ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ২৮ জুলাই ২০১৬

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ জাতীয় দলের সিনিয়র ক্রিকেটার তিনি। ১১ বছর ধরে ক্রিকেট খেলছেন। আর ৯ বছর ধরে খেলছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। জাতীয় দলের সেরা ওপেনারও তিনি। বর্তমানে টেস্ট (৩১১৮ রান), ওয়ানডে (৪৭১৩ রান) কিংবা টি২০ (১১৫৪ রান); সব ফরমেটেই বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রান তার। তিন ফরমেটেই আবার বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানও তার। টেস্টে ২০৬ রান, ওয়ানডেতে ১৫৪ রান ও টি২০তে দেশের একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান তিনি (অপরাজিত ১০৩ রান)। তিনি তামিম ইকবাল। অক্টোবরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজকে এ ওপেনার অনেক গুরুত্বের সঙ্গেই নিচ্ছেন। বাংলাদেশ একবছর পর আবার টেস্ট খেলবে। আবার প্রায় ৯ মাস পর ওয়ানডে খেলবে। সঙ্গে নিরাপত্তা শঙ্কা দূর করার বিষয়টি তো সবচেয়ে গুরুত্বই পাচ্ছে। তাই আসন্ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজকে খুবই গুরুত্ব দিচ্ছেন ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে লিস্ট এ ম্যাচ দিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু করা তামিম। বুধবার সাংবাদিকদের সঙ্গে সিরিজসহ ক্রিকেটের অন্যান্য বিষয় নিয়েও কথা বলেছেন ২০০৭ সাল থেকে ১৫৩ ওয়ানডে, ৪২ টেস্ট ও ৫২ টি২০ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা তামিম। সার সংক্ষেপ নিচে তুলে ধরা হলো। * আসন্ন সিরিজে প্রেরণা- তামিম ইকবাল ॥ আমরা জানি ইংল্যান্ড সিরিজ আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি সিরিজ। এখন যেহেতু আমাদের হাতে কয়েকদিন সময় আছে। আমরা এই ফিটনেস ক্যাম্পটা যে কারণে করছি, তা হলো যে এই ফিটনেস ক্যাম্পটা যদি পুরোটা করতে পারি; তাহলে এটা একটা বছর পুরোটায় কাজে দেবে। যে সময়ে খেলা শুরু হবে অক্টোবরে তখন কিন্তু এত গ্যাপ নাই, একটার পর একটা সিরিজ হবে। এই ফিটনেস ক্যাম্প আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সবচেয়ে বড় হলো যে ধরনের মনোভাব খেলোয়াড়দের সেটা আসলে খুবই পজিটিভ সাইড। নিজেরাই ইচ্ছা করে এক্সট্রা কাজ করছে, ফিটনেস সেশনের পরও। তাই এটা খুবই একটা পজিটিভ সাইড। * টানা খেলার ধকল পোষাতে ফিটনেস ক্যাম্প- তামিম ॥ দেখেন ফিটনেস যে জিনিসটা, সে কারণেই আমরা এখন ফিটনেস ক্যাম্প করছি। যখন একটা সিরিজের মাঝে থাকি তখন খুব একটা সুযোগ থাকে না ফিটনেস নিয়ে কাজ করার। এখন যেহেতু আমাদের সুযোগ আছে, বেশ কয়েকদিন সময় এ কারণেই আমরা ফিটনেস ক্যাম্পটা করছি। আমি নিশ্চিত আশা করছি কয়েকদিনের মধ্যেই কোচরা চলে আসবে। তখন আস্তে আস্তে আমরা স্কিলের কাজও শুরু করব। আমরা সবাই জানি লম্বা একটা মৌসুম সামনে আসছে, তার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ফিট থাকা, এটার জন্য আমরা এখন প্রস্তুতি নিচ্ছি। * লম্বা সময়ের গ্যাপে টেস্টে মানিয়ে নেয়া- তামিম ॥ এটা আসলে খুবই একটা সাধারণ প্রশ্ন হয়ে গেছে। উত্তরওটাও খুবই কমন একটা উত্তর হবে, যে দেড় বছর দুই বছর পর যে কোন খেলাতেই মানিয়ে নিতে সমস্যা হবেই। প্রায় দেড় বছর হয়েছে আমরা শেষ ম্যাচ খেলেছি। কঠিন হবে, তবে আমাদের বিসিএলের একটা টুর্নামেন্ট হবে সেপ্টেম্বরে। ওইখানে কয়েকটা ম্যাচ খেললে এখনকার চেয়ে ভাল অবস্থানে থাকব। * ঘরের মাঠে টেস্টে ভাল প্রতিদ্বন্দ্বিতা- তামিম ॥ আমার মনে হয় বাংলাদেশ যখনই দেশের মাটিতে খেলে তখনই বাংলাদেশের একটা সুযোগ থাকে। এখন সম্প্রতি গত দুই বছর ধরে যে ধরনের সংস্করণই হোক না কেন টি২০, টেস্ট বা ওয়ানডে। তবে টি২০ ও ওয়ানডেতে আমাদের রেকর্ডটা একটু ভাল। তাই বলে টেস্টে যে আমরা ভাল করতে পারব না এমন কিছুই না। এমন কোন কথা নেই। ইংল্যান্ড অবশ্যই কঠিন। তাই বলে ওদের হারানো সম্ভব না, ওদের বিপক্ষে ভাল খেলা সম্ভব না; এমন কিছু নেই। * দেশের বাইরে নিজেদের প্রমাণ করা- তামিম ॥ আমার কাছে এই জিনিসগুলো এত বেশি গুরুত্বপূর্ণ না। খেলা দেশের মাটিতে হোক, বিদেশের মাটিতে হোক, খেলা খেলাই, জিতা জিতাই। যেখানেই জিতেন না কেন। অবশ্যই বিদেশের মাটিতে গিয়ে যদি আমরা ভাল খেলি, ম্যাচ জিতি, তাহলে এটা অন্যরকম আত্মবিশ্বাস দেবে। খুব সম্ভবত আমাদের প্রথম এ্যাওয়ে হবে নিউজিল্যান্ডে। যেটা কঠিন, খুবই কঠিন সিরিজ হয়। এটা শুধু আমাদের জন্য না, যে কোন দলের জন্যই নিউজিল্যান্ডে খেলা একটু কঠিনই হবে। কারণ ওরা ওদের মাটিতে খুব শক্তিশালী। ওদের যে হারানো সম্ভব না এটাও ঠিক না। তবে যে জিনিসটা আমি বলছিলাম আমাদের এখানে থেকে জয়ের অভ্যাস গড়ে, দেশের মাটিতে সিরিজ জিতে, ওইখানে যদি ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারি তাহলে আমাদের জন্য খুব ভাল হবে। * গত বছরের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা- তামিম ॥ মানুষ যখন ভাল খেলতে থাকে তখন যতটা ম্যাচ খেলা সম্ভব হয় ততটা ব্যাটসম্যানের জন্য ভাল। আমি গত বছর একটা ভাল রিদমে ছিলাম। তখন যদি আরও কিছু ম্যাচ খেলতে পারতাম তাহলে আমার পারফর্মেন্স আরও ভাল হতে পারত। এটাত আমার হাতে না, এটা আসলে এফটিপি যেটা থাকে তা ফলো করতে হয়। আমার চেষ্টা থাকবে আমার যে মাইন্ডসেট ছিল, যে ব্যাটিং এপ্রোচ ছিল আমার, আমি সেইভাবেই এপ্রোচ ধরে রাখার চেষ্টা করব। বাকিটা ভাগ্যের ওপর নির্ভর করবে। * ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যক্তিগত পারফর্মেন্স- তামিম ॥ আমি শেষ যাদের সঙ্গে ভাল খেলেছি এবারও তাদের বিপক্ষে ভাল খেলব এমন কোন কিছু না। আমি যেটা সবসময়ই বলি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে রান করা সবসময়ই চ্যালেঞ্জ। কারণ ওদের বেশ কিছু কোয়ালিটি বোলার আছে। আমার বেস্ট ক্রিকেট খেলতে হবে ওদের বিপক্ষে রান করতে হলে আর আগে রান করেছি বলেই এখন রান করে ফেলব এমন কিছু না। হয় তো ইকুয়েলি আমাকে বেশি কষ্ট করতে হবে। যদি আমি আমার প্রসেস ঠিক রাখি, আমার মাইন্ডসেট ঠিক রাখি, তাহলে আমার সাকসেস হওয়ার সুযোগ থাকবে। * ক্যারিয়ার শুরুতে দল আর এখনকার দলের মধ্যে পার্থক্য- তামিম ॥ অবশ্যই, বাংলাদেশ দল অনেক উন্নতি করেছে। একটা সময় ছিল ফিটনেস নিয়েই বলি। আমাদের পুস করা লাগত, বলা লাগত এটা কর, ওটা কর। হয় তো করতে চাইত না। কিন্তু এখন আমার কাছে মনে হয় অনেক কিছুই বদলে গেছে, এখন আর আমাদের কিছু বলা লাগে না। এখন আমরা জানি যে কি করতে হবে, আমাদের যদি লম্বা সময় খেলতে হয় আমাদের ফিট থাকতে হবে। এটা আমরা নিজের থেকেই করছি, শুধু আমরা না যত সিনিয়র খেলোয়াড় আছে, যত জুনিয়র খেলোয়াড় আছে সবাই নিজের থেকেই করছে, আরও ভাল করার জন্য। এটা বড় একটা উন্নতি। আর আমাদের দলের একটা কালচার আছে, যেটা বাইরের দুনিয়া থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। আমরা সে কালচারটা সবসময় ধরে রাখতে চাই। ওইটা ধরে রাখা আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশি হিসেবে আমাদের অনেক বাজে অভ্যাস থাকতে পারে, খাদ্যাভ্যাসে বা অন্য অভ্যাসে। আমরা জাতীয় দলে ১৫ জন ২০ জন যে কালচার গড়ে তুলেছি, আমরা সে কালচার ধরে রাখতে অনেক ত্যাগ করি ক্রিকেটের জন্য। ভাল খেলার জন্য, দেশকে ম্যাচ জেতানোর জন্য অনেক ত্যাগ করি। এসব জিনিস অনেক বদলে গেছে বাংলাদেশ ক্রিকেটে। যারা আগে খেলেছেন হয় তো তারা পথ দেখিয়ে দিয়েছেন বলেই আমরা আস্তে আস্তে এই জিনিসগুলা বদলাতে পেরেছি। * মিরপুরেও অনার্স বোর্ড থাকা- তামিম ॥ উচিত, আমি মনে করি অবশ্যই উচিত। কারণ লর্ডস যেমন ইংল্যান্ডের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের জন্য শেরেবাংলা সমান গুরুত্বপূর্ণ। ছোট বাচ্চাদের স্বপ্ন থাকে ওরা শেরেবাংলায় খেলবে। আমার জন্য সব মাঠই গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমার দেশের নিজের মাটি একটু বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যদি একটা বোর্ড করা হয়, কেউ যদি বড় এচিভমেন্ট করে, ওইগুলা যদি লেখা হয়, সেটা যতদিন খেলব ততদিন হয় তো মূল্য বুঝবো না, যখন ক্রিকেট ছেড়ে দেব তখন বুঝবো। হয় তো তখন আমি আমার ছেলেকে দেখাতে পারব আমি এখানে কিছু একটা করেছিলাম। * ক্রিকেট মিউজিয়াম- তামিম ॥ অবশ্যই, সবকিছুই থাকা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সবকিছুর একটা সময় থাকে। এখন যে সুবিধা আছে এটা পাঁচ বছর আগে ছিল না। আমাদের ক্রিকেট আস্তে আস্তে উন্নতি হচ্ছে। বিসিবিও উপরের দিকে উঠছে। দেখি সবকিছু আস্তে আস্তে ঠিকই হচ্ছে। যখন সঠিক সময় হবে আমি নিশ্চিত বিসিবি সেটাও করবে। আমাদের সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। * ভাল বছরের পর ফাঁকা বছরে খেলোয়াড়দের মাইন্ডসেট- তামিম ॥ দেখেন একটা মানুষ যখন রিদমে থাকে, ক্রিকেট বলেন বা অন্য যে কোন ব্যবসায়। একটা রিদমে যখন থাকে তখন কিন্তু আমরা সবকিছু বুঝতে পারি এভাবে করলে এটা হবে। এভাবে করলে এটা হবে। কিন্তু ওই রিদমটা যখন ভেঙ্গে যায় তখন তা ধরা একটু কঠিন। যেটা আসলে বাংলাদেশের সঙ্গে গত দশ বছর ধরেই হচ্ছে। গত বছর ছাড়া আমরা ওইভাবে কখনই খেলতে পারি নাই। গত বছর আমরা অনেক ম্যাচ খেলেছি, আমাদের ফলাফলও জানায় আমরা অনেক ভাল খেলেছি। আমরা ওই সময়ে যদি ওই রিদমে থাকতে পারি তাহলে আমাদের জন্য অনেক ভাল। কিন্তু যতটুকু আমি জানি পরের চার পাঁচ বছরে প্রচুর ম্যাচ আছে বাংলাদেশের। ওই ম্যাচগুলো যদি ভাল করতে পারি হোম এবং এ্যাওয়েতে, তাহলে আমরা যে স্টেপে আছি তার চেয়ে এক স্টেপ আগাতে পারি, আমরা যারা সিনিয়র খেলোয়াড় আছি যারা ছয় সাত বছর আরও খেলবে। ওই ছয়-সাত বছরে যদি আমরা আরও একটা স্টেপ উপরে নিয়ে যেতে পারি তাহলে আমরা মনে করব আমরা অনেক সাফল্য পেয়েছি। * আপনার সঙ্গে যারা খেলেছে তারা অনেক বেশি ম্যাচ খেলছেন সেক্ষেত্রে নিজেকে দুর্ভাগা মনে হয় কি? তামিম ॥ অবশ্যই, একজন ক্রিকেটারের স্বপ্ন থাকে টেস্ট ম্যাচ খেলবে, তার সঙ্গে এটাও স্বপ্ন থাকে একশ টেস্ট ম্যাচ খেলবে তার দেশের জন্য। আমি যখন টেস্ট ম্যাচ খেলা শুরু করি, আমার সঙ্গে যে শুরু করেছে, দেখবেন তার আশি নব্বইটা টেস্ট ম্যাচ হয়ে গেছে। যেখানে আমার চল্লিশটা। এখানে একটু খারাপ লাগে। যদি আমি আরও টেস্ট খেলতাম তাহলে আমার রান আরও বেশি থাকত। অন্যরা আমার যারা সতীর্থ আছে তাদেরও অনেক সাফল্য থাকত। আমি সবসময় বলি এটা আমাদের হাতে না, কিন্তু এটা আমরা বদলাতে পারি আমাদের পারফর্মেন্স দিয়ে। আমরা যদি ভাল খেলি, আমরা যদি আরও ম্যাচ জিতি, আমরা যদি টেস্ট ম্যাচ ভাল খেলি তখন হয় তো আরও বড় বড় দল আমাদের সঙ্গে খেলতে আরও আগ্রহী হবে। আমি যতই বড় বড় কথা বলি না কেন, অথবা যে যতই যুক্তি দেখিয়ে দিক না কেন, আমার কাছে মনে হয় এটা সম্পূর্ণ খেলোয়াড়দের ওপর নির্ভর করে। আমরা যদি ভাল ফলাফল দেই বাংলাদেশকে টেস্টে, তাহলে আমরা বেশি টেস্ট ম্যাচ খেলতে পারব।
×