ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

একে মোহাম্মাদ আলী শিকদার

বিশ্ব জঙ্গী ও বাংলাদেশী জঙ্গীদের মধ্যে পার্থক্য আছে

প্রকাশিত: ০৩:৪৩, ১৭ জুলাই ২০১৬

বিশ্ব জঙ্গী ও বাংলাদেশী জঙ্গীদের মধ্যে পার্থক্য আছে

ধর্মান্ধ উগ্র জঙ্গীবাদের যেমন বিশ্বায়ন ঘটেছে, তেমনি দেশে দেশে অভ্যন্তরীণ কারণেও নিজস্ব জঙ্গীবাদের উত্থান ঘটেছে। অভ্যন্তরীণভাবে উৎপত্তি হওয়া জঙ্গীদের নিজস্ব এজেন্ডা রয়েছে, যা বেশিরভাগের সঙ্গে বর্তমানে বিশ্ব জঙ্গীদের মোড়ল আল কায়েদা-আইএসের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের কোন মিল নেই। তবে অভ্যন্তরীণ জঙ্গীরা নিজেদের কৃতিত্ব ও গুরুত্ব প্রদর্শনের জন্য নিজেরাই আগ বাড়িয়ে বড় দাদার নাম ভাঙ্গাতে চাইবে সেটাই স্বাভাবিক। তাই বিশ্ব জঙ্গীবাদের সঙ্গে বাংলাদেশী জঙ্গীদের সম্পর্কের প্রকৃত স্ট্যাটাস নির্ণয় করতে চাইলে বর্তমানে বিশ্ব জঙ্গীবাদের প্রধান ধারক বাহক আইএস-আল কায়েদার লক্ষ্য ও কৌশলের একটা নির্মোহ বিশ্লেষণ প্রয়োজন। আল কায়েদার বর্তমান প্রধান আয়মান আল জাওয়াহিরি নিজে একটা বই লিখেছেন, যার ইংরেজী সংস্করণের নাম- ঞযব কহরমযঃ টহফবৎ চৎড়ঢ়যবঃ’ং ইধহহবৎং. ২০০৮ সালে আমি বইটি অনলাইনে দেখেছি, কিন্তু এখন আর পাচ্ছি না। এই বইয়ের ভেতরে আল কায়েদার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কৌশলের বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায়। আল কায়েদার লক্ষ্য বাস্তবায়নের মূল ভরকেন্দ্র বা সেন্টার অব গ্র্যাভিটি হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য। তবে পূর্ববর্তী দৃষ্টির আওতায় অন্যান্য মুসলমান প্রধান দেশও রয়েছে। তাদের মূল বা চূড়ান্ত লক্ষ্য মধ্যপ্রাচ্যের রাজতন্ত্র ও স্বৈরতন্ত্রের পরিবর্তে সেখানে ইসলামিক শরিয়া রাষ্ট্র বা বৃহত্তর খেলাফত প্রতিষ্ঠা করা। আল কায়েদা মনে করে তাদের লক্ষ্য বাস্তবায়নের পথে মূল বাধা মধ্যপ্রাচ্যের শাসকগণ নয়, বরং মূল বাধা হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব, যারা নিজেদের ভূ-রাজনৈতিক, কর্পোরেট ও আধিপত্যবাদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের রাজতন্ত্র ও স্বৈরতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে কাজ করেছে। সুতরাং পশ্চিমা বিশ্বকে মধ্যপ্রাচ্য থেকে হাত গুটাতে বাধ্য না করা গেলে আল কায়েদার মূল লক্ষ্য কোন দিনই বাস্তবায়িত হবে না। সুতরাং চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনের প্রথম পর্বে আল কায়েদা যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বকে এক নম্বর শত্রু ঘোষণা করে। তাই দেখা যায়, ১৯৯৮ সালে ওসামা বিন লাদেন ফতোয়া জারি করেন এই মর্মে যে, আমেরিকান ও ইহুদীদের হত্যা করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অবশ্য কর্তব্য বা ফরজ (সূত্র-হোসেন হাক্কানী, পাকিস্তান বিটুইন মস্ক এ্যান্ড মিলিটারি, পৃ-৩০৭)। এই ফতোয়ায় লাদেনের সঙ্গে কো-স্বাক্ষর করেন পাকিস্তানের জঙ্গী নেতা মাওলানা ফজলুর রহমান