ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মন্ত্রীর নামেও সাইনবোর্ড

চমেকের ৮ একর জমি অবৈধ দখলে

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ২২ জুলাই ২০১৬

চমেকের ৮ একর জমি অবৈধ দখলে

আহমেদ হুমায়ুন, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (চমেক) প্রায় ৮ একর জায়গা এখন বেদখলে। এসব জায়গা প্রভাবশালী ২২টি পরিবার দখলে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করছে। গড়ে তুলছে বহু অবৈধ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। মেডিক্যাল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে দখলদাররা অবৈধভাবে এসব জায়গা নিজেদের আয়ত্তে রাখলেও কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনি। এক মন্ত্রীর নামেও দখলের সাইনবোর্ড টাঙানো আছে। ১৯৬০ সালে নগরীর কেন্দ্রস্থলে ৮৩ একর জায়গার ওপর বর্তমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়। কিন্তু ওই পরিমাণ জায়গা ব্যবহার না হওয়ায় ধীরে ধীরে বেশ কিছু অসাধু লোক মেডিক্যালের পশ্চিম ও পূর্বপাশের পাহাড় ঘেঁষা বেশকিছু জায়গা দখলে নেয়। কয়েকজন জায়গা দখলে নিয়ে সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণ করেছে। হাসপাতালের জমি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তাদের কোন পৃথক ভূমি শাখা থাকায় বেহাত হওয়া জমিগুলো উদ্ধারে ইতোপূর্বে কর্তৃপক্ষের কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায়নি। তবে চলতি মাসে মেডিক্যাল কলেজ ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হওয়ার পর বেদখল জায়গার বিষয়ে সোচ্চার হয় কর্তৃপক্ষ। জানা গেছে, গত ১ জুলাই স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পর হাসপাতাল ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। ১৫ জুলাই গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জায়গা নির্ধারণে হাসপাতাল এরিয়া ঘুরে দেখেন। এ সময় তিনি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ক্যাম্পাসের পাহাড়ি জমিতে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে বলে ঘোষণা দেন। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনি স্থাপত্য অধিদফতরকে নির্দেশনা দেন। ফলে বিশাল জমিকে পরিকল্পিতভাবে ব্যবহার করে চট্টগ্রামে একটি আধুনিক ‘চিকিৎসা পল্লী’ স্থাপনের জন্য মাস্টার প্ল্যান তৈরির কাজ শুরু করেছে স্থাপত্য অধিদফতর। এ কাজ করতে দীর্ঘদিন ধরে বেহাত হওয়া ৮ থেকে ১০ একর জমি উদ্ধারের বিষয়টি কর্তৃপক্ষের সামনে আসে। এরপরই কর্তৃপক্ষ বেদখল জায়গা উদ্ধারে উঠেপড়ে লেগেছে। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, স্থানীয় সংসদ সদস্য জিয়াউদ্দিন বাবলু ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেডিক্যালের পশ্চিম ও পূর্বপাশের সীমানা ঘেঁষা এসব জায়গা ভোলা সওদাগর, সফিউল্ল্যাহ, রূপম চক্রবর্তীসহ বাদশা শিল্পগ্রুপ ও কানন ধারা আবাসিক এলাকার প্রায় ২২টি পরিবার দখলে নিয়েছে। তারা সেখানে পাহাড় কেটে বাড়িঘর নির্মাণ করছে। দখল করা জায়গায় বেশ কয়েকটি দোকানপাটও খোলা হয়েছে। কানন ধারা আবাসিক এলাকার সংলগ্ন একটি জায়দা দখলে নিয়ে সেখানে বর্তমান সরকারের এক মন্ত্রীর নামে সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে। এটি আদৌ তিনি দিয়েছেন কিনা, সে ব্যাপারে কেউ নিশ্চিত হয়ে কিছু জানাতে পারেননি। তবে এ ব্যাপারে ওই মন্ত্রীর এপিএসের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন বলেন, হাসপাতালের প্রায় ৮ একর জায়গা বেশকিছু ব্যক্তি দখল করে নিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তাদের দখলকৃত ওই জায়গা ছেড়ে দিতে বলার পরও কেউ ছেড়ে দিচ্ছেন না। এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে আমরা জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি। এ ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
×