ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যমুনা তীরের মানুষ এখন বন্যাকে ভয় পায় না

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ২৭ জুলাই ২০১৬

যমুনা তীরের মানুষ এখন বন্যাকে ভয় পায় না

সমুদ্র হক, বন্যাকবলিত এলাকা ঘুরে এসে ॥ ঈষাণ কোণের কালো মেঘ দেখে যমুনা তীরের মানুষ এখন আর ভয় পায় না। যমুনার উত্তাল ঢেউকেও করে না গ্রাহ্য। এর মধ্যেই নৌকা নামায় স্রোতের মুখে। বৈঠা ধরে শক্ত হাতে। বিপরীত স্রোত আর ঘূর্ণিস্রোতে কিভাবে বৈঠার হাল ধরতে হয় তা তারা জানে। অস্তিত্ব রক্ষায় ঢেউয়ের প্রতিকূলে নৌকা বাইয়ে তীরে ওঠার লড়াই তাদের বর্ষা মৌসুমের সঙ্গী। নদী গর্জে ফুলে ফেপে ওঠার সঙ্গেই শুরু হয় ছোটাছুটি। গত তিন চার বছরে ব্রহ্মপুত্র যমুনা তীরের মানুষ বন্যা তেমন দেখেনি। তাই বলে ভুলেও যায়নি বন্যা হবে না। সারিয়াকান্দির কাজলারচরের রফিকুল বললেন, এবারের আষাঢ় মাসে কম বৃষ্টিপাত দেখে মনে করেছিলেন বন্যা হবে। হলোও তাই। কিভাবে বুঝলেন! এমন প্রশ্নে উত্তর দেন প্রবীণদের কাছে শুনেছেন। সারিয়াকান্দির যমুনা তীর চরগ্রামের মানুষ এখন আগের চেয়ে অনেক উন্নত জীবন যাপন করে। এলাকার সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নানের যুুগোপযোগী উন্নয়ন ভাবনায় চরের মধ্যেও এখন পাকা সড়ক হয়েছে। সোলার প্যানেলের বিদ্যুত পৌঁছেছে। কোথাও পল্লী বিদ্যুত সমিতিও বিদ্যুতায়ন করেছে। দীর্ঘ বাঁধ নির্মিত হয়েছে। শক্ত কাঠামো নির্মাণের কাজ চলছে। বগুড়া শহর থেকে পাকা সড়ক ধরে প্রায় ২৪ কিলোমিটার দূরে যমুনা তীরের সারিয়াকান্দি এলাকা। উপজেলা এলাকায় এখন পানি প্রবেশ করেনি। ১২ ইউনিয়নের মধ্যে বেশিরভাগই চর এলাকা। একেকটা চরের দূরত্ব অনেক। ভরা যমুনায় শ্যালো ইঞ্জিনের নৌকায় চেপে পৌঁছতেও সময় লাগে দূরত্ব ভেদে দুই থেকে তিন ঘণ্টা। কখনও আরও বেশি। এই সময়টায় যমুনা বাঙালী দুই নদী উত্তাল। উঁচু ঢেউ। এর মধ্যেই যমুনা পাড়ের ও চরগ্রামের মানুষ কিভাবে ছোট ও মাঝারি নৌকা বাইয়ে চলাচল করছে তা দেখে অবাক হতে হয়ে। সারিয়াকান্দি ঘাটের লুৎফর রহমান বললেন ‘কত ঢেউ পাড়ি দিনু। হামাগেরে কিছুই হয় না। আপনারা খালি চেচে উঠেন (চিৎকার দেন)।’ নৌকা যখন ঢেউয়ের সঙ্গে দুলে ওঠে তখন মনের সুখে গলা ফেটে গান ধরেন তিনি। যারা এই দৃশ্য দেখেননি তারা শুধু অবাকই নয় ভাবনায় আসবে উত্তাল ঢেউয়ে কি করে এরা নৌপথে চলাচল করে। এটাই তাদের জীবন। বণ্যা ঝড় ঝঞ্ঝা এভাবেই পাড়ি দিচ্ছে তারা। চরের মানুষ যমুনা তীরের মানুষ বলে আগে যাদের আন্ডার এস্টিমেট করা হতো তারা এখন অনেক স্মার্ট। বন্যাকেও তারা ভয় পায় না। এই সময়টায় যে বন্যা হয়েছে তা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পূর্ব অংশে। আগে যে ভাবে বন্যা ভয়াল রূপ নিয়ে পুরো এলাকা গ্রাস করে ভাসিয়ে দিত বর্তমানে তা আর করতে পারে না। হার্ড পয়েন্ট, রিভেটমেন্ট, শক্ত কাঠামোর বাঁধ তা নিয়ন্ত্রণ করেছে। গত বছরই ধনিরকান্দি থেকে কামালপুর পর্যন্ত আট কিলোমিটার দীর্ঘ শক্ত কাঠামোর বাঁধ নির্মিত হয়েছে। এই বাঁধ নির্মিত হয়েছে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে। এছাড়াও নদীর তীর সংরক্ষণ ও ভাঙ্গন প্রতিরোধে কর্নিবাড়ি থেকে রৌহদহ পর্যন্ত ৬ কিলোমিটারের শক্ত কাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩শ’ ২ কোটি টাকা। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ডকইয়ার্ড এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড এই কাজ বাস্তবায়ন করছে। বর্ষা মৌসুমের এই সময়টায় ভাঙ্গন ঠেকাতে যা করা দরকার তাই করা হচ্ছে। মূল কাজ শুকনো মৌসুমে শুরু হয়ে ২০১৮ সালের জুন মাসের মধ্যে শেষ হবে। এলাকার লোকজন এসব কাজ দেখে আশ্বস্ত হয়।
×