খলিল, যিনি হরকাত-উল আনসার ওরফে হরকাত-উল মুজাহিদীন ওরফে জামায়াত-উল-আনসারের নেতা। ১৯৯৮ সালের শেষের দিকে ভূ-মধ্যসাগরের যুদ্ধ জাহাজ থেকে পাকিস্তানের আকাশ হয়ে আফগানিস্তানে লাদেনের অবস্থানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ক্রুজ মিসাইল আক্রমণ চালালে অল্প সময়ের ব্যবধানে লাদেন ও খলিল দু’জনই বেঁচে যান। আল কায়েদা থেকেই মূলত জঙ্গীবাদের বিশ্বায়ন ঘটে। নব্বই দশকের শেষার্ধে গঠিত হয় আল কায়েদার প্রতিনিধি সোমালিয়ার আল শাবাব জঙ্গী গোষ্ঠী। আল শাবাব এখন মাল্টিন্যাশনাল জঙ্গী গোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে। ওসামা বিন লাদেনের পরিকল্পনায় ও হুকুমে আল শাবাবের জঙ্গীরা ১৯৯৮ সালের আগস্ট মাসে একই দিনে একযোগে আক্রমণ চালায় কেনিয়া ও তানজেনিয়ায় অবস্থিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের ওপর, তাতে প্রায় সাড়ে তিনশ’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হতাহত হয়। তখন থেকেই শুরু হয় আল কায়েদা ভার্সেস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ। তারপর মূলত যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে টার্গেট করে আল কায়েদার বিস্তার ঘটে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর-পূর্ব আফ্রিকা জুড়ে। আল কায়েদা প্রধান জাওয়াহিরির লিখিত বইয়ে উল্লিখিত কৌশল ও টার্গেটের যে লক্ষ্য ও বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায় তাতে শুধু ভিন্ন ধর্মাবলম্বী ও ভিন্ন মতাবলম্বী হওয়ার জন্য নিরীহ, নিরাপদ কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে টার্গেট করে তারা হত্যাকা- চালায় না। তবে এক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের শিয়া সম্প্রদায়ের বিষয়টি আলাদা। শিয়া সম্প্রদায় ও তাদের স্থাপনার প্রতি আল কায়েদা অনেক আক্রমণ চালিয়েছে। সুতরাং বাংলাদেশের জঙ্গীরা যেভাবে খ্রীস্টান যাজক, হিন্দু পুরোহিত, বৌদ্ধ ভিক্ষু ও প্রগতিশীল চিন্তার মানুষকে ব্যক্তিগতভাবে টার্গেট করে হত্যা করেছে তার সঙ্গে আল কায়েদার কৌশল, নীতি ও টার্গেট নির্ধারণের কোন মিল নেই। এবার আসা যাক আইএসের কথায়। আল কায়েদা থেকেই আইএসের সৃষ্টি। তত্ত্বগতভাবে ফান্ডামেন্টালি বা মূল আদর্শের জায়গায় দুয়ের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। আল কায়েদাপ্রধান ওসামা বিন লাদেনের কৌশলী ঘোষণা ছিল মুসলিম বিশ্ব থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব সম্পূর্ণভাবে হাত গুটিয়ে না নেয়া পর্যন্ত নিজস্ব কোন রাষ্ট্র ঘোষণা করা যাবে না। কিন্তু ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ইরাক দখল, সাদ্দামের পতন ও ফাঁসি হওয়া, সাদ্দামের সেনাবাহিনীর প্রায় ৩-৪ লাখ সৈন্যকে মার্কিন কর্তৃপক্ষের হুকুমে চাকরিচ্যুত করা, যুদ্ধে ইরাকের অবকাঠামো সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে পড়া, সুন্নি, শিয়া ও কুর্দি এই তিন সম্প্রদায়ের মধ্যে চরম বিভাজনের ফলে ইরাকের