ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা আবাহনী, শেখ রাসেলের ভাবনায় শুধুই শিরোপা

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ১৮ জুলাই ২০১৬

ঢাকা আবাহনী, শেখ রাসেলের ভাবনায় শুধুই শিরোপা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাবের দাপটে গত দুই মৌসুমে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে অসহায় ছিল অন্যান্য শিরোপা প্রত্যাশী দলগুলো। তবে এবার আসন্ন নবম পেশাদার লীগে জামালের আধিপত্যের পতন চায় ঢাকা আবাহনী লিমিটেড ও শেখ রাসেল ক্রীড়চক্র। দুটি দলই শুরু হওয়ার অপেক্ষায় থাকা লীগে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। রবিবার বিকেলে বাফুফে ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ট্রফি জয়ের সংকল্পের কথা জানান দল দুটির অধিনায়ক, কোচ ও ম্যানেজার। লীগ শুরুর আগে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের পরিকল্পনা অনুযায়ী ধারাবাহিক তিন পর্বের সংবাদ সম্মেলনের গতকাল ছিল শেষদিন। আগের দুইদিন চারটি করে মোট আট দল তাদের লক্ষ্যের কথা জানায়। শেষদিনে বাকি চার দল তাদের কথা শোনায়। এদিন ঢাকা আবাহনী, শেখ রাসেল ছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের লক্ষ্যের কথা জানায় রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি ও উত্তর বারিধারা ক্লাব। উত্তর বারিধারা লীগে ৬/৭ নম্বর এ থাকার আশা করলেও রহমতগঞ্জ শিরোপার জন্যই ফাইট দেবে বলে জানায়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পেশাদার ফুটবল লীগ কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম মুর্শেদী, বাফুফের জনসংযোগ কর্মকর্তা আহসান আহমেদ অমিত এবং ঢাকা আবাহনী, শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র, রহমতগঞ্জ ও উত্তর বারিধারা ক্লাবের কোচ, ম্যানেজার এবং অধিনায়করা। মৌসুমের শুরুতেই (গত জুনে) ফেডারেশন কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়ে নিজেদের শক্তিমত্তার জানান দিয়েছে ঢাকা আবাহনী। এবার দেশের সবচেয়ে বড় আসরেও শিরোপা পুনরুদ্ধার করতে চায় আকাশী-সাদা জার্সিধারীরা। পেশাদার লীগের শুরুর দিকে ঢাকা আবাহনীর ছিল একচ্ছত্র দাপট। প্রথম তিন আসরেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কৃতিত্ব দেখায় তারা। চতুর্থ মৌসুমে শেখ জামাল শিরোপা জিতলেও পরের মৌসুমে আবারও চ্যাম্পিয়ন হয় আবাহনী। কিন্তু এর পরের তিন মৌসুমেই ব্যর্থ হয়েছে তারা। গতবার আবাহনী লীগ শেষ করে চার নম্বরে থেকে। তবে এবার সব হতাশা ঝেড়ে ফেলে আবারও মুকুট পুনরুদ্ধার করতে চায় দলটি। সংবাদ সম্মেলনে এমনই জানিয়েছে দলটির কোচ, ম্যানেজার ও অধিনায়ক। আবাহনীর অস্ট্রিয়ান কোচ জর্জ কোটান শুরুতেই ভাঙা বাংলায় উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, আসসালামুআলাইকুম। শুভ বিকেল। তোমরা কেমন আছ? নিজেদের লক্ষ্যের কথা জানিয়ে কোটান বলেন, লীগে ৪/৫টি টিম একই মানের। সবার ট্রফি জয়ের সামর্থ্য আছে। তবে আমরা শিরোপার জন্যই খেলব। আমাদের দলের প্রস্তুতি খুব ভাল। সব খেলোয়াড় ফিট। বেশিরভাগ ফুটবলার জাতীয় দলে খেলে থাকে। আশা করছি লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব। আবাহনীর ম্যানেজার সত্যজিত দাস রূপু বলেন, আবাহনী সবসময় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য খেলে। দ্বিতীয় হওয়াটা আমাদের জন্য ব্যর্থতা। গতবারের চেয়ে আমাদের এবারের দলটা অনেক ভাল। আমাদের প্রস্তুতিও ভাল। শিরোপার জন্যই খেলবে দল। রূপু আরও বলেন, আগেরবার ব্যর্থতার অন্যতম কারণ স্কোরিংয়ে দুর্বলতা ছিল। আশা করছি এবার সেটা কাটিয়ে উঠতে পারব। কোচ ও ম্যানেজারের মতো আবাহনীর অধিনায়ক আরিফুল ইসলামও ট্রফি জয় ছাড়া অন্য কিছু ভাবছেন না। