ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আশরাফুল আলম

সন্তান কেন নষ্ট হবে?

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ২১ জুলাই ২০১৬

সন্তান কেন নষ্ট হবে?

প্রতিটি শিশুর মধ্যে থাকে অমিত সম্ভাবনা। কিন্তু সঠিক পরিচর্যার অভাবে শিশুর ভবিষ্যত নষ্ট হয়ে যায়। একটি ফুলকে ফোটানোর জন্য সাধনা করতে হয়। শিশুর ক্ষেত্রে একই কথা প্রযোজ্য। শিশুকে পরিচর্যা করবে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র। শিশুটি যেখানে বেড়ে ওঠে, সেটিই তার প্রাথমিক শিক্ষালয়। বাবা-মা, ভাই-বোনদের কাছেই জন্মের পর বেড়ে ওঠে। তাই প্রধান দায়িত্ব তাদের। তারপর নিকটস্থ পরিবেশ এবং বিদ্যালয়ের প্রভাব অনস্বীকার্য। রাষ্ট্র শুধু আইনের বাঁধন দিয়ে বেঁধে রাখে। পরোক্ষভাবে কাজ করে। পিতা-মাতা হবে শিশুর একজন বিশ্বস্ত বন্ধু। যে শিশু পিতা-মাতাকে বন্ধু হিসেবে জানে তারা বাবা-মায়ের কাছে সব কথা শেয়ার করে, ফলে আবেগপ্রবণ হয়ে যে কোন ভুল সিদ্ধান্ত নেয়া থেকে রক্ষা পায়। শিশুকে আদর যতœ করার মধ্যেও একটি সীমাবদ্ধতা থাকবে যেন অতিরিক্ত আদরের কারণে অন্যায় প্রশ্রয় না দেয়া হয়। শিশুকে শাসন করা মানে মার ধর করা নয়, বরং ভাল-মন্দ বুঝিয়ে সঠিক শিক্ষাদানের মাধ্যমে তাদের পরিচালিত করতে হবে। পড়ালেখায় অতিরিক্ত চাপ বা অতিরিক্ত শাসন ছেলেমেয়েদের ক্ষতি করে। এ ধরনের শিশুরা বাবা-মায়ের নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে বড় ধরনের খারাপ কাজে লিপ্ত হয়। শিশুরা কেন নেশা করে, চুরি করে, জঙ্গী হয়। এর কারণ অনুসন্ধান করলে দেখা যায়, আসলে শিশু নিজে নিজে এসব হয় না, তাদের পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র বানাতে বাধ্য করে। যারা অভাবী, দুঃখ কষ্টের মধ্যে বেড়ে ওঠে বা পারিবারিক কলহের কারণেও শিশু নষ্ট হয়ে যায়। সংগ্রাম বা প্রতিযোগিতার মধ্যে নিজেকে যখন টিকিয়ে রাখতে পারে না, তখন তাদের মধ্যে হতাশা দেখা দেয়। এই হতাশা বা উচ্চ আশা বা স্বপ্ন শিশুদের ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়। সবচেয়ে বড় কথা ছোটবেলা থেকেই ছেলেমেয়েদের প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে। শিক্ষা মানে এমএ পাস করা ডিগ্রী অর্জন নয়। শিক্ষার সংজ্ঞা আরও ব্যাপক ও বিস্তৃত। অভিভাবকগণ মনে করেন গৃহশিক্ষকদের হাতে বা বিদ্যালয়ে তুলে দিয়েই তিনি বেঁচে গেলেন তা নয় বরং আপনি দেখুন আপনার সন্তানটি স্কুলে যাওয়ার নাম করে ঠিকমতো বিদ্যালয়ে যাচ্ছে কিনা? কোথায় সময় কাটায়, কীভাবে কার সঙ্গে মেশে। তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করুন। ফলোআপ করুন। লিল্লাহ বোর্ডিং বা মাদ্রাসার অনেক ছাত্র অনেক সময় উগ্র মৌলবাদে আক্রান্ত হয়। তাদের অর্থের লোভ এবং ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে মগজ ধোলাই করা হয়। ফলে জঙ্গীবাদ বা যে কোন বড় খারাপ দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে নিজেদের ধ্বংস করে দিতে পারে। কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলেমেয়েরা খুব ইমোশনাল হয়। তাদের মাথায় যে ভূত চাপে সেটা করেই ছাড়ে। তাই মাথায় তাদের কোন্ খেলা খেলে তা আগে থেকে খোঁজ নিতে হবে। খুঁজে বের করতে পারলে যথাযথ চিকিৎসা দেয়া যাবে। দেখা যায় পরিবেশের কারণেই সন্তান নষ্ট হয়ে যায়। অনেক পিতা-মাতা শিক্ষিত হলেও তারা বোঝেন না, সন্তানকে কীভাবে মানুষ করতে হয়। সন্তানকে মানুষ করাও এক ধরনের কৌশল। এ কৌশল রপ্ত করতে হবে। রামপুরা, ঢাকা থেকে
×