শাসন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ার ফলে যে শূন্যতা ও সুযোগ সৃষ্টি হয় তার জেরে আল কায়েদার ইরাকী ফ্রন্ট আল নুসরা গঠিত হয়। আল নুসরার নেতৃত্বে অধিষ্ঠিত হন ভয়ানক চরমপন্থী ও উগ্রবাদী হিসেবে পরিচিত আবু মুসাব আল জারকাউই। জারকাউইয়ের উচ্চ আকাক্সক্ষার ফলে সৃষ্টি হয় ওঝওখ, পরে ওঝওঝ, যেটি এখন সংক্ষেপে আইএস বা দায়েশ নামে পরিচিত। আল কায়েদা মূল কৌশলের বাইরে গিয়ে নিজস্ব রাষ্ট্র ঘোষণার কারণেই আইএস ও আল কায়েদার মধ্যে পার্থক্য সৃৃষ্টি হয় এবং কৌশল ও নীতি নির্ধারণে দ্বন্দ্ব দেখা যায়। শোনা যায় জারকাউই মার্কিন মিসাইল আক্রমণে নিহত হয়েছেন। ২০১৪ সালের মাঝামাঝিতে আইএসের পরিপূর্ণ আত্মপ্রকাশ ঘটে। ইরাক ও সিরিয়ার কিছু ভূ-খ- দখল করে আইএস নিজস্ব রাষ্ট্রের ঘোষণা দেয়। আইএস প্রধানত চারটি মৌলিক লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করে। প্রথমত, ইরাক-সিরিয়ার দখলকৃত ভূ-খ- সুসংহত করা এবং ক্রমান্বয়ে এর বিস্তৃতি ঘটানো। দ্বিতীয়ত, সারা বিশ্বের মুসলমান তরুণদের উদ্বুদ্ধ করে নিজেদের সেনা দলে ভেড়ানো অর্থাৎ সেনাশক্তি বৃদ্ধি করা। তৃতীয়ত, চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্থাৎ খেলাফত প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে অন্যতম শত্রু মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিশালী শিয়া সম্প্রদায় ও তাদের স্থাপনার ওপর আক্রমণ চালানো। চতুর্থত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের দেশগুলোর অভ্যন্তরে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও জনসমাবেশের ওপর আক্রমণ চালানো, যাতে ওইসব দেশের জনগণের চাপে পশ্চিমা বিশ্বের সরকারগুলো আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো থেকে বিরত থাকে। একটি বিষয় লক্ষণীয়, গালফ রাজতন্ত্রগুলো আইএসের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেও ওইসব দেশের বিরুদ্ধে বা অভ্যন্তরে শিয়া সম্প্রদায়ের ওপর ব্যতীত বড় ধরনের কোন আক্রমণ আইএস চালায়নি। আইএস সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত কোন নিরীহ ব্যক্তি বিশেষকে টার্গেট করে একটি আক্রমণ চালায়নি, একটি হত্যাকা-ও ঘটায়নি, যা একের পর এক করে চলেছে বাংলাদেশের জঙ্গীরা। উপরন্তু আইএস এখনও বাংলাদেশকে শত্রু রাষ্ট্র ঘোষণা করেনি। তারপর আইএস মধ্যপ্রাচ্যে তাদের মৌলিক কৌশল ও লক্ষ্য বাস্তবায়নে এখন হিমশিম খাচ্ছে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশের মতো একটি সুন্নি মুসলমান প্রধান দেশে নতুন ফ্রন্ট খোলার কোন যুক্তি খুঁজে পাওয়া যায় না। প্রশ্ন উঠেছে, আইএস বাংলাদেশের হত্যাকা-গুলোর দায়িত্ব স্বীকার করছে কেন? আমি বলব এই কথিত দাবিটা আদৌ আইএস করেছে কিনা তা কি কেউ স্বতন্ত্রভাবে অনুসন্ধান চালিয়ে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে? তাই যে পদ্ধতির মাধ্যমে আইএস বাংলাদেশে আছে বলে যারা প্রচার চালাচ্ছে তাদের বিগত দিনের ও হাল আমলের চলাফেরার দিকে নজর