ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অধ্যাপক হাসান আবদুল কাইয়ূম

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ ঈদ-উল-ফিতর ২০১৬ উত্তর ভাবনা

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ১৫ জুলাই ২০১৬

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ ঈদ-উল-ফিতর ২০১৬ উত্তর ভাবনা

সর্বপ্রথম ঈদ-উল-ফিতর উদযাপিত হয় ৬২৪ খ্রিস্টাব্দে মদীনা মনওয়ারায়। এই ২০১৬ সালে এসে ঈদ-উল-ফিতরের বয়স হলো ১৩৯২ বছর। বাংলাদেশে কবে থেকে ঈদ-উল-ফিতর উদযাপিত হচ্ছে তা নির্ণয় করা খুবই কঠিন। তবে অনুমান করা যায় ৬২৯ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে এখানে এই ঈদ উদযাপিত হয়ে আসছে। ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত পলাশীর যুদ্ধের বিপর্যয়ের ১০/১১ দিন পর ৪ শাওয়াল এখানে ঈদ-উল-ফিতর উদযাপিত হয়েছিল স্বাধীনতা হারাবার দুঃখ নিয়ে। এ বছর এই ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের রমাদান মাসে উগ্রবাদীরা নবীর শহর মদীনা মনওয়ারায় বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে প্রমাণ করেছে তারা নামধারী মুসলিম হলেও প্রকৃতপক্ষে তারা ইসলাম মানে না। ইসলাম শব্দের শব্দমূল হচ্ছে সালাম অর্থাৎ শান্তি। ইসলাম সন্ত্রাসবাদকে কোন অবস্থাতেই প্রশ্রয় দেয় না। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে ‘লা তুফসিদুল ফীল আরদ্’ অর্থাৎ যমীনে অশান্তি সৃষ্টি করো না। কুরআন মজীদে বলা হয়েছে, একজন মানুষকে হত্যা করলে সে যেন দুনিয়ার সব মানুষকে হত্যা করল, আর কেউ কারো প্রাণ রক্ষা করলে সে যেন সকল মানুষের প্রাণ রক্ষা করল। (সূরা মায়িদা : আয়াত ৩১) এবারকার ঈদ-উল-ফিতরের মাত্র ছয় দিন আগে ঢাকার গুলশান এলাকার হলি আর্টিজান বেকারি নামের রেস্তরাঁয় এশার ওয়াক্তে কয়েকজন অস্ত্রধারী প্রবেশ করে বেশকিছু নরনারীকে হত্যা করে। এটা যে কত বড় অন্যায় ও পাপের কাজ তা ভাষায় ব্যক্ত করা কঠিন। আর ঈদের দিনে শোলাকিয়া ঈদগাহে বোমা মেরে ঈদের জামাত বানচাল করার অপচেষ্টা যারা করে তারা কারা তা বের করা জরুরী। ইসলামের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে প্রিয়নবী (সা)’র সময়েই মক্কার কাফির মুশরিকরা যেমন ইসলামের শত্রু হয়ে দাঁড়ায় তেমনি মদীনার ইয়াহুদী ও মুনাফিকরা যৌথভাবে ইসলামের ক্ষতি সাধনে ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে। মুখ্য শত্রুতে পরিণত হয় ইয়াহুদীরা। খোলাফায়ে রাশেদীন আমলে ইয়াহুদী চক্র সাংগঠনিক রূপ লাভ করে। বিশেষ করে হযরত উসমান যন্নুরাইন রাদি আল্লাহু তাআলা আনহুর আমলে আবদুল্লাহ ইবনে সাবা নামের এক ইয়াহুদী ইসলাম গ্রহণ করে মুসলিমদের সঙ্গে একাত্ম হবার লেবাস ধারণ করে। মুসলিমগণ তার ইসলামে দাখিল হবার রহস্য টের পেল না। সে সংগোপনে বিভিন্ন প্রদেশে গিয়ে কিছু লোককে তার দলে এনে খলীফা হযরত উসমান রাদি আল্লাহু তাআলা আনহুকে উৎখাত করার ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে এবং হজের মৌসুমে রাজধানী মদীনা মনওয়ারায় কয়েক হাজার বিদ্রোহীসহ প্রবেশ করে হত্যা করে। ইয়েমেনের সানাতগর অধিবাসী এই ইবনে সাবাই খারেজি সম্প্রদায় গড়ে তুলেছিল। এই খারেজীদের সেøাগান ছিল লা হুকুম ইল্লাল্লাহু অর্থাৎ আল্লাহর আইন ছাড়া কোন আইন মানি না। এই খারিজীরা আমীরুল মু’মিনীন হযরত আলী করমাল্লাহু ওয়াজহাহুর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাকে কাফির হয়ে যাওয়ার ফতোয়া জারি করে এবং তাকে হত্যা করার জন্য আবদুর রহমান ইবনে মালজুম নামে এক আততায়ীকে কুফা প্রেরণ করে। ইবনে মালজুম রমাদান মাসে কুফার কেন্দ্রীয় মসজিদে গোপনে ওঁৎ পেতে থাকে এবং ফজরের সালাতে রত অবস্থায় হযরত আলী করমাল্লাহু ওয়াজহাহুকে বিষাক্ত তলোয়ারের আঘাতে হত্যা করে। এই খারেজীরাই কারবালার ঘটনার পেছনের শক্তি ছিল এমনকি ক্রুসেডের ঘটনার উসকানিদাতা ছিল ইয়াহুদী চক্র। আল্লাহর আইন ছাড়া কোন আইন মানি না এই আওয়াজ এখনও বিদ্যমান। আমাদের ভাবতে হবে ইয়াহুদীরা তাদের বিষাক্ত ছোবল সুযোগ পেলেই মারতে দ্বিধাবোধ করে না। আমাদের দেশে, তিন লাখ মসজিদের এই দেশে, পীর ওলির এই দেশে, ৯০ ভাগ মুসলিমের এই দেশে মহান মুক্তিযুদ্ধ দ্বারা অর্জিত এই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ কোন অশুভ শক্তি ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে তা বের করা অবশ্য কর্তব্য। ওলী আল্লাহর বাংলাদেশ, শহীদ-গাজীর বাংলাদেশ/রহম করো, রহম করো, রহম করো আল্লাহ। লেখক : পীর সাহেব, দ্বারীয়াপুর শরীফ উপদেষ্টা, ইন্সটিটিউট অব হযরত মুহম্মদ (সা.) সাবেক পরিচালক, ইসলামী ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ
×