ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিসের সেমিনার

দেশের সংবিধানের ওপর আঘাত হানছে জঙ্গীরা

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২৯ জুলাই ২০১৬

দেশের সংবিধানের ওপর আঘাত হানছে জঙ্গীরা

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ জঙ্গীরা দেশের সংবিধানের ওপর আঘাত হানছে। তবে জনগণ রুখে দাঁড়ালে জঙ্গীবাদ প্রতিরোধ করা সম্ভব। জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে তরুণ সমাজের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিস) আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। রাজধানীর ইস্কাটনে বিস মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশের সাম্প্রতিক জঙ্গী হামলায় করণীয়’ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়। দিনব্যাপী এ সেমিনারের উদ্বোধনী পর্বের সভাপতি ছিলেন বিস চেয়ারম্যান মুন্সী ফয়েজ আহমেদ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। সেমিনারের সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম। অনুষ্ঠানের সমাপনী পর্বে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেন, জঙ্গীরা দেশের সংবিধানের ওপর আঘাত হানছে। তারা বলছে, এখানে আল্লাহর আইন চলবে, দুনিয়ার কোন আইন চলবে না। তারা সাধারণ নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করছে। তারা মানবতার শত্রু। কৃষক, শ্রমিক, অধ্যাপক, ছাত্র, বুদ্ধিজীবী, বিদেশী সকলেই তাদের টার্গেট। তারা মানবতার বিরুদ্ধে নেমেছে। এ অবস্থায় সাধারণ জনগণকে মাঠে নামতে হবে। জনপ্রতিরোধ গড়ে তুললে জঙ্গীবাদ আর থাকবে না। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে জঙ্গীবাদের সুযোগ নিয়ে কেউ কেউ এটাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করতে চাইছে। তবে জঙ্গীবাদ ইস্যুকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করতে দেয়া হবে না বলেও তিনি জানান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, বাংলাদেশের সন্ত্রাসীরা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনের দিকনির্দেশনা পাচ্ছে কি-না তা খতিয়ে দেখছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তিনি বলেন, মৌলবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদের আঁতাত ভাঙতে সরকার বদ্ধপরিকর। জঙ্গীবাদের কবল থেকে তরুণদের রক্ষায় দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ নেয়ার কথাও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সেমিনারে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক পরিচালক ও শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন আহমেদ মাসুদ বলেন, সারাবিশ্বে সন্ত্রাসের নামে এখন একটি অস্থিরতা ও নৈরাজ্য তৈরি হয়েছে। এ সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য চলছে ইসলামের নামে। তবে ইসলাম ধর্ম এটা কখনই সমর্থন করে না। এমনকি মুসলিম দেশে অমুসলিমদের ভালভাবে বেঁচে থাকার অধিকারও ইসলামে রয়েছে। তবে এখন ধর্মের নামে যারা সন্ত্রাসে লিপ্ত হয়েছে, সেটা তারা মানছে না। তিনি বলেন, ইসলাম ধর্মের মূল আদর্শ ভুলে কিছু তরুণ ইসলামের নামে সন্ত্রাস করছে। তারা আত্মঘাতী পথ বেছে নিয়েছে। তারা মনে করছে, এভাবে আত্মঘাতী হলেই বেহেশতের হুর-পরী পাওয়া যাবে। তবে এ পথে বেহেশতে যাওয়া সম্ভব নয়, তাদের জন্য অপেক্ষা করছে জাহান্নাম। নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে কখনই বেহেশতে যাওয়া যায় না। পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক বলেন, জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ বিষয়ে গত দুই বছর আগে যে পরিস্থিতি ছিল, তার এখন পরিবর্তন হয়েছে। জঙ্গীবাদ এখন শুধু নিরাপত্তার প্রশ্ন নয়, সমাজে আরও বিভিন্ন নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করছে। এটা আমাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বহুমুখী পদক্ষেপ নেয়া জরুরী বলে তিনি মন্তব্য করেন। নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, জঙ্গীবাদে যারা ঝুঁকে পড়ছে, তাদের অধিকাংশই তরুণ। যেসব জঙ্গী ধরা পড়েছে তাদের অধিকাংশের বয়স ১৮ থেকে ২৬ বছর। তরুণরা যেন জঙ্গীবাদে জড়িয়ে না পড়ে সেজন্য তাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। তিনি আরও বলেন, জঙ্গী, জিহাদী ও মৌলবাদ- এ শব্দগুলো এখন প্রতিনিয়ত ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব শব্দ ব্যবহার পরিহার করা প্রয়োজন। তিনি যুক্তি দেন, সন্ত্রাসীদের জিহাদী বললে তারা আরও অনুপ্রাণিত হতে পারে। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ড. মেখলা সরকার বলেন, রাজধানীর গুলশানে হামলার পর দেশ একটি কঠিন সময় পার করছে। এখনই যুবসমাজের মনোজগৎ আমাদের ভালভাবে বুঝতে হবে। যুবসমাজের মনোভাব ভালভাবে অনুধাবন না করতে পারলে এ সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বলেন, রাজধানীর গুলশান হামলার আগে আমাদের সবার মধ্যে ধারণা ছিল দারিদ্র্যের কারণেই জঙ্গীবাদের উত্থান হয়। তবে এ ধারণার পরিবর্তন হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলেরাও জঙ্গীবাদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে সরকারকে বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে হবে। বিনোদন, খেলার মাঠ, শিক্ষার কারিকুলাম ইত্যাদিতে মনোযোগ দিতে হবে। এছাড়া পরিবারের অভিভাবকদেরও ভূমিকা নিতে হবে। ঢাকা মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, জঙ্গীবাদের উত্থান হলে দেশের ভেতর ও বাইরে ব্যবসা-বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে দেশের অভ্যন্তরে হোটেল, রেস্টুরেন্ট, পর্যটন ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এছাড়া জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে ন্যাশনাল কাউন্টার টেররিজম এজেন্সি, ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি সেন্টার ইত্যাদি প্রতিষ্ঠার জন্য সুপারিশ করেন তিনি। সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেনÑ বিস মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম আবদুর রহমান এনডিসি, আইসিএলডিএসের নির্বাহী পরিচালক মেজর জেনারেল (অব) আবদুর রশিদ, সাবেক রাষ্ট্রদূত মুহম্মদ জমির, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শাহাব এনাম খান, বাংলাদেশ পুলিশের এআইজি মুহম্মদ মনিরুজ্জামান ও সাবেক এয়ার কমোডর ইশফাক ইলাহী চৌধুরী।
×