দিলেই বোঝা যাবে এর পিছনে অন্য কোন এজেন্ডা কাজ করছে। তাছাড়া বাংলাদেশের জঙ্গীরা নিজেদের স্ট্যাটাস ও গুরুত্ব বাড়ানোর জন্য এবং বাংলাদেশের মানুষের মনে ভয় সৃষ্টি করার লক্ষ্যে প্রযুক্তির কারসাজিতে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে কিনা তা-ই বা কে বলবে? তবে আমরা যদি একেবারে গোড়ায় হাত দিই তাহলে দেখা যাবে বাংলাদেশের জঙ্গীদের সঙ্গে আইএস, আল কায়েদার তত্ত্বীয়ভাবে আদর্শগত মিল রয়েছে এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সুবিধায় কোন যোগাযোগ বা সংযোগ থাকাও অস্বাভাবিক নয়। একজনের সঙ্গে অপরজনের কোন সংযোগ বা যোগাযোগ থাকা মানে তারা একে অপরের লোক তা ভাবার কোন কারণ নেই। তাছাড়া আদর্শগত মিল থাকলেও একে অপরের সঙ্গে জোটবদ্ধ থাকে তাও নয়। জোটবদ্ধতার বিষয়টি ভিন্ন। বাংলাদেশের জঙ্গী সংগঠনগুলো যদি আইএসের শাখা হতো তাহলে অবশ্যই কৌশল, নীতি ও টার্গেট নির্ধারণে একটা আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড বা মান বজায় থাকত। তাহলে নিত্যরঞ্জন পা-ের মতো অসহায় পুরোহিত ও মুদি দোকানদার সুরিন গোমেজকে প্রাণ দিতে হতো না। হরকত-উল জিহাদ (জঙ্গী), জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ইত্যাদি নামে ডজন ডজন জঙ্গী সংগঠন বাংলাদেশে সশস্ত্র তৎপরতা চালাচ্ছে প্রায় ১৫-১৬ বছর। শুরু থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশী জঙ্গীদের যারা টার্গেট হয়েছেন, জঙ্গীদের হাতে যারা খুন হয়েছেন, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে টার্গেটের তালিকায় এক নম্বরে আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং জঙ্গীবাদের সব তৎপরতার মূল উদ্দেশ্য শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাত করা। ভারতের খাগড়াগড় ও সিঙ্গাপুরে ধৃত বাংলাদেশী জঙ্গীদের স্বীকারোক্তিতেও তা-ই পাওয়া গেছে। লক্ষ্য অর্জন করার জন্য জঙ্গীরা প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক, বাঙালী সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী চিন্তক ও এ্যাক্টিভিস্টদের হত্যা করছে। শুধু বাংলাদেশীদের হত্যা করে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা যাচ্ছে না বিধায় উন্নয়ন কর্মকা-কে বাধাগ্রস্ত করার জন্য, সরকারের ওপর বিদেশী শক্তিশালী রাষ্ট্রের চাপ সৃষ্টি করার জন্য এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য তারা কখনও গুপ্ত হত্যা আবার কখনও সুযোগ মতো বড় আকারের আক্রমণ চালাচ্ছে, যার সর্বশেষ উদাহরণ গুলশান আক্রমণ। সুতরাং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও বর্তমান সরকার কর্তৃক রাষ্ট্রকে আবার পরিপূর্ণ মুক্তিযুদ্ধের দর্শনে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে তা প্রতিহত করার জন্য বাংলাদেশী জঙ্গীরা দেশের অভ্যন্তরে আলোচিত সব হত্যাকা- ঘটাচ্ছে। এর সঙ্গে আইএস আল কায়েদার লক্ষ্য ও মিশনের সঙ্গে কোন মিল নেই। লেখক : ভূ-রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক
×