ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকায় জঙ্গীবিরোধী কমিটি সাত দিনের মধ্যে গঠনের নির্দেশ আওয়ামী লীগের

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১৭ জুলাই ২০১৬

ঢাকায় জঙ্গীবিরোধী কমিটি সাত দিনের মধ্যে গঠনের নির্দেশ আওয়ামী লীগের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আগামী সাত দিনের মধ্যে ঢাকা মহানগরের সকল থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়নে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করে সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদবিরোধী কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ। শনিবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত বর্ধিত সভা থেকে এ নির্দেশ দেয়া হয়। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম জঙ্গীবাদ দমনে সামাজিক বিপ্লব গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শক্তির উদ্দেশে বলেন, ‘আসুন জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে পাড়া-মহল্লায় সামাজিকভাবে, পারিবারিকভাবে আন্দোলন গড়ে তুলি। যদি সামাজিকভাবে আন্দোলন গড়ে তুলতে পারি, আমরা যদি সচেতন হই তাহলে জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে আমরা সফল হবই।’ তিনি বলেন, গুলশানে হামলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখন একটি মহল দেশকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। বিদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এ নতুন ষড়যন্ত্র। তিনি বলেন, কঠোর হাতে এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকা- দমন করা হবে। ষড়যন্ত্রকারীদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়া হবে। আর এজন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত সারাদেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা, ওয়ার্ড, ইউনিয়নে জঙ্গীবাদবিরোধী কমিটি গঠনের প্রস্তুতি উপলক্ষে এ বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ। আগামী সাত দিনের মধ্যে মহানগরীর সকল থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়নে জঙ্গীবাদবিরোধী কমিটি গঠন করতে নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কমিটি শুধু আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে গঠন করবেন না। স্থানীয় সকল শ্রেণী-পেশার মানুষকে নিয়ে এ কমিটি গঠন করবেন। কোন জঙ্গীর ঠাঁই বাংলাদেশে হবে না। এদের কঠোর হাতে দমন করা হবে। গুলশানের হামলার দায় খালেদারÑ নানক ॥ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, গুলশানের আর্টিজান রেস্টুরেন্ট ও শোলাকিয়ায় সন্ত্রাসী হামলার দায়-দায়িত্ব বিএনপি চেযারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে নিতে হবে। শনিবার বিকেলে বাংলা একাডেমি মিলানায়তনে এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কারান্তরীণ দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। নানক আরও বলেন, এ জঙ্গী হামলা নতুন নয়। এটা খালেদা জিয়ার পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যার নতুন সংস্করণ। তাই এসব হামলার সব দায়িত্ব খালেদা জিয়াকে নিতে হবে। আর এ দেশ থেকে জামায়াত-শিবিরকে নির্মূল করে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে হবে। এ কাজে এগিয়ে আসতে হবে ছাত্রলীগকে। সব কলেজ-বিশ^বিদ্যালয়ে ছাত্রলীগকে তার অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে কাজ করে যেতে হবে। ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগের সভাপতিত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নেতা অধ্যাপক ড. আখতারুজামান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এসএম কামাল হোসেন, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন, দফতর সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন শাহাজাদা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। জামায়াতকে বাদ দিলে ঐক্য হতে পারেÑ ড. হাছান ॥ আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ২০ দলীয় জোট থেকে জামায়াতকে বাদ দিলে জাতীয় ঐক্য সম্ভব হতে পারে। শনিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ আয়োজিত ‘জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ ও দমনে আমাদের করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়া জঙ্গীবাদবিরোধী সমাবেশ করবেন। এজন্য তিনি একটি বৈঠকও করেছেন। ওই বৈঠকে জামায়াতও ছিল। জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর জঙ্গীবাদবিরোধী সমাবেশ করা হাস্যকর ছাড়া আর কিছু নয়। তিনি বলেন, ইসলামের ছদ্মাবরণে নামধারী কিছু মুসলমান জঙ্গীবাদী হামলার মাধ্যমে যেমন পবিত্র ধর্ম ইসলামকে কালিমালিপ্ত করেছে, তেমনি সারাবিশ্বের মুসলমানদের বিপদাপন্ন করেছে। কোন মুসলমান মসজিদ নববীতে এবং পবিত্র ঈদের জামাতে হামলা চালাতে পারে না। যারা এ হামলা চালিয়েছে, তারা ইসলামের শত্রু। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে যেমন দেশের প্রকৃত ইসলামী দলগুলোর মধ্যে ঐক্য প্রয়োজন তেমনি ইসলামী দেশগুলোর সংগঠন ওআইসির জরুরী সম্মেলন আহ্বান করা অতীব জরুরী। হাছান মাহমুদ বলেন, বর্তমান সরকারের পতন ঘটাতে একটি মহল মরিয়া হয়ে উঠেছিল। তারাই রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য জঙ্গীবাদ সৃষ্টি ও লালন-পালন করছে। দেশের সকল জঙ্গীবাদী হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হলো জামায়াত-শিবির। তারা জঙ্গীদের প্রশিক্ষক। আর এ কাজে অর্থের যোগানদাতা হলো বিএনপি। তিনি বলেন, বিএনপির অনেক শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নেতা রয়েছেন যারা জঙ্গীবাদ চান না। তাদের উচিত জামায়াত এবং বিএনপির মধ্যে যে সকল জঙ্গীবাদী রয়েছে তাদের পরিত্যাগ করা। ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেনÑ ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ জয়নুল আবেদিন জুবাইর, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক মুহাম্মদ আলী ফারুকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আতাউর রহমান মিয়াজী, ইসলামী ছাত্রসেনার সভাপতি মুহাম্মদ মুনির হোসাইন প্রমুখ।
×