ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার গেল কেরানীগঞ্জ

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ৩০ জুলাই ২০১৬

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার গেল কেরানীগঞ্জ

মশিউর রহমান খান ॥ দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে রাজধানীর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দীন রোডে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক বন্দীদের পার্শ্ববর্তী উপজেলা কেরানীগঞ্জে নবনির্মিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনুষ্ঠানিকভাবে স্থানান্তর করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী দুই দিনে প্রায় ৬ হাজার ৪শ’ বন্দীকে স্থানান্তর করার কথা থাকলেও নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় বন্দীদের একদিনেই স্থানান্তর করা হয়েছে বলে আইজি প্রিজন্স ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন জনকণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন। মোট ১৮টি ধাপে বন্দীদের স্থানান্তর করা হয়। ঢাকা ও আশপাশের জেলা থেকে আনা ২৩টি প্রিজন্স ভ্যানে করে গড়ে প্রায় ৩শ’ ৪০ জন করে বন্দীকে নেয়া হয়। নিরাপত্তা রক্ষা ও বন্দী নেয়ায় পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবিসহ সকল গোয়েন্দা সংস্থার পাশাপাশি প্রায় ৮শ’ কারাকর্মকর্তা ও কারারক্ষীসহ প্রায় সাড়ে ৩ হাজার সদস্য দায়িত্ব পালন করেন। প্রতিটি কনভয়ে একটি ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি, ৩ সদস্যের মেডিক্যাল টিমসহ এ্যাম্বুলেন্স, একটি মোটর মেকানিক্স গাড়ি, সামনে-পেছনে পুলিশের টহল গাড়ি, বিজিবির পেট্রোল গাড়ি বহরে রাখা হয়। এরপর নতুন কারাগারে প্রথম প্রবেশ করা কারাবন্দীদের ফুল দিয়ে বরণ করেন আইজি প্রিজন্স। শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে শুরু হয়ে রাত ১০টা পর্যন্ত ১৮ ধাপে এসব বন্দীকে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে নতুন কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। ব্রিটিশ আমল থেকে বাংলার ইতিহাসের অন্যতম সাক্ষী ও নিদর্শন এ কারাগারটি শনিবার থেকে বন্ধ রাখা হবে। তবে আজ থেকে আগামী কয়েক দিন কারা কর্তৃপক্ষের অফিসিয়াল কাগজপত্র, আসবাবপত্র, বন্দীসংক্রান্ত দলিলাদি স্থানান্তর করা হবে। কারা ইতিহাসে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি, এপিবিএন ও কারারক্ষীদের সহায়তায় এ বন্দী স্থনান্তরের কার্যক্রম শুরু করা হয়। পুরান ঢাকা থেকে বন্দীদের কেরানীগঞ্জের নতুন কারাগারে নেয়ার পর নতুন ও খোলামেলা স্থান পাওয়ায় বন্দীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা পরীলক্ষিত হয়। অপরদিকে বন্দী স্থানান্তর উপলক্ষে কারা অধিদফতর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন সাংবাদিকদের জানান, জঙ্গী, দুর্ধর্ষ আসামি, শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ যেসব বন্দীকে কারাগার থেকে আদালতে নেয়া ঝুঁকিপূর্ণ, তাদের কারাগারে রেখেই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আদালতের বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে প্রস্তুতি নিতে তাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন। সরেজমিন দেখা যায়, শুক্রবার ভোর ৪টা থেকেই র‌্যাব, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কাজ শুরু করেন। রাস্তায় শত শত পুলিশের পাশাপাশি নিরাপত্তা রক্ষায় বিজিবির ২৪ প্লাটুন সদস্য কাজ করছে। এসব সদস্য রাস্তার বিভিন্ন মোড়ে অবস্থান করছেন। আবার কিছু সদস্য পেট্রোল প্রহরায় নিযুক্ত থাকে। এ উপলক্ষে পুরান ঢাকার কারাগার এলাকায় প্রবেশের সকল রাস্তাই বন্ধ করে দেয়া হয়। এসব রাস্তায় কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ব্যারিকেড দিয়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। উক্ত এলাকায় বসবাসকারীদের চলাচলেও শিথিলতা জারি করা হয়। বিশেষ কোন কাজ না থাকলে স্থানীয় কাউকে অযথা ঘোরাফেরা করতে নিষেধ করা হয়। চানখারপুল এলাকা থেকে কারাগারে যাওয়ার রাস্তাটিতে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। কারাগারের মূল ফটকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যগণ ছাড়া কোন ব্যক্তিকে থাকতে দেয়া হয়নি। এমনকি কোন মিডিয়াকেও সংবাদ সংগ্রহের জন্য সেখানে প্রবেশে বাধা দেয়া হয়। জানা গেছে, বন্দী চলাচল নির্বিঘœ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে এ নির্দেশ দেয়া হয়। শুক্রবার সকালে চানখারপুল এলাকায় নিরাপত্তা কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে আসা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার শেখ মারুফ হাসান সাংবাদিকদের বলেন, যে কোন নাশকতা এড়াতে পুলিশের নেতৃত্বে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), ঢাকা জেলা পুলিশ, র‌্যাব ও মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বিভিন্ন পয়েন্টে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা টহল দিচ্ছে। অপরদিকে বেলা ১১টার দিকে কারা অধিদফতর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন বলেন, দুই দিনে বন্দী স্থানান্তরের টার্গেট থাকলেও আমরা আজকের মধ্যেই সকল বন্দীকে স্থানান্তর করার পরিকল্পনা রয়েছে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মূলত কারাগারে থাকা বন্দীদের মৌলিক অধিকার আছে। তবে কিছু বাধা-ধরা নিয়মের মধ্যে বন্দীদের থাকতে হয়। তাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতেই কাজ করছে কারা অধিদফতর। নতুন কারাগারে বন্দীদের বর্তমানের আবাসন সমস্যা সমধান হবে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বন্দীদের আবাসন স্থান নতুন কারাগারে অনেক উন্নত করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড অর্থাৎ জাতিসংঘের নিয়ম অনুযায়ী স্কেলে প্রতি একজন কারাবন্দীর জন্য জায়গা নির্ধারণ থাকে ৩৫ স্কয়ার ফুট। আর কেরানীগঞ্জ কারাগারে একজন বন্দীর জন্য ৯০ স্কয়ার ফুট জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই ৯০ স্কয়ার ফুটের মধ্যে থাকছে ঘুমানোর জায়গা, চলাফেরার স্থান, বারান্দা, টয়লেট। কারারক্ষীদের থাকার ব্যবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে কারারক্ষীদের জন্য থাকার জায়গা খুবই ছোট। এ নিয়ে কারারক্ষীরা কিছুটা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাদের থাকার জায়গাও উন্নত করা হবে, তবে সব সময় আমরা কারাবন্দীদের বিষয় নিয়েই ভাবি। তারা যাতে ভাল থাকে সেজন্যই আমরা কাজ করে থাকি। নতুন কারাগারে বন্দীদের সাক্ষাত কক্ষের বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে আইজি প্রিজন্স বলেন, নতুন কারাগারে থাকা আসামিদের সঙ্গে স্বজনদের সাক্ষাতের জন্য যে কক্ষটি তৈরি করা হয়েছে, তা অনেক ছোট। সেখানে একসঙ্গে মাত্র ৪০ বন্দী তাদের স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন।
×