ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

৩১ জুলাইয়ের মধ্যে জমা দিতে হবে

রাজনৈতিক দলের হিসাব দাখিলের তাগিদ নির্বাচন কমিশনের

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২০ জুলাই ২০১৬

রাজনৈতিক দলের হিসাব দাখিলের তাগিদ নির্বাচন কমিশনের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যেই নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব দাখিলের জন্য তাগাদা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে আয়-ব্যায়ের হিসাব দাখিল করতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ইসির নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হতে বাকি আছে আর মাত্র ১৩ দিন। তবে জানা গেছে, নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলের কাছে হিসাব জমা দেয়ার জন্য চিঠি পাঠানো হলেও এখন পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক দল তাদের আয়-ব্যয়ের হিসাব এখনও জমা দেয়নি। ইসি সূত্রে জানা গেছে, জামায়াত ছাড়া নিবন্ধত ৪০টি রাজনৈতিক দলের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে আদালতের আদেশে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষিত হওয়ার কারণে এ দলটির কোন কর্যক্রম ইসির পক্ষ থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে না। এর কারণে বিগত কোন নির্বাচনে জামায়াত দলগতভাবে নির্বাচনের অংশ নেয়ার সুযোগ পায়নি। তবে আদালতের আদেশে নিবন্ধিত অবৈধ ঘোষণা করা হলেও ইসির নিবন্ধনের তালিকা থেকে জামায়াতের নাম এখনও বাদ দেয়া হয়নি। ইসির ওয়েবসাইটে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হিসেবে এখনও জামায়াতের নামের পাশাপাশি দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেলের নাম রয়েছে। দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে রফিকুল ইসলাম খানের নাম রয়েছে। এছাড়া দলীয় প্রতীক দাড়ি-পাল্লার পাশাপাশি দলের কেন্দ্রীয় কর্যালয়ের ঠিকানা, ফোন ফ্যাক্স নম্বরও রয়েছে। তবে নিচের মন্তব্য কলামে বলা হয়েছে মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক রিট পিটিশন নং ৬৩০/২০০৯ এর ওপর ১ আগস্ট ২০১৩ তারিখের প্রদত্ত রায়ে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর নাম অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে আদালতের ওই নিষেধাজ্ঞার কারণে গত দশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত কোন নির্বাচন দলীয়ভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়নি জমায়াত। একই কারণে দলের আয়-ব্যয়ের হিসাব বিবরণীসহ কোন বিষয়ে কমিশন থেকে জমায়াতের নামে কোন চিঠি ইস্যু করা হয় না। জামায়াত ছাড়া ৪০টি নিবন্ধিত দলের সাধারণ সম্পাদক/মহাসচিব বরাবর চিঠি দেয়া হয়েছে। আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যেই এসব রাজনৈতিক দলের হিসাব জমা দিতে হবে। ইসির সহকারী সচিব রওশন আরা স্বাক্ষরিত রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো ইসির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বিধিমালা ২০০৮-এর বিধি ৯-এর ‘খ’ অনুসারে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের বাৎসরিক আয়-ব্যয়ের অডিট রিপোর্ট জমা দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। প্রতিবছর ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে আগের বছরের সংশ্লিষ্ট দলের আর্থিক লেনদেন একটি রেজিস্টার্ড চার্টার্ড এ্যাকাউন্টিং ফার্ম দ্বারা অডিট সম্পন্ন করে কমিশনে দাখিল করতে হবে। চিঠিতে রাজনৈতিক দলের আয় ব্যয়ের হিসাবের খাত উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে। আয়ের খাতের মধ্যে রয়েছে কর্মী ও সদস্যদের চাঁদা বাবদ আয়, কার্য নির্বাহিী কমিটি, উপদেষ্টা পরিষদ এবং অন্যান্য চাঁদা থেকে আয়, বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থার অনুদানের পরিমাণ, বাড়িভাড়া ও অন্যান্য সম্পত্তি হতে প্রাপ্ত অর্থ, নির্বাচনের সময় প্রার্থীদের অনুদান, দলের পত্রিকা, সাময়িকী, বইপুস্তক, বিক্রয় থেকে আয়, ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত লাভ বা সুদের পরিমাণ, বিভিন্ন মেয়াদে আমানত ও সঞ্চয়পত্র হতে প্রাপ্ত সুদ বা লাভ, দলের বিভিন্ন, সেবামূলক সংগঠন হতে আয় এবং বিবিধ আরও কোন আয় থাকলে অডিটে তা উল্লেখ করতে হবে। এর পাশাপাশি ব্যয়ের খাতের মধ্যে কর্মীদের বেতন-ভাতা, বোনাস বাবদ ব্যয়, আবাসন ও প্রশানিক ব্যয়, বিদ্যুত, ওয়াসা, গ্যাসসহ বিভিন্ন ইউটিলি, ডাকা, টেলিফোন, ইন্টারনেট, কুরিয়ার সার্ভিস ও পত্রিকা বিল বাবদ ব্যয়, পোস্টার, লিফলেট, হ্যান্ডবিল, স্টিকার, ব্যানার, মাইকিং বাবদ ব্যয়, প্রচার ও পরিবহন ব্যয়, যাতায়াত, জনসভা, ঘরোয়া বৈঠক, দল থেকে প্রার্থীদের প্রদত্ত অনুদান, নির্বাচনী ব্যয় ছাড়াও বিবিধ আর কোন ব্যয় থাকলেও তাও অডিট রিপোর্টে উল্লেখ করতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব মোঃ সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আইন অনুযায়ী প্রতিবছরই নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দিতে হয়। বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিতেই চিঠি দেয়া হয়েছে। তবে হাইকোর্টের আদেশে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। আদালতের আদেশের পর জামায়াত আর কোন চিঠি দেয়া হয় না। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ও রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা অনুযায়ী সব রাজনৈতিক দলকে ইংরেজী বছরের হিসাবে আগের বছরের আয়-ব্যয়ের দলিল ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে জমা দিতে হবে। সেই হিসেবে গত বছর ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর কোন খাত থেকে কত টাকা আয় হয়েছে, কত টাকা ব্যয় হয়েছে, বিল-ভাউচারসহ তার পূর্ণাঙ্গ তথ্য কমিশনের নির্ধারিত একটি ছকে জমা দিতে হবে। তবে কোন দল চাইলে নির্দিষ্ট সময়ের আগে গিয়ে আবেদন করে জমা দেয়ার সময় বাড়িয়ে নিতে পারবে। আরপিও অনুযায়ী হিসাব জমা দেয়ার আগে তা অবশ্যই একটি রেজিস্টার্ড চার্টার্ড এ্যাকাউন্টিং ফার্ম দ্বারা দলের হিসাব অডিট করাতে হবে। এ হিসাবে সদস্য সংগ্রহসহ কোন খাত থেকে কত টাকা আয় হয়েছে, কত টাকা ব্যয় হয়েছে বিল-ভাউচারসহ তার পূর্ণাঙ্গ তথ্য কমিশনে জমা দিতে হবে। গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ ১৯৭২-এর ৯০-এইচ (১) (সি) ধারা অনুযায়ী নিবন্ধিত কোন দল পরপর তিন বছর কমিশনে তথ্য জমা দিতে ব্যর্থ হলে নির্বাচন কমিশন সে দলের নিবন্ধন বাতিল করতে পারবে।
×