ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গুলশান ও কল্যাণপুরে নিহত জঙ্গীরা একই গ্রুপের

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২৭ জুলাই ২০১৬

গুলশান ও কল্যাণপুরে নিহত জঙ্গীরা একই গ্রুপের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গুলশানে সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে এবং কল্যাণপুরে যৌথবাহিনীর অভিযানে নিহত জঙ্গীরা একই গ্রুপের সদস্য ছিল। অভিযান দুটি পৃৃথক হলেও নিহত জঙ্গীরা একই গ্রুপের অধীনে প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে সবই করেছে। এ সংক্রান্ত যাবতীয় প্রমাণ মিলেছে। বিষয়টি আরও গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এই গ্রুপটির সঙ্গে আরও কারা কারা জড়িত সে বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, রাত তিনটার দিকে কল্যাণপুর এলাকায় ব্লক রেইড অভিযান চালাচ্ছিল পুলিশ। ব্লক রেইড চলাকালে কল্যাণপুরের ৫ নম্বর সড়কের ৫৩ নম্বর তাজ মঞ্জিল নামের ছয় তলা বাড়ির পাঁচ তলা থেকে পুলিশকে উদ্দেশ করে একটি হ্যান্ডগ্রেনেড নিক্ষেপ ও কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে। পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে পাল্টা গুলি চালায়। এ সময়ে এক যুবক পাশের টিনের চালায় লাফ দিয়ে পুলিশের উদ্দেশে হ্যান্ডগ্রেনেড নিক্ষেপ করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পুলিশের পাল্টা গুলিতে ওই জঙ্গী আহত হয়। আহত অবস্থায় গ্রেফতার হয় হাসান নামের ওই জঙ্গী। পুলিশ হাসানকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হাসানের দেয়া তথ্যের বরাত দিয়ে কমিশনার জানান, তাজ মঞ্জিলের পঞ্চম তলায় আরও জঙ্গী অবস্থান করছে। তাদের কাছে প্রচুর অস্ত্র, বোমা ও গ্রেনেড রয়েছে। এরপর অতিরিক্ত পুলিশ ও স্ট্রাইকিং ফোর্স পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে। জঙ্গীদের বিরুদ্ধে অপারেশন চালানোর জন্য পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটকে পাঠানো হয়। যাতে অভিযানে কোনভাবেই সাধারণ নাগরিক আক্রান্ত না হয়। সেখানে বিশেষায়িত ইউনিট সোয়াট ও বম্ব ডিস্পোজাল ইউনিট পাঠানো হয়। সোয়াট ও বম্ব ডিস্পোজাল ইউনিটের সদস্যরা ভবনগুলোর অবস্থান ও অভিযান পরিচালনার দিক নির্ণয়, জঙ্গীদের অবস্থান ও সামর্থ্য, স্থানীয় অধিবাসীদের নিরাপত্তার ঝুঁকি, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা ঝুঁকি ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে। সার্বিক দিক সমন্বয় করে সকালে অভিযান শুরু করা হয়। অভিযানকালে জঙ্গীরা অন্তত ১২টি গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটায়। জঙ্গীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালাতে থাকে। পুলিশও গুলি পাল্টা গুলি চালায়। শেষ পর্যন্ত নয় জঙ্গী নিহত হয়। আহত অবস্থায় গ্রেফতার হয় একজন। একজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। কমিশনার বলেন, প্রাথমিক তদন্তে যে তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে, তাতে গুলশানে সেনা অভিযানে নিহত জঙ্গীরা এবং কল্যাণপুরে যৌথবাহিনীর অভিযানে নিহত জঙ্গীরা একই গ্রুপের সদস্য ছিল। এ সংক্রান্ত যথেষ্ট প্রমাণও তাদের কাছে রয়েছে। একই গ্রুপের সদস্যরা গুলশানে হামলা করে। কল্যাণপুরে নিহতরাও আরও বড় ধরনের নাশকতা চালানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। গুলশানে জঙ্গীদের যেরকম ব্যাকপ্যাক পাওয়া গিয়েছিল, ঠিক একই রকমের ব্যাকপ্যাক পাওয়া গেছে কল্যাণপুরের নিহত জঙ্গীদের আস্তানা থেকেও। গুলশান হামলার চেয়েও বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনায় কল্যাণপুরে আস্তানা গেড়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ হামলার ধরন, হামলাকারীদের বয়স ও বেশভুষাসহ সব কিছুই মিলে যায়। সোমবার রাতে অভিযান শুরুর পূর্ণ প্রস্তুতির পর হ্যান্ডমাইকযোগে জঙ্গীদের আত্মসমর্পণ করার আহ্বান জানিয়েছিল যৌথবাহিনী। কিন্তু তাতে কোন প্রকার সাড়া দেয়নি জঙ্গীরা। মাইকে আত্মসমর্পণের ঘোষণা দেয়ার সময় জঙ্গীদের কথাবার্তায় তারা উচ্চ শিক্ষিত বলে মনে হয়েছে। এছাড়া চেহারা ও বেশভুষা দেখে মনে হয়েছে জঙ্গীরা যথেষ্ট বিত্তবান পরিবারের সন্তান ছিল। নিহতদের বয়স ২০ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে। তাদের পরনে ছিল কালো পাঞ্জাবি ও জিন্স প্যান্ট। একজন ব্যতীত সবার পায়ে ছিল কেড্স। তাছাড়া তাদের ওখানে দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭টি পরিচয়পত্র পাওয়া গেছে। সেগুলো আসল কিনা যাচাই করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগ চলছে। নিহতরা সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ না দিয়েই বাড়ি ভাড়া নেয়। আর ভাড়াটিয়াদের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য না নিয়েই বাড়ি ভাড়া দেয়ার অভিযোগে বাড়ির মালিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনারসহ সব উর্ধতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। প্রসঙ্গত, গত ১ জুলাই গুলশানের কূটনীতিকপাড়ার ৭৯ নম্বর সড়কের শেষপ্রান্তে গুলশান লেক লাগোয়া হলি আর্টিজান রেস্তরাঁ ও বেকারিতে জঙ্গীরা ভারি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সবাইকে জিম্মি করে ফেলে। জঙ্গীরা দেশী ও বিদেশীদের আলাদা করে ফেলে। এরপর ১৭ বিদেশীসহ ২০ জনকে হত্যা করে। এর আগে ২ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে জঙ্গীরা গ্রেনেড হামলা করে ও গুলি চালিয়ে হত্যা করে। পরে সেনাবাহিনীর কমান্ডোরা অভিযান চালায়। অভিযানে ৬ জঙ্গী নিহত হয়। নিহতদের মধ্যে একজন নিরবাস ইসলাম নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ছিল। রোহান ইবনে ইমতিয়াজ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ও মীর সামিহ মোবাশ্বের স্কলাস্টিকার ছাত্র ছিল।
×