম্মান সারা জীবনের। কোনদিন ভোলার নয়। আমি সব সময় দেশের জন্য খেলি। ভাল করলে আমার চেয়ে বেশি সুনাম দেশের। আর আমার জন্য সেটা ইতিহাস। কিন্তু অলিম্পিকের মতো এত বড় মঞ্চে আমার হাতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাÑ এত বড় অর্জন-সম্মান আর কি হতে পারে। আমি অবিভূত রীতিমতো।’ এই অর্জন ইতিহাসে অম্লান হয়ে থাকবে বলেই বিশ্বাস সিদ্দিকুরের, ‘খেলতে গেলে সাফল্য ধরা দেয়। আবার অনেক সময় বিলিন হয়ে যায়। বাংলাদেশের পতাকা বাহক, এই অর্জন কোন দিন হারাবে না। ইতিহাস হয়ে বেঁচে থাকবে অনন্তকাল। আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ এই সম্মান দেখানোর জন্য।’ বাংলাদেশের গলফের একমাত্র বিজ্ঞাপনই সিদ্দিকুর। অথচ যাত্রাটা শুরু করেছিলেন গলফ কোর্সের ‘বল বয়’ হিসেবে! ২০১০ সালে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ‘এশিয়ান ট্যুর’ এর অন্তর্গত প্রতিযোগিতা ‘ব্রুনাই ওপেন’ জিতে প্রথমবারের মতো লাইমলাইটে উঠে আসেন তিনি। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। বাংলাদেশের প্রথম গলফার হিসেবে বিশ্বকাপে খেলার পর এবার ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ অলিম্পিকেও সরাসরি খেলার অবিস্মরণীয় কীর্তি গড়েছেন। দেশের প্রথম এ্যাথলেট হিসেবে সরাসরি অলিম্পিকে খেলার ইতিহাস গড়া এই গলফারকেই তাই পতাকাবাহক হিসেবে বেছে নেয় বাংলাদেশ অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশন। অবাক করা বিষয়, যখন গলফে খেলা শুরু করেন তখন অলিম্পিক কী তাই বুঝতেন না সিদ্দিকুর। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, আমি যখন খেলতে শুরু করি তখন অলিম্পিক সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। আর অলিম্পিকে খেলার কথা তো স্বপ্নেই ভাবেননি সিদ্দিকুর। এ প্রসঙ্গে তার ভাষ্য, আমি কখনই ভাবিনি অলিম্পিকে খেলব। মরিশাসে টুর্নামেন্টে ভাল করার পরই আমার ভেতরে আত্মবিশ্বাস এসেছে অলিম্পিকের কথা তখনই আমার মাথায় ঢোকে। এ জন্য কৃতিত্ব দিয়েছেন মালয়েশিয়া থেকে আসা ক্যাডিকে। বলেন, তিনিই আমাকে প্রথম জানালেন যে মরিশাসে ভাল করতে পারলেই ইতিহাস গড়তে পারবে। এরপর থেকেই আমি অনেক সতর্ক হই। এই যে এত সাফল্য, তা কিন্তু আচমকা আসেনি। কঠোর পরিশ্রম আর অধ্যাবসায়ের ফসল আজকের সিদ্দিকুর। তিনি ছিলেন দরিদ্র পরিবারের সন্তান। মাত্র ১০ বছর বয়সে কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে (কেজিসি) চাকরি শুরু করেছিলেন। বল বয় হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও তখন থেকেই গলফ খেলার দারুণ নেশা হয়ে যায় তার। সেখানে প্রতি সোমবার বল বয়দের গলফ খেলার সুযোগ সৃষ্টি করে দিত কর্তৃপক্ষ। আর সেই সুযোগটাকেই কাজে লাগাতেন সিদ্দিকুর। বল বয় হিসেবে থাকার সময় তার স্বপ্ন ছিল শুধু একজন খেলোয়াড় হওয়ার। এ প্রসঙ্গে সিদ্দিকুর বলেন, বালক হিসেবে আমার স্বপ্ন ছিল শুধুই একজন খেলোয়াড় হওয়া। কারণ বল বয়ের চেয়ে একজন খেলোয়াড় হওয়াটা অনেক ভাল। আমি যখন খেলা শুরু করি তখন ভাবলাম ভারতে প্রফেশনাল ট্যুরে চাকরি করতে পারলে দারুণ হবে- যা আমার জীবনকেই বদলে দিতে পারে। এরপর তো শুধুই ইতিহাস। প্রথম এশিয়ান ট্যুরজয়ী বাংলাদেশী গলফার হিসেবে রাতারাতি আন্তর্জাতিক পরিচিতি তৈরি করে ফেলেন। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের গলফ খেলাটিকেও বদলে ফেলেন তিনি। বাংলাদেশের গলফ মানেই যেন সিদ্দিকুর রহমান। তাকে ঘিরেই এবার অলিম্পিকে অধরা পদক জয়ের স্বপ্ন বুনছে লাল-সবুজের এই দেশ।
×