ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কার্গো নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে বড় বাধা রাজনৈতিক ॥ মেনন

প্রকাশিত: ০৬:২১, ১৩ জুলাই ২০১৬

কার্গো নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে বড় বাধা রাজনৈতিক ॥ মেনন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গুলশান ও শোলাকিয়া হামলায় আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের যোগসূত্র রয়েছে। এ হামলা দেশের জন্য বড় ধরনের দুর্যোগ। এতদিন যারা এটিকে আন্তর্জাতিক করতে চেয়েছিল, তারা একটু হলেও পেরেছে। এ ঘটনার ফলে আন্তর্জাতিকভাবে চাপ আসতে থাকবে। বর্তমান বিপর্যয় কাটিয়ে উঠার চেষ্টা চলছে। তবে এলিট শ্রেণীর পরিবারের সন্তানেরা জঙ্গী হামলায় অংশ নিচ্ছে। এটি খুবই দুঃখজনক। আর যেন এসব ঘটনা না ঘটে সেদিকে প্রতিটি পরিবারকে নজর দিতে হবে। মঙ্গলবার সিভিল এভিয়েশন সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্যই প্রকাশ করেছেন বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। এ সময় তিনি শোলাকিয়া ও গুলশান হত্যাকা-ের পর দেশের বিমানবন্দরগুলোতে নেয়া নিরাপত্তা পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করে বলেন- বিদেশীদের প্রতিবেদনেও ভাল বলা হচ্ছে। তারপরও কার্গো নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজনৈতিক কারণ। তিনি বলেন, আমরা জিরো টলারেন্সে আছি। আমাদের সকলের সামাজিক দায়িত্ব রয়েছে ভবিষ্যত প্রজন্মের দিকে লক্ষ্য রাখা যাতে তারা পথভ্রষ্ট না হয়। আমাদের গোয়েন্দা বাহিনী থাকলেও নিজেদের সচেতন থাকতে হবে। আপনার ও পাশের বাড়িতে কি হচ্ছে সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। হামলার ঘটনায় বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ও ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ুয়া উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানের পাশাপাশি মাদ্রাসার স্টুডেন্টরাও রয়েছে। তারা সমন্বয় করে কাজ করছে। তাই দেশের ভবিষ্যত যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য সামাজিক দায়িত্ববোধের কথা বলা হচ্ছে। মেনন বলেন, আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ আমাদের বিমানবন্দরকে অনিরাপদ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। লন্ডনের ফ্লাইট বন্ধের কথাও বলেছিল। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। লন্ডনের ফ্লাইট যাতে সঠিকভাবে যায় তা নিশ্চিত করা হয়েছে। গত এপ্রিল মাসে এ ফ্লাইটের সম্পূর্ণ দায়িত্ব বাংলাদেশীদের হাতে এসেছে। অস্ট্রেলিয়া কার্গো চলাচল বন্ধ করেছিল। এখন চালু করেছে। তবে থার্ড কান্ট্রি হিসেবে। হঠাৎ করে জার্মানি সিভিল এভিয়েশন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা দিয়ে কার্গো চলাচল বন্ধ করে দেয়। অথচ পরে রিপোর্ট আসে আমাদের নিরাপত্তা যথেষ্ট রয়েছে। তাই বলছি সিদ্ধান্তগুলো রাজনৈতিক। এ ব্যাপারে ৭টি দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা হবে। আসলে যাদের দেশে গোলাগুলি হচ্ছে তারাই আমাদের দেশের ঘটনাগুলোকে বড় করার চেষ্টা করছে। এর থেকে আমাদের র‌্যাব-ডিজিএফআইসহ অন্যান্য সংস্থাই ভাল। শোলাকিয়ার ঘটনায় গোয়েন্দা তথ্য ছিল। এজন্য এত সিকিউরিটি নেয়া হয়েছিল। তাই হামলাকারীরা মাঠের ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। ভেতরে প্রবেশ করলে আরও অনেকে মারা যেতে পারতেন। রেড লাইন সিকিউরিটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সিকিউরিটির জন্য রেড লাইনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। রেডলাইন গ্রাউন্ড সিকিউরিটির ৬৮ জন, সুপারভাইজার হিসেবে ৫ জন, কার্গো অপারেটর ক্লিয়ার ৪৯ জন, সিনিয়র কার্গো অপারেটর ৮ জন, ইটিবি অপারেটর ১৫ জন, এয়ারপোর্ট সিকিউরিটি ম্যানেজার ১৯ জন এবং টিওটি ৬ জন, হোল ব্যাগেজ ক্লিনিংয়ে ৬ জন, কার্গো অপারেটিভ বিমানের কর্মী ২৫ জনসহ মোট ১৭৬ জনকে ট্রেনিং প্রদান করেছে। শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদারে মার্চের শেষ সপ্তাহে যুক্তরাজ্যের পরামর্শ মেনে তাদের প্রতিষ্ঠান ‘রেডলাইন এভিয়েশন সিকিউরিটিকে নিরাপত্তার দায়িত্ব দেয়া হয় । এর মধ্যে মে মাসে শাহজালাল বিমানবন্দর পায় ‘আরএ-৩’ (ইইউ এভিয়েশন সিকিউরিটি ভ্যালিডেটেড রেগুলেটড এজেন্ট) মর্যাদা, যার ফলে বাংলাদেশ থেকে তৃতীয় দেশ ঘুরে ফের যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ায় পণ্যবাহী বিমান চলাচেলের সুযোগের কথা এর আগে মন্ত্রী জানিয়েছিলেন। সেক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ায় কার্গো যেতে তৃতীয় দেশে রি-স্ক্রিনিং করাতে হবে, যুক্তরাজ্যের ক্ষেত্রে তার প্রয়োজন হবে না। তিনটি দেশে সরাসরি কার্গো পরিবহন ফের সচল করতে কূটনৈতিক তৎপরতার কথা তুলে ধরে বিমানমন্ত্রী বলেন, আজ (মঙ্গলবার) সাতটি দেশের এম্বাসেডরদের সঙ্গে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত একটি কমিটি আলোচনায় বসবে। সেখানে যাবতীয় শর্ত পূরণের পরও কেন সরাসরি কার্গো পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলো সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হবে। তাদের জানাব, তোমরা আমাদের আরএ-৩ দিয়েছ। জার্মানির বেসামরিক বিমান সংস্থা লুফথানসা এয়ারলাইনসের কর্মকর্তারাও এসে নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছে। তারপরও তোমরা কেন এটা বন্ধ করে রেখেছ? জনকণ্ঠের এক প্রশ্নের জবাবে মেনন বলেন- সাম্প্রতিক জঙ্গী হামলার ঘটনাগুলোকে তারা নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতার উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরার আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি দেশের সমস্ত ডমেস্টিক এয়ারপোর্টের নিরাপত্তাও জোরদার করা হয়েছে। আমরা বিমানবন্দরগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করেছি। এখানে আমরা রেডএলার্ট বলি না। তার একটা অন্য অর্থ রয়েছে। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেনÑ মন্ত্রণালয়ের সচিব গোলাম ফারুক, সিএএবির চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এহসানুল গনি চৌধুরী, সদস্য (প্রশাসন) সাহিদুর রহমান, সদস্য (অর্থ) মিজানুর রহমান, সিএএবির (অপারেশন) এয়ার কমোডর মোস্তাফিজুর রহমান, শাহজালালের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন জাকির হাসান প্রমুখ।
×