ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গুলশান-শোলাকিয়ায় জঙ্গী হামলা ॥ সংসদে নিন্দা প্রস্তাব

খালেদা কি সরকার উৎখাত করতে চেয়েছিলেন?

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২০ জুলাই ২০১৬

খালেদা কি সরকার উৎখাত করতে চেয়েছিলেন?

সংসদ রিপোর্টার ॥ গুলশান, শোলাকিয়াসহ পবিত্র নগরী মদিনায় ও ফ্রান্সের নিস শহরে সন্ত্রাসী জঙ্গী হামলায় দেশী-বিদেশী নাগরিক নিহত হওয়ায় এবং বিশ্বব্যাপী সংঘটিত জঙ্গী ও সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় সর্বসম্মতভাবে নিন্দা প্রস্তাব পাস হয়েছে জাতীয় সংসদে। প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা এসব জঙ্গী-সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করে প্রশ্ন তুলেছেন যে, খালেদা জিয়া কি জঙ্গীদের দিয়ে রক্তাক্ত অভ্যুত্থান ঘটিয়ে সরকার উৎখাত করতে চেয়েছিলেন? গুলশান-শোলাকিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে জঙ্গী-সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে খালেদা জিয়া পরোক্ষভাবে জড়িত কি না তা খুঁজে বের করার জন্যও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতি আহ্বান জানিয়ে তাঁরা বলেন, মানবশক্তির কাছে এই দানবীয় অশুভ শক্তির পরাজয় অবশ্যম্ভাবী। বিএনপি-জামায়াত জঙ্গীর দল, তাই এদের সঙ্গে কোনদিন ঐক্য হবে না, হতে পারে না। অগ্নিসন্ত্রাসকারী, জ্বালাও-পোড়াওকারীদের বাদ দিয়ে প্রগতি, মানবতা ও শান্তির পক্ষের সকল রাজনৈতিক দলের মধ্যে দ্রুত জাতীয় সংলাপ করারও আহ্বানও জানিয়েছেন কোন কোন সদস্য। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে কার্য প্রণালী-বিধির ১৪৭ বিধি অনুযায়ী সাধারণ আলোচনার প্রস্তাব আনেন সরকারী দলের শেখ ফজলুল করিম সেলিম। আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের আবদুল মান্নান, ডা. দীপু মনি, লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, হুইপ শহীদুজ্জামান সরকার, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, ড. হাছান মাহমুদ, ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি, জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, জাতীয় পার্টির জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু প্রমুখ। আলোচনা শেষে স্পীকার ভোটে দিলে সর্বসম্মত কণ্ঠভোটে নিন্দা প্রস্তাবটি গৃহীত হয়। প্রস্তাব উত্থাপন করে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, এই হামলার সময় লন্ডনে থাকা তারেক জিয়া পাকিস্তান, বাংলাদেশসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ফোন করে কথা বলেছেন। আর খালেদা জিয়া ঘটনার নিন্দা না করে বলেছেন সরকার নাকি ব্যর্থ হয়েছে! পরোক্ষভাবে খালেদা জিয়া এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত কি-না, বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য গোয়েন্দা সংস্থার প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সব সন্ত্রাসী বা জঙ্গী হামলা একই সূত্রে গাঁথা। এরা একাত্তরের পরাজিত শক্তি পাকিস্তানের এজেন্ট। ঘটনার পর খালেদা জিয়া বলেন, রক্তাক্ত অভ্যুত্থান হয়েছে। তবে কি খালেদা জিয়া জঙ্গীদের নিয়ে রক্তাক্ত অভ্যুত্থান ঘটিয়ে সরকার উৎখাত করতে চেয়েছিলেন? তিনি বলেন, একাত্তরের স্টাইলে এখনও বিএনপি-জামায়াত সারাদেশে গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। এরা জঙ্গী সংগঠন। এদের সঙ্গে কোনদিন কোন ঐক্য হতে পারে না। তাই যতই ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করা হোক না কেন, বাংলাদেশের মাটিতে কোন জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের ঠাঁই হবে না। এদের নির্মূল করা হবেই হবে। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সব জঙ্গী-সন্ত্রাসী হামলার জন্য বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করে বলেন, বর্বরতার কাছে আমরা কোনদিনই মাথানত করব না, জীবনের চাকা থামাতে পারবে না। গুলশান ও শোলাকিয়ার হামলা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বিএনপি-জামায়াত চক্র ও খালেদা জিয়া অস্বাভাবিক সরকার আনতে দীর্ঘদিন ধরেই ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন। অতীতের সকল ঘটনার সঙ্গে গুলশানের ঘটনাও একই সূত্রে গাঁথা। আগুনযুদ্ধে পরাজিত হয়েই প্রথমে গুপ্তহত্যা এবং পরে বিদেশী হত্যার ঘৃণ্য পথ তারা বেছে নিয়েছে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা যখন দেশকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে যাচ্ছেন, জাদুকরী উন্নয়নের পথে দেশকে ধাবিত করছেন- ঠিক তখনই খালেদা জিয়ারা সরকার উৎখাতে এই ঘৃণ্য পথ বেছে নিয়েছেন। এখন জঙ্গীবাদ দমনের যুদ্ধ চলছে। আবদুল মান্নান বলেন, যে দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক গভীর, সেই দেশের নাগরিকদেরই হত্যা করা হয়েছে। জাতীয় পার্টির জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম মর্মন্তুদ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। সন্ত্রাস প্রগতি, উন্নয়ন, মানবতা ও শান্তির শত্রু। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সম্মিলিতভাবেই এদের নির্মূল করতে হবে। এই ঘটনায় জাতীয় ঐক্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ডাঃ দীপু মনি বলেন, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বিএনপির মদদে জামায়াত জঙ্গী-সন্ত্রাসী হামলার পৃষ্ঠপোষকতা, অর্থায়ন ও মদদ দিচ্ছে। সরকার ও জনগণের ঐক্য হয়ে গেছে। জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের কারখানা, পৃষ্ঠপোষক ও ব্যবহারকারীদের সঙ্গে ঐক্যের কোন প্রশ্নই উঠে না। লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, জঙ্গী-সন্ত্রাসী শুধু বাংলাদেশে নয়, বৈশ্বিক সমস্যা। এ পর্যন্ত প্রায় ৭২ হাজার জঙ্গী-সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে, তার অধিকাংশই হয়েছে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে। বিএনপি-জামায়াতই হচ্ছে বাংলাদেশে জঙ্গী-সন্ত্রাসের প্রবক্তা, লালন-পালনকারী। এদের ঐক্যবদ্ধভাবেই মোকাবেলা করতে হবে। ড. হাছান মাহমুদ বলেন, যারা ধর্মের নামে মানুষ হত্যা করছেন, তারা ইসলাম, মানবতা, রাষ্ট্র ও জাতির শত্রু। এরা এজিদের অনুসারী। হামলাকারী ও হত্যাকারী যেসকল জঙ্গী-সন্ত্রাসী ধরা পড়ছে, তারাই হচ্ছে বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের লোক। রাজনৈতিক উদ্দেশে এই জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করা হচ্ছে।
×