ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

শ্রাবণসন্ধ্যায় গানে গানে রবীন্দ্রনাথ স্মরণ

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৬ আগস্ট ২০১৬

শ্রাবণসন্ধ্যায় গানে গানে রবীন্দ্রনাথ স্মরণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলা পঞ্জিকার হিসেবে আজ শনিবার বাইশে শ্রাবণ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৭৫তম প্রয়াণ দিবস। মৌলবাদের আগ্রাসী থাবায় অস্থির সময়ে আবারও শান্তি ও মানবতার বাণী নিয়ে হাজির হলেন বিশ্বকবি। শুক্রবার একুশে শ্রাবণ তাঁর সুরের আশ্রয়ে উচ্চারিত হলো অশুভের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। রবীন্দ্র সৃষ্টির আলোয় বলা হলো মানবিক বিশ্বের কথা। ছুটির দিনের বিকেলে কবির প্রয়াণবার্ষিকী সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থা। শাহবাগের সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা এবং সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত অবধি গাওয়া হয় রবীন্দ্রনাথের গান। সম্মেলক কণ্ঠের পরিবেশনায় শুরু সঙ্গীতাসর। রবীন্দ্র প্রতিকৃতিতে সাজানো মঞ্চে আসেন সংস্থার একঝাঁক শিল্পী। সুরের ভেতরে ব্যক্ত হয় শান্তির প্রত্যাশা। মিলিত কণ্ঠে গেয়ে শোনায় সমুখে শান্তির পারাবার ভাসাও তরণী হে কর্ণধার ...। গান শেষে সংক্ষিপ্ত শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সাজেদ আকবর। বলেন, এমন অস্থির সময়ে কবিগুরুকে শ্রদ্ধা নিবেদনের আমাদের এ আয়োজন হবে কিনা তা নিয়ে কেউ কেউ সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। সেই সংশয় দূর করে বলতে চাই, সুস্থ সংস্কৃতি চর্চা আমরা চালিয়ে যাব। আর এমন আয়োজনে শ্রোতারাই আমাদের মূল শক্তি। সংক্ষিপ্ত কথন শেষে শুরু হয় একক কণ্ঠের পরিবেশনা। আঁখি বৈদ্য গেয়ে শোনানÑ তাঁর বিদায়বেলার মালাখানি দেব ...। আমার শ্রাবণ মেঘের খেয়া শীর্ষক সঙ্গীত পরিবেশন করেন সেলিনা পারভেজ। প্রতিবন্ধকতা ছাপিয়ে এগিয়ে যাওয়ার বার্তা আসে লিটন বৈদ্যর গানের সুরে। গেয়ে শোনান- জড়ায়ে আছে বাধা ছাড়ায়ে যেতে চাই ...। সুমাইয়া ইমাম পরিবেশিত গানের শিরোনাম ছিলÑ বরিষ ধারা মাঝে শান্তির বারি/শুষ্ক হৃদয় লয়ে আছে দাঁড়াইয়ে ঊর্ধ্বমুখে নরনারী। অভীক দেব গেয়ে শোনান ‘আর রেখো না আঁধারে’। অনিরুদ্ধ সেন পরিবেশন করেন ‘আর রেখো না আঁধারে’। বিকেলের আয়োজনটি শ্রোতার সমাগমে জমাট বাঁধে সন্ধ্যায়। সঙ্গীতানুরাগীদের মাঝে স্নিগ্ধতার আবেশ ছড়িয়ে এ পর্যায়ে তপন সরকার পরিবেশন করেন ‘ক্লান্তি আমায় ক্ষমা’, কুশল রায় ‘বাদল দিনের প্রথম কদম’, সাজ্জাদ হোসেন ‘তোমার অসীমে প্রাণমন’, আঞ্জুমান ফেরদৌসী কাকলী ‘আজ কিছুতেই যায় না মনের’, সুমাইয়া ফারাহ খান ‘শ্রাবণ তুমি বাতাসে’, সীমা সরকার ‘যা হারিয়ে যায়’ ও কনক খান ‘আজি ঝরঝর মুখর বাদর দিনে’। এছাড়াও সঙ্গীত পরিবেশন করেন সাগরিকা জামালী, সীমা সরকার, এনাক্ষী সাহা রায়, রাবেয়া আক্তার, সেলিনা হুদা, রাবেয়া আক্তার, রিফাত জামাল, সানজিদা রহমান প্রমুখ। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা-ভাবনা শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলন ॥ শুক্রবার সকাল থেকে রাজধানীর উত্তরা ক্লাবে শুরু হলো ‘রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা ভাবনা’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন। এতে বক্তারা বলেন, বিশ্ব¦ব্যাপী ধর্মীয় মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা যখন বিভাজনের বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে তখন সঙ্কট মোকাবেলায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষা-চিন্তা হতে পারে এক অপরিহার্য হাতিয়ার ও আলোকবর্তিকা। যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ-ভারত-জাপান-চীনের রবীন্দ্র গবেষক, রবীন্দ্রবিষয়ক শিক্ষার্থীদের নিয়ে উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ এবং রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রচর্চা কেন্দ্র। সম্মেলন উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। সম্মেলনে ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিক্ষা-ভাবনা’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন একুশে পদকজয়ী সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, জাপানের হিরোশিমা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাছাহিকো টাগাওয়া, চীনের পিকিং বিশ^বিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়ান স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক চেন শ্রিন। সভাপতিত্ব করেন উত্তরা বিশ^বিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ইয়াসমীন আরা লেখা। স্বাগত বক্তব্য দেন রবীন্দ্রভারতী বিশ^বিদ্যালয়ের রবীন্দ্রচর্চা কেন্দ্রের অধিকর্তা মুনমুন গঙ্গোপাধ্যায়। সম্মেলনের বিস্তারিত তুলে ধরেন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক এ এস এম আবু দায়েন। উদ্বোধনী বক্তব্যে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলি, আমাদের জীবনে রবীন্দ্রনাথের ভাবনা, ধারণা নানাভাবে জড়িয়ে আছে। জাতিসত্তাবোধে অনুপ্রাণিত হয়ে বাঙালী যেদিন মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, সেদিন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হয়ে উঠেছিলেন নিরন্তর প্রেরণার উৎস। তিনি আরও বলেন, পঁচাত্তরের পনেরো আগস্টের পর বাঙালী জাতিকে রবীন্দ্র-চর্চা থেকে অনেকদূরে সরিয়ে দেয়া হয়। সেই অপপ্রয়াসের কিছু ছাপ তো আমাদের তরুণ প্রজন্মের মানসে প্রভাব ফেলবেই। আমরাও রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা-ভাবনা থেকে অনেকটা দূরে সরে এসেছি। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা ভাবনা তাঁর সময়ের চেয়ে অগ্রসর ছিল। প্রকৃতি সঙ্গে ব্যক্তির, ভাবনার সঙ্গে কর্মের, জ্ঞানের সঙ্গে মনুষ্যত্ববোধের, স্থানিকতার সঙ্গে আন্তর্জাতিকতার, আহরণের সঙ্গে প্রকাশনের, আনন্দের সঙ্গে শিক্ষালাভের যে চিন্তা তিনি করেছিলেন তা আজও প্রাসঙ্গিক। অধ্যাপক ইয়াসমীন আরা লেখা বলেন, শিক্ষাবিদ ও গবেষকদের এই মিলনমেলায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্য ও শিক্ষা ভাবনার বহুমাত্রিক দিক উঠে আসবে, যা বর্তমান সামাজিক ব্যবস্থার অবক্ষয় রোধ ও টেকসই উন্নয়নে অবদান রাখবে। মুনমুন গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা-ভাবনার এমন অনেক দিক রয়েছে, যা চর্চার অপেক্ষায় রয়েছে। সেগুলো নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা প্রয়োজন। চেন শ্রিনর বলেন, ভারতবর্ষের তুলনায় চীনে রবীন্দ্রনাথ চর্চা নেহায়েত মন্দ নয়। দক্ষিণ এশীয় বিষয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সাহিত্যপ্রিয় তরুণদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ চর্চিত হচ্ছেন নানাভাবে। তিনি আরও বলেন, কাব্যচর্চায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক বিনিময়ের নানা বিষয়কে সমানভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন। বিশ্ব মানবতা, মানবিক মূল্যবোধকে তিনি শিক্ষা ভাবনায় ফুটিয়ে তুলেছেন। অধ্যাপক ড. মাছাহিকো টোগাওয়া আয়োজনের নানা দিক নিয়ে আলোকপাত করে বলেন, আমি যখন বাংলাদেশে আসতে চেয়েছিলাম, তখন অনেক জাপানী বন্ধু আমাকে বাধা দিয়েছিলেন। কিন্তু আমি কারও কথা শুনিনি। বাংলাদেশী বন্ধুদের টানে আমি চলে এলাম। ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে’ গাইতে গাইতে এ দেশে এসে দেখলাম, সবকিছু ভালই চলছে। আয়োজকরা জানান, সম্মেলনে রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা-ভাবনা বিষয়ে ১৪টি সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। উৎসবের প্রথম দিন অনুষ্ঠিত সেমিনারগুলো হলো ‘শিক্ষার্থীর মূল্যায়নে রবীন্দ্রনাথ’, ‘পাঠ্যক্রম এবং সহযোগী পাঠ্যক্রম : রবীন্দ্র শিক্ষা ভাবনা’, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষা দর্শনে ব্যক্তি স্বাধীনতার প্রাসঙ্গিকতা’, ‘শিক্ষাবিষয়ক লিখিত গ্রন্থাবলীর নিরিখে রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা ভাবনার স্বাতন্ত্র্য’ ও ‘রবীন্দ্র ভাবনায় বিশ্ববিদ্যালয়’। আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক এ এস এম আবু দায়েন জানান, সেমিনারগুলোয় রবীন্দ্র সাহিত্যে শিক্ষা ও সমাজ জীবনের বহুমাত্রিক প্রেক্ষাপটের পাশাপাশি নান্দনিকতার দিকটিও আলোচিত হবে। আজ শনিবার দ্বিতীয় দিনের অধিবেশনের প্রথম পর্বে অংশগ্রহণ করবেন সংসদ সদস্য সাহারা খাতুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ ও ইতিহাস বিভাগের সভাপতি মেসবাহ কামাল। আলিয়ঁসে ফড়িংবিষয়ক আলোকচিত্র প্রদর্শনী ॥ শুক্রবার থেকে আলিয়ঁস ফ্রঁসেস দো ঢাকায় শুরু হলো ‘বাংলাদেশের ফড়িং : ইনভেন্টিরি ১ম পর্ব’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনী । ফড়িংয়ের গুরুত্ব ও সংরক্ষণ সচেতনতা সমুন্নত রাখার জন্য বেসরকারী সংস্থা জীবন বিকাশ কার্যক্রম এই প্রদর্শনী ও বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সহযোগিতা করেছে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের বন অধিদফতর। পুরো আয়োজনে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব ন্যাচার (আইইউসিএন) বাংলাদেশ। বিকেলে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন আইইউসিএনের বাংলাদেশের প্রতিনিধি ইশতিয়াক উদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন বন অধিদফতরের কনজারভেটর অব ফরেস্ট অসিত রঞ্জন পাল। সম্মানিত অতিথি ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুল জব্বার হাওলাদার। উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইনভেন্টরি দলের দলনেতা মির্জা শামীম আহসান হাবিব। স্বাগত বক্তব্য দেন আলিয়ঁস ফ্রঁসেস দো ঢাকার পরিচালক ব্রুনো প্লাস। আয়োজকরা জানান, ফড়িং স্থলজ ও জলজ উভয় আবাসস্থলের সূচক হিসেবে কাজ করে এবং জলজ আবাস্থলের জৈবিক স্বাস্থ্য মূল্যায়ন করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তারা বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মূল্যায়ন করার জন্য মডেল অর্গানিজম হিসেবে বিবেচিত হয়। ১ম পর্বের এই ইনভেন্টরি ২০১৩ সালের নবেম্বর থেকে শুরু করে ২০১৬ সালের মে মাস পর্যন্ত সময়কালে বাংলাদেশের ৩০টি জেলায় সম্পন্ন হয়েছে। ৯টি পরিবারে ৬২টি প্রজাতির মোট ৩ লাখ ৯৭২টি ছবি এই গবেষণায় প্রাথমিক পর্যায়ে নথিভুক্ত করা হয়েছে।
×