ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভয়াবহ ভূমিকম্প থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন নেপালের এ কিশোরী সাঁতারু

সর্বকনিষ্ঠ ক্রীড়াবিদ গৌরিকা

প্রকাশিত: ০৬:২২, ৩ আগস্ট ২০১৬

সর্বকনিষ্ঠ ক্রীড়াবিদ গৌরিকা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বয়স মাত্র ১৩ বছর! কিন্তু যোগ্যতাবলে নেপালের অন্যতম সেরা সাঁতারু হিসেবেই এবার অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করবেন গৌরিকা সিং। নেপালের জাতীয় সাঁতারে ইতোমধ্যেই ৭টি রেকর্ড গড়ে বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছেন এ কিশোরী। এবার রিও ডি জেনিরো অলিম্পিকে তিনিই সর্বকনিষ্ঠ সাঁতারু। তাই বাড়তি একটা আকর্ষণ কেড়ে নিয়েছে এ কিশোরী। বয়স এত কম হলেও ছোট্ট জীবনে সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতির অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন তিনি। গত বছর এপ্রিলে নেপালে হওয়া ভয়ানক ভূমিকম্পে পুরো দেশ যখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল তখন গৌরিকা সেখানেই অবস্থান করছিলেন জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপসে অংশ নেয়ার জন্য। সেই ধ্বংস থেকে বেঁচে যাওয়া গৌরিকা এবার নেপালের হয়ে অংশ নেবেন রিও অলিম্পিকে। অংশ নেবেন মহিলাদের ১০০ মিটার ব্যাকস্ট্রোক ইভেন্টে। লন্ডনে বাবা-মার সঙ্গে বসবাস করেন গৌরিকা। যখন গৌরিকার বয়স মাত্র দুই বছর সে সময় তার ডাক্তার বাবা পরস সিং লন্ডনে রয়্যাল ফ্রি হাসপাতালে কাজ শুরু করেন এবং সে কারণে পুরো পরিবারের সঙ্গেই লন্ডনে পাড়ি জমান গৌরিকা। সাঁতারে হাতেখড়ি সেখানেই, অনুশীলনও করেছেন লন্ডনে। তবে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপসে অংশ নেয়ার জন্য নেপালে এসেছিলেন গত বছর এপ্রিলে। আর প্রতিযোগিতা চলার সময়ই ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়। প্রায় ৯ হাজার মানুষ নিহত এবং কয়েক হাজার ভবন ধসে পড়ে। তবে বেঁচে গিয়েছিলেন গৌরিকা। কাঠমা-ুতে তার সঙ্গে ছিলেন মা এবং ছোট ভাই সরেন সিং। এ বিষয়ে এ কিশোরী বলেন, ‘সেটা ছিল দারুণ আতঙ্কের বিষয়। আমরা সে সময় ভবনের ষষ্ঠ তলায় ছিলাম। সে কারণে নেমেও যেতে পারিনি। সে কারণে আমরা রুমের মাঝে রাখা একটা টেবিলের নিচে প্রায় ১০ মিনিট ধরে অবস্থান নিয়েছিলাম। দীর্ঘ ভূমিকম্প শেষে আমরা সিঁড়ি দিয়ে নেমে যাই।’ কাঠমা-ুই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। কিন্তু গৌরিকা এখন দাবি করছেন কয়েক হাজার মানুষের চেয়েও তিনি ভাগ্যবতী কারণ যে ভবনে ছিলেন সেটা ছিল একেবারেই নতুন এবং আধুনিক। এ বিষয়ে গৌরিকা বলেন, ‘সৌভাগ্যক্রমে সেটা ছিল একেবারেই নতুন একটি বিল্ডিং। সে কারণেই হয় তো আশপাশের অনেক ধসে পড়লেও সেটা টিকে ছিল।’ গৌরিকার বাবার এক বন্ধু ভূমিকম্প দুর্গতদের সাহায্যের জন্য তহবিল গঠন করেছিলেন। গৌরিকা ভূমিকম্পের সময় দারুণ ভয় পেলেও পরবর্তীতে জাতীয় সাঁতারে প্রতিযোগিতা করা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেন এবং জেতার পর যে পুরস্কারের অর্থ পাবেন সেটা ওই তহবিলে দেয়ারও মনস্থির করেন। প্রায় ২০০ ব্রিটিশ পাউন্ড তিনি প্রতিযোগিতা শেষে দান করেন। বয়সভিত্তিক সাঁতারে ব্রিটেনের সেরা ২০ সাঁতারুর মধ্যে স্থান অধিকার করেন গৌরিকা। বার্নেট কপথাল ক্লাবের হয়ে নানা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন। এই ক্লাবটি যুগে যুগে বিখ্যাত অনেক ব্রিটিশ সাঁতারুর জন্ম দিয়েছে। ব্রিটেনে দারুণ সফল হওয়ার পর মাত্র ১১ বছর বয়সেই গৌরিকা নেপালের জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপসে প্রথমবার অংশ নেন। তখন থেকে মোট ৭টি জাতীয় রেকর্ড গড়েছেন তিনি। প্রতিবারই নিজের রেকর্ড নিজেই ভেঙ্গে চলেছেন। এবার রিও অলিম্পিকে বাবা পরসের সঙ্গে এসেছেন অংশ নিতে। মহিলাদের ১০০ মিটার ব্যাকস্ট্রোকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন গৌরিকা। এ ইভেন্টে তার ব্যক্তিগত সেরা ১ মিনিট ৮.১২ সেকেন্ড। তবে এ ইভেন্টের সেরা প্রতিযোগী অস্ট্রেলিয়ার এমিলি সিবমের সেরা টাইমিং ৫৮.২৬ সেকেন্ড। গৌরিকার চেয়ে ১১ বছরের বড় তিনি। ৮ আগস্ট এ ইভেন্টের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে। গৌরিকার বাবা পরস এ বিষয়ে বলেন, ‘সে (গৌরিকা) বিশেষ একজন। এটা অবিশ্বাস্য বিষয় যে রিও অলিম্পিকের সর্বকনিষ্ঠ প্রতিযোগী সে। বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে এমন চাপের সঙ্গে সে কিভাবে মানিয়ে নিচ্ছে।’
×