ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

নিখোঁজদের সন্ধানে পরিবার

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ২৩ জুলাই ২০১৬

নিখোঁজদের সন্ধানে পরিবার

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৩ জনের নিখোঁজ হওয়ার তথ্য পেয়েছে পুলিশ। গত দেড় বছরের মধ্যে এসব পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের সন্ধান চাওয়া হয়েছে বলে, জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক রবিউল ইসলাম জানিয়েছেন। তিনি বলেন, নিখোঁজদের মধ্যে ঘোড়াঘাট উপজেলার ১০ জন, খানসামায় দুই জন ও চিরিরবন্দর উপজেলার একজন রয়েছে। এদের মধ্যে চিরিরবন্দর উপজেলায় তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের সাহাপাড়ার আনারুল হক (২২) তিন বছর আগে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় বলে তার পরিবার থেকে জানানো হয়েছে। অন্যান্য সকলের পরিবার সংশ্লিষ্ট থানায় জিডি করলেও আনারুলের বিষয়ে থানায় কোন জিডি করা হয়নি। আনারুলের স্বজনরা জানান, কোরানের হাফেজ হওয়ার পর সে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। গত বছর একবার বাড়ি ফিরে ৩ সপ্তাহের মতো থেকে এরপর আবার নিখোঁজ হয়। ঘোড়াঘাট উপজেলায় নিখোঁজ ১০ জন হলো- সাহেবগঞ্জ মাজারপাড়া গ্রামের সাইদুর রহমান (২২), কশিগাড়ী গ্রামের তরিকুল ইসলাম (১২), শ্যামপুর পূর্ব কলেজপাড়ার সুজন চন্দ্র (১৯), ঋষিঘাট গ্রামের সামিউল ইসলাম (২৭), পশ্চিম পালশা গ্রামের ইব্রাহিম (২০), নন্দনপুর গ্রামের আব্দুল হাদি (১৯), চেচুড়া গ্রামের আমজাদ হোসেন (২৭), কলাবাড়ী গ্রামের সারওয়ার হোসেন, পালোগাড়ী গ্রামের আবুল কাশেম (২৮) ও কশিগাড়ী গ্রামের আখতারুল ইসলাম (২৮)। তাদের সন্ধান চেয়ে ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবরের মধ্যে পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় তিনটি জিডি করা হয় বলে পুলিশের একটি সূত্র জানায়। খানসামা উপজেলায় নিখোঁজ দু’জনের মধ্যে রয়েছে, গোয়ালডিহি গ্রামের সাদ্দাম হোসেন (২১) ও গোবিন্দপুর হলদিপাড়ার আশরাফুল আলম (২৪)। তাদের সন্ধান চেয়ে চলতি বছর ১১ ও ১৮ জুলাই থানায় ২টি জিডি করা হয়। পুলিশ সুপার রুহুল আমিন জনকণ্ঠকে জানান, নিখোঁজ ১৩ জনের তথ্য পুলিশ সদরদফতরে পাঠানো হয়েছে। কোন ধরনের জঙ্গী বা নাশকতামূলক কর্মকা-ের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি। বরিশাল স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল থেকে জানান, ঢাকা থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের কমলাপুর গ্রামের টগবগে যুবক রুবেল ঘরামির দীর্ঘ ৫ বছরেও সন্ধান মেলেনি। এ ঘটনায় নিখোঁজের পরিবার থেকে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেও কোন খোঁজ মেলেনি। সম্প্রতি গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গী হামলার পর নিখোঁজ রুবেলের পরিবারের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। সূত্রমতে, গৌরনদীর খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন কৃষকলীগের সভাপতি কেরামত আলীর নাতি ও কমলাপুর গ্রামের মোতালেব ঘরামির ২ পুত্র, ১ কন্যার মধ্যে নিখোঁজ রুবেল সবার বড়। সে ঢাকার সূত্রাপুর থানার পোস্তখোলা এলাকায় বসবাস করে আসছিল। রুবেলের পিতা জানান, গত ৫ বছর পূর্বে ঢাকা থেকে তার পুত্র রুবেল রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়েরি করা সত্ত্বেও পুলিশ কোন সন্ধান দিতে পারেনি। অপরদিকে গত বছরের ২২ ডিসেম্বর রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ যুবক সুব্রত কর্মকার শুভ (২৪) কোলকাতায় আছেন বলে তার পরিবার নিশ্চিত করেছেন। বানারীপাড়া পৌর শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা স্বর্ণ ব্যবসায়ী বাবুল কর্মকার তার পুত্র সুব্রতর নিখোঁজের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন। নওগাঁ নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ থেকে জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের এক শিক্ষার্থীসহ নওগাঁর রানীনগরের ৩ যুবক নিখোঁজ রয়েছে। এ ঘটনায় রানীনগর থানায় পৃথক পৃথক সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, উপজেলার দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামের আলতাব হোসেনের ছেলে আহসান হাবিব ওরফে শোভন ওরফে শুভ ২০০৯ সালে নওগাঁ ডিগ্রী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী বিভাগে ভর্তি হন। চলতি বছরের ১৭মে থেকে পরিবারের সঙ্গে তার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এ ঘটনায় শোভনের বাবা গত ৭ জুলাই রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এর প্রেক্ষিতে বোয়ালিয়া থানা পুলিশ শোভনের সার্বিক তথ্য চেয়ে রানীনগর থানা পুলিশকে অবগত করে। অপর দিকে উপজেলার ধনপাড়া গ্রামের আব্দুর রহিম বক্সের ছেলে সুলতান ৬ বছর আগে দুবাই যায়। এর পর ৩ বছরের মাথায় ৩ মাসের ছুটিতে এসে ছুটি শেষে আবারও দুবাই চলে যায়। তার পর থেকে সুলতানের সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়াও চকাধীন গ্রামের মৃত আব্দুল জব্বারের ছেলে ইসলাম হোসেন (২৬) গত ১২ জুলাই দোকানের মালামাল ক্রয় করার জন্য নওগাঁ যাবার কথা বলে দোকান থেকে বের হয়। এর পর থেকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ। নিখোঁজ ইসলাম অপহরণের শিকার হতে পারেন, এমন আশঙ্কার কথা পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। তবে ঘটনার ১০ দিন অতিবাহিত হলেও এখনও পরিবার কিম্বা পুলিশ কোন সন্ধান করতে পারেনি নিখোঁজ ইসলামের । রূপগঞ্জ নিজস্ব সংবাদদাতা, রূপগঞ্জ থেকে জানান, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় পুলিশের তালিকায় নিখোঁজ রয়েছে ৩ যুবক। এখনও পুলিশ বা পরিবারের সদস্যরা নিখোঁজদের সন্ধান করতে পারেনি। নিখোঁজরা হলেন, টাঙ্গাইল জেলার নগরপুর থানার তুলিয়া এলাকার শের আলীর ছেলে হোসেন আলী। তিনি রূপগঞ্জ উপজেলার পিতলগঞ্জ এলাকার মামা বাচ্চু মিয়ার বাড়িতে বসবাস করতেন। কেন্দুয়াপাড়া এলাকার দ্বীন ইসলামের ছেলে আশ্রাফুল ইসলাম ও গুতিয়াবো এলাকার আলী হোসেনের ছেলে সজীব মিয়া (১৯)। কেন্দুয়াপাড়া এলাকার নিখোঁজ আশ্রাফুল ইসলামের মা সালেহা বেগম জানান, ৯ মাস আগে আশ্রাফুল ইসলাম বাড়ি থেকে বের হয়ে নিরুদ্দেশ রয়েছে। পারিবারিক বিষয়াদি নিয়ে ঝগড়াকে কেন্দ্র করে সে কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফেরেনি। মা সালেহা বেগম আরও জানান, ছেলে আশ্রাফুল ইসলাম দুবাই থেকে দেশে ফিরে ইটভাঁটির শ্রমিক হিসেবে কাজ করত। নিখোঁজের পর এ বছরের ১৭ জানুয়ারি আশ্রাফুল ইসলামের বাবা দ্বীন ইসলাম বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। এছাড়া বাবা-মা আইনের সহায়তা চেয়ে থানা ও র‌্যাবের-১১ তে একাধিক অভিযোগও করেছেন। অপর নিখোঁজ হোসেন আলীর ভাই শাহ আলী জানান, তার ভাই হোসেন আলী পিতলগঞ্জ এলাকায় মামা বাচ্চু মিয়ার বাড়িতে বসবাস করত। এছাড়া হোসেন আলী পিকআপ চালক। গত প্রায় এক বছর আগে মুড়াপাড়া বাজার এলাকায় পিকআপ গ্যারেজ করতে গিয়ে নিখোঁজ হন। বিভিন্ন স্থানে ভাইকে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে ২০১৫ সালের ১৯ আগস্ট রূপগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। এখনও ভাই হোসেন আলীর অপেক্ষায় রয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। রূপগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক কফিল উদ্দিন জানান, গুতিয়াবো এলাকার আলী হোসেন তার ছেলে সজীব নিখোঁজ মর্মে রূপগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। যশোর স্টাফ রিপোর্টার, যশোর থেকে জানান, র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) সারাদেশে নিখোঁজ যে ২৬১ জনের তালিকা প্রকাশ করেছে এর মধ্যে যশোরের ১৫ জনের নাম রয়েছে। এই ১৫ জনের মধ্যে ১৪ জনেরই বাড়ি মনিরামপুর উপজেলায়। তারা দালালের খপ্পরে পড়ে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে রওনা দিয়ে নিখোঁজ হয়েছে বলে এলাকাবাসী, স্বজন ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে অপরজন যশোর সদরের রাহাত বিন আব্দুল্লাহর জঙ্গী সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে বলে পুলিশের ধারণা। র‌্যাবের তালিকায় যশোরে যাদের নাম রয়েছে তারা হলেন, মনিরামপুর উপজেলার মশ্মিমনগর গ্রামের আমান উল্লাহ, কামরুল জামান, কামাল হোসেন, চাকলা গ্রামের সারাত আলী, হাসানুর রহমান, মলিকপুর গ্রামের ইকবাল হোসেন, খালিয়া গ্রামের পীরবকস, তপন, শাহ আলম, তহিদুল ইসলাম, কিসমত চাকলা গ্রামের হাসান আলী, ফারুক হোসেন, সুমন হোসেন, শৈলগ্রামের মাসুদুর রহমন ও যশোর সদর উপজেলার শেখহাটি বাবলাতলা এলাকার শেখ আবদুল্লাহ বিন আকবরের ছেলে রাহাত বিন আব্দুল্লাহ। এরমধ্যে নিখোঁজ ১৪ জনই দালালের মাধ্যমে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ায় উদ্দেশে রওনা দেন। তারা পরিবারের অনুমতি নিয়ে ও স্বজনদের জানিয়ে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে রওনা দেয়। মশ্মিমনগর গ্রাম থেকে নিখোঁজ কামাল হোসেন। তার পিতা মহাতাপ সরদার বলেন, দালাল আমার ছেলেকে মালয়েশিয়ায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু আমার ছেলের কোন খোঁজ নেই। আমার ছেলের সন্ধান চাই।
×