ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জানা-অজানা

ক্যান্সার প্রতিষেধক আবিষ্কারের অন্তরালে...

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ৫ আগস্ট ২০১৬

ক্যান্সার প্রতিষেধক  আবিষ্কারের অন্তরালে...

ক্যান্সার দুরারোগ্য এক ব্যাধি। আজ অবধি ক্যান্সারের কোন সফল চিকিৎসা বের করতে পারেননি চিকিৎসকরা। কিন্তু রোগ হিসেবে ক্যান্সার আবিষ্কৃত হওয়ার পর থেকে আজ অবধি কি সত্যিই ক্যান্সারের কোন প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি! এই প্রশ্ন থেকেই যায়। আর এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই সামনে চলে আসে এমন কিছু তথ্য যা আমাদের আরও নতুন সত্যের কাছাকাছি নিয়ে যায়। বিশ্বে চিকিৎসা খাতে ক্যান্সার এক ব্যয়বহুল চিকিৎসার নাম। এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতিবছর বিশ্বে এক বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ লেনদেন হয় স্রেফ ক্যান্সারের চিকিৎসার কারণে। যতদিন যাচ্ছে ততই এই ব্যয় বাড়ছে। এখন পর্যন্ত অনেকেই ক্যান্সারের প্রতিষেধক আবিষ্কারের চেষ্টা চালিয়েছেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে না পারলেও প্রতিরোধে কি কি করা যেতে পারে তা আবিষ্কার করেছেন। কিন্তু এই আবিষ্কারকদের মধ্যে একটি নাম আমাদের কাছে প্রায় আজনা, আর সেই নামটি হলো ড. রেমন্ড রাইফ। ১৮৮৮ সালে রেমন্ড জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ব্যক্তি হিসেবে তিনি একাধারে অপটিকস, ইলেকট্রনিক্স, রেডিওকেমিস্ট্রি, বায়োক্যামেস্ট্রি, ব্যালাস্টিকস এবং এভিয়েশন খাতে কাজ করেছেন এবং প্রতিটি খাতেই নিজ স্বকীয়তা বজায় রেখেছেন। ১৯২২ সালের দিকে রেমন্ড ক্যান্সার নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। ১৯৩২ সাল নাগাদ তিনি ভিএক্স ভাইরাস নামক ক্যান্সার বিচ্ছিন্ন একটি মাইক্রোঅর্গানিজম চিহ্নিত করেন। প্রায় এক বছর তিনি এটা নিয়ে গবেষণা চালান এবং ওই ভাইরাসের স্বাভাবিক আয়তনের তুলনায় ৬০ হাজার গুণ বিশিষ্ট ভাইরাস আবিষ্কার করেন। তিনি ক্যান্সার আক্রান্ত সেলগুলোকে ধ্বংস করার জন্য আলোক রশ্মি প্রয়োগ করার চিন্তা করেন এবং এর ফলে সন্নিহিত টিস্যুগুলো ধ্বংসও হয় না। এই প্রক্রিয়াটিকে তিনি মর্টার অসকিলাটরি রেট নাম দিয়েছিলেন। ১৯৩৪ সালের কয়েক মাসের মধ্যে তিনি ১৬ জন ক্যান্সার আক্রান্তের ভেতর ১৪ জনকে সুস্থ করতে সমর্থ্য হন। এমনকি বাকি দুজনও পরবর্তী ৬ মাসের মধ্যে সুস্থ হন। ক্যান্সার নিরাময়ে শতভাগ সফল হওয়ার পরেও তাকে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। ১৯৩৪ সালে ড. মিলব্যাংক জনসন রাইফের ক্যান্সার থেরাপিকে মরণাত্মক বলে ঘোষণা করেন এবং সকল নথি স্রেফ গায়েব করে ফেলেন। শুধু তাই নয়, রাইফের পুরো ল্যাবরেটরি পুড়িয়ে দেয়া হয়। ড. নেমেস নামের অপর একজন অবশ্য রাইফের কাজের কিছু অংশ সংরক্ষণ করতে সমর্থ্য হয়েছিলেন। ১৯৭১ সালে গ্রোসমন্ট হাসপাতালে ভ্যালিয়াম এবং এ্যালকোহলের মিশ্রিত বিষক্রিয়ায় তাকে হত্যা করা হয়। রাইফ বেঁচে থাকতেই ১৯৮০ সালে ব্যারি লেনস রাইফের ক্যান্সারবিষয়ক কাজের ওপর একটি বই লিখেছিলেন। সেখানে লেখক দাবি করেছেন যে, রাইফ ক্যান্সার নিরাময়ে যে ডিভাইসটি তৈরি করেছিলেন তা দিয়ে ক্যান্সার নিরাময় করা যেত, কিন্তু আমেরিকার মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন সেটাকে স্বীকৃতি দেয়নি। আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটি লেনসের ওই দাবি উড়িয়ে দেন এবং একে একটি ষড়যন্ত্র বলে আখ্যা দিয়েছিল। তারা পাশাপাশি আরও বলেন, রাইফের কাজকে প্রচার করা মানে হলো ক্যান্সারের নিরাময় প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা। কিন্তু মজার বিষয় হলো, আজ অবধি আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটি রাইফের বানানো ডিভাইসটি নিয়ে কোন কথাই বলেনি।
×