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য অবশ্যই হাই। সবশেষ টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। তবে এটা ভুলে আমাদের নতুন করে শুরু করতে হবে। গত দুইবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে শেখ জামাল। তার আগের ২০১২-১৩ মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র। সেটাই প্রথম এবং শেষ সাফল্য ক্লাবটির। এবার আবারও দেশের সবচেয়ে বড় আসরের ট্রফি জিততে চায় রাসেল। শেখ রাসেলের কোচ মারুফুল হক বলেন, মৌসুমের শুরুতে আমাদের টার্গেট ছিল সব আসরে চ্যাম্পিয়ন হওয়া। যদিও দুটোতে মিস করেছি। কিন্তু লীগকে ঘিরে আমরা কাজ করছি। আমাদের লক্ষ্য চ্যাম্পিয়নশিপ। তবে কাক্সিক্ষত সাফল্যের পথে মারুফুল চ্যালেঞ্জ মানছেন দুই আবাহনী ও শেখ জামালকে। আগের মৌসুমে দল নিয়ে সন্তুষ্ট না থাকলেও এবার খুশি রাসেল বস। তিনি বলেন, সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার, উইঙ্গারে প্রতিষ্ঠিত খেলোয়াড় ছিল না। এবার সেই ঘাটতি নেই, বিদেশী ফুটবলারও ভালমানের। আশা করছি সফল হতে পারব। শেখ রাসেলের অধিনায়ক আতিকুর রহমান মিশু বলেন, ইতোমধ্যে দুটো ট্রফি মিস হয়েছে। তবে লীগ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এটার জন্যই আমরা লড়ব। ইনজুরি কাটিয়ে সবাই ফিরছে। মনযোগ ধরে রাখতে পারলে ইনশাল্লাহ চ্যাম্পিয়ন হতে পারব। সংবাদ সম্মেলনে চমক দেখানো কথা শুনিয়েছে রহমতগঞ্জ। দলটির কোচ কামাল আহমেদ বাবু ও অধিনায়ক শওকত রাসেল জানিয়েছেন, তাদের দল খেলবে ট্রফির জন্যই। কোচ কামাল বাবু বলেন, আমাদের প্রস্তুতি বেশ ভাল। এখন টিমগুলোর যে অবস্থা তাতে কেউ বলতে পারবে না তারাই ফেবারিট। আমাদের ইয়াং খেলোয়াড় অনেক ভাল। লোকাল কালেকশনও ভাল। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের লক্ষ্য চ্যাম্পিয়নশিপে ফাইট দেয়া। কামাল বাবু আরও বলেন, দুটো টুর্নামেন্টে আমরা আমাদের সামর্থ্য দেখিয়েছি। আমরা হুঙ্কার দিচ্ছি না, অন্য দলগুলোকে দেখে মনে হয়েছে সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারলে চ্যাম্পিয়ন হওয়া সম্ভব। লক্ষ্যে পৌঁছতে মাঠে রেফারি, লাইন্সম্যানদের নিরপেক্ষ থাকার অনুরোধ জানান তিনি। তিনি বলেন, রেফারিরা সবসময়ই বড় দলগুলোকে সুবিধা দিয়ে থাকেন। তবে ফেডারেশন কাপে বাজে আচরণের জন্য ক্ষমা চান কামাল বাবু। রহমতগঞ্জ অধিনায়ক শওকত রাসেল বলেন, গত দুই তিন বছরে বড় ছোট দল বলতে কিছু নেই। সব দলই একই মানের। আমরা ট্রফিটা জেতার চেষ্টা করব। নিজেদের সামর্থ্য সম্পর্কে ভালই জানা উত্তর বারিধারার। এবার প্রিমিয়ার লীগে উঠে আসা দলটি ৬/৭ নম্বরে থাকতে চায়। দলটির কোচ রাশেদ আহমেদ পাপ্পু ও অধিনায়ক সোহেল রানা দু’জনই এ লক্ষ্যের কথা জানান। উত্তর বারিধারা গত বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লীগে চ্যাম্পিয়ন হয়ে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের টিকেট পেয়েছে।
×