ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা নিতে দৃঢ় সঙ্কল্প সরকার

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১৫ জুলাই ২০১৬

চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা নিতে দৃঢ় সঙ্কল্প সরকার

রহিম শেখ ॥ এক দশকের বেশি সময় ধরে দেশে বিক্ষিপ্তভাবে জঙ্গী হামলা হলেও সম্প্রতি গুলশান ও শোলাকিয়ার ঘটনার পর জঙ্গী অর্থায়নের বিষয়টি আবারও সামনে এসেছে। বিভিন্ন সময় জঙ্গীরা আটক হলেও বাংলাদেশে জঙ্গী উত্থানের পেছনে অর্থদাতারা আড়ালেই থাকছে। তবে এবার জঙ্গী দমন ও অর্থায়ন প্রতিরোধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। জঙ্গীদের যারা অর্থ ও আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে তাদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু করেছেন গোয়েন্দারা। জঙ্গী অর্থায়নের অভিযোগে সম্প্রতি বেশকিছু বেসরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংককে সতর্ক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গোয়েন্দারা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্য ও যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিভিন্ন এনজিও অর্থের বড় যোগানদাতা। এছাড়া সৌদি আরব, কুয়েত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ যুক্তরাজ্য প্রবাসী ব্যবসায়ীরাও অর্থায়ন করছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দাবি, অর্থদাতাদের কয়েকজনকে চিহ্নিত করা গেছে। এর সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে দেশের ভেতরে ও বাইরে বেশ কয়েকজনকে নজারদারিতে রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে আরও তথ্যউপাত্ত সংগ্রহ করার পর তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে সূত্রে জানা গেছে। সাম্প্রতিক ঘটনায় উদ্বিগ্ন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কয়েকদিন আগে এক চিঠিতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছে, যাতে অর্থদাতাদের চিহ্নিত করা যায়। ওই চিঠিতে বলা হয়, কোন ব্যক্তি, সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে অর্থের অস্বাভাবিক লেনদেন পরিলক্ষিত হলে বা অনুরূপ কোন হিসাবের খোঁজ পাওয়া গেলে বাংলাদেশ ব্যাংক যেন তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে অবহিত করে। কোথাও জঙ্গী অর্থায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিললেই সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানাতে হবে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর আবু হেনা মোঃ রাজি হাসান জনকণ্ঠকে বলেন, দেশের যে কোন পরিস্থিতির সঙ্গে আর্থিক সংশ্লিষ্টতা থাকলে তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর উদ্বেগ বাড়ে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) আগের মতোই কাজ করছে। দেশে মানি লন্ডারিং আইন আছে। প্রতিনিয়ত সেখান থেকে লেনদেনের আপডেট নেয়া হয়। তাছাড়া প্রতিটি ব্যাংকের কাছে নির্দেশ দেয়া আছে কোন অস্বাভাবিক লেনদেন দেখলে তার বিরুদ্ধে যেন ব্যবস্থা নেয়া হয়। তিনি আরও জানান, জঙ্গী অর্থায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে বা এ বিষয়ে কোন তথ্য থাকলে মন্ত্রণালয় থেকে যদি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সহায়তা চাওয়া হয় তবে তাৎক্ষণিকভাবে সব ধরনের সহায়তা প্রদান করতে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রস্তুত। জানা গেছে, জঙ্গী অর্থায়নের উৎস খুঁজতে উচ্চপর্যায়ের একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। ২০১৪ সালে গঠিত ওই টাস্কফোর্সের দ্বিতীয় সভা হয় ২০১৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি। তাতে ছয়টি সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে ইসলামী শরিয়াহ আইনে পরিচালিত ব্যাংকগুলোতে সুদমুক্ত আমানতকারীদের সুদ বা লভ্যাংশের কত টাকা শুরু থেকে এ পর্যন্ত জমা হয়েছে এবং এ অর্থ কোথায় ব্যয় হয়েছে তার একটি হিসাব দিতে হবে। আর ইসলামী ব্যাংকিং পরিচালনার জন্য আলাদা কোন আইন না থাকায় সাধারণ ব্যাংকিং আইনে কোন বিধান সংযোজন করে বিদ্যমান আইনটি সংশোধন করা যায় কি-না তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এ দুটিসহ মোট ছয়টি সিদ্ধান্ত তুলে ধরে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে চিঠি পাঠায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরপর এক বছর পার হয়ে গেলেও ওই চিঠির উত্তর দেয়নি সংশ্লিষ্ট কেউই। এ অবস্থায় গত ৮ মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোঃ কামরুল হাসান খান স্বাক্ষরিত আরেকটি তাগিদপত্র পাঠানো হয়েছে মন্ত্রণালয়গুলোতে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু জনকণ্ঠকে জানান, জঙ্গী অর্থায়নের উৎস অনুসন্ধান কার্যক্রমকে আরও গতিশীল ও জোরালো করতে নতুন এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি জানান, দেশে জঙ্গী-সন্ত্রাসী কর্মকা-ে অর্থায়নের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স অবস্থান নিয়েছে সরকার।
×