ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পিস স্কুল ও পিস পাবলিকেশন নিষিদ্ধের দাবি

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১২ জুলাই ২০১৬

পিস স্কুল ও পিস পাবলিকেশন নিষিদ্ধের দাবি

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ জঙ্গীবাদে উৎসাহ যোগানোর অভিযোগের বিতর্কিত বক্তা জাকির নায়েকের পিস টিভির ডাউন লিংকের অনুমতি বাতিল করেছে সরকার। সোমবার তথ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। ডাউন লিংকের অনুমতি বাতিল করায় সারাদেশে এ টেলিভিশনের সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছেন কেবল অপারেটররা। অনলাইন ও সোশ্যাল মিডিয়ায়ও বন্ধ করা হচ্ছে এ টিভির সম্প্রচার। এদিকে জাকির নায়েকের ‘পিস’ শব্দ ব্যবহার করে জামায়াত-শিবিরের চালানো ‘পিস স্কুল’ ও ‘পিস পাবলিকেশন’ নিষিদ্ধের দাবি উঠেছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পিস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও পিস স্কুল এ্যান্ড কলেজ জামায়াতের আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা ও রাজনৈতিক আদর্শে পরিচালিত হচ্ছে বলে প্রমাণ পেয়েছে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাও। দেশের বিভিন্ন ইসলামী দল ও সংগঠনের নেতৃবৃন্দ পিস টিভি বন্ধে সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন, দেশের বিভিন্ন জেলায় পিস শব্দ ব্যবহার করে অসংখ্য স্কুল ও কলেজ পরিচালনা করছে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবির, যেখানে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের অনুমোদনের বাইরে জামায়াতের দলীয় আদর্শের পাঠ্যবই পড়ানো হয়। এসব স্কুলের পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। পিস পাবলিকেশনও চালাচ্ছে এ গোষ্ঠী। তাই শুধু পিস টিভি বন্ধ করলেই চলবে না; পিস পাবলিকেশন, পিস স্কুল ও কলেজ বন্ধ করাসহ ওদের পৃষ্ঠপোষক এবং মতাদর্শ লালনকারীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে না পারলে দেশকে জঙ্গীবাদমুক্ত করা সম্ভব হবে না। এর আগে শনিবার ধর্ম প্রচারের নামে জঙ্গীবাদী কর্মকা-ে উস্কানি দেয়ার অভিযোগের প্রেক্ষাপটে জাকির নায়েকের পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ করে ভারত। ভারতে জাকির নায়েককে গ্রেফতারেরও দাবি তুলেছেন দেশটির মুসলিম নেতারা। ওই দিনই বাংলাদেশেও পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। সে অনুসারে রবিবার আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশে এ টিভির সম্প্রচার বন্ধের সিদ্ধান্তের পর সোমবার পিস টিভির ডাউন লিংকের অনুমতি বাতিল করে তথ্য মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, যার অনুলিপি পাঠানো হয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ও বিটিআরসিতে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, মন্ত্রিসভা কমিটির সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ডাউন লিংকের শর্তভঙ্গ করায় বিদেশী ফ্রি-টু-এয়ার টিভি চ্যানেল পিস টিভির ডাউন লিংকের অনুমতি বাতিল করা হলো। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের ভেতরে পিস টিভির সব ধরনের সম্প্রচার বন্ধের ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, তথ্য অধিদফতর, বিটিভি ও কেবল অপারেটরদের সংগঠন কোয়াবকেও পাঠানো হয়েছে এ প্রজ্ঞাপনের অনুলিপি। জাকির নায়েককে ঘিরে বিতর্ক বহু দিনের। জঙ্গীবাদের প্রতি তার সমর্থনসূচক বক্তব্য যেমন সমালোচিত, তেমনি সৌদি আরবের পৃষ্ঠপোষকতায় ওহাবি মতবাদ প্রচারকারী হিসেবে তাকে সন্দেহের চোখে দেখেন অনেকে। তবে জানা গেছে, কেবল টিভি সম্প্রচার বন্ধ নয়, অনলাইন ও সোশ্যাল মিডিয়ায়ও সম্প্রচার বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম জানিয়েছেন, শীঘ্রই টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিটিআরসির চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বলেছেন, নির্দেশনা পাওয়ামাত্র অনলাইনে পিস টিভির লাইভ, ইউটিউব বা ফেসবুকের ইউআরএল নির্দিষ্ট করে বন্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইউটিউব ও ফেসবুকে থাকা পিস টিভির সকল কনটেন্টের ইউআরএল চিহ্নিত করা হচ্ছে। এ ইউআরএলগুলো পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করা হবে। নির্দেশনা আমাদের কাছে এসেছে। টিভিতে সম্প্রচার বন্ধ হলেও ইন্টারনেটে বেশ কয়েকটি সাইটে এ টিভি লাইভ সম্প্রচার করে আসছিল। এছাড়া ইউটিউবেও এ টিভির লাইভ সম্প্রচার হয়, রয়েছে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ভিডিও। ফেসবুকে এ টিভির অসংখ্যা পেজ রয়েছে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী বাংলাদেশের ভেতরে পিস টিভির সব ধরনের সম্প্রচার বন্ধ করার কথা। এদিকে জাকির নায়েকের ‘পিস’ শব্দ ব্যবহার করে জামায়াত-শিবিরের চালানো ‘পিস স্কুল’ ও ‘পিস পাবলিকেশন’ নিষিদ্ধের দাবি তুলেছেন দেশের বিভিন্ন ইসলামী দল ও সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। তারা বলেছেন, দেশের বিভিন্ন জেলায় পিস শব্দ ব্যবহার করে অসংখ্য স্কুল ও কলেজ পরিচালনা করছে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবির, যেখানে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের অনুমোদনের বাইরে জামায়াতের দলীয় আদর্শের পাঠ্যবই পড়ানো হয়। বাংলাদেশ থেকে যেসব আলোচক পিস টিভির অনুষ্ঠানে গিয়ে জঙ্গীবাদের পক্ষে কথা বলেছেন তাদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে। পিস পাবলিকেশন ও পিস স্কুলও নিষিদ্ধ করতে হবে। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত বাংলাদেশের নির্বাহী চেয়ারম্যান আল্লামা অধ্যক্ষ শেখ আব্দুল করিম সিরাজনগরী ও নির্বাহী মহাসচিব আল্লামা মাসউদ হোসাইন আল কাদেরী এক বিবৃতিতে বলেছেন, এখনও জাকির নায়েকের হাজার হাজার জঙ্গীবাদের উস্কানিমূলক বক্তব্য ইউটিউবিতে ছড়িয়ে আছে। এগুলোকে ইউটিউব থেকে অপসারণসহ পিস পাবলিকেশন ও পিস স্কুল ও কলেজ বন্ধ করা অপরিহার্য। বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান আল্লামা এমএ মান্নান বলেছেন, শুধু পিস টিভি বন্ধ করলেই চলবে না; পিস পাবলিকেশন, পিস স্কুল ও কলেজ বন্ধ করাসহ ওদের পৃষ্ঠপোষক এবং মতাদর্শ লালনকারীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে না পারলে দেশকে জঙ্গীবাদমুক্ত করা সম্ভব হবে না। নেতৃবৃন্দ আরও বলেছেন, পিস পাবলিকেশন ও পিস স্কুলের মাধ্যমে হাজার হাজার নিবরাস ইসলাম আর রোহান তৈরি করা হচ্ছে বাংলাদেশকে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান বানানোর জন্য। তাই পিস টিভির দেশদ্রোহী আলোচকগংদের গ্রেফতার এবং পিস পাবলিকেশন ও পিস স্কুল নিষিদ্ধ করতে হবে। জানা গেছে, দেশের ছয়টি জেলায় পরিচালিত ২৭টি পিস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এ্যান্ড কলেজ জামায়াতের আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা ও রাজনৈতিক আদর্শে পরিচালিত হচ্ছে বলে ইতোমধ্যেই প্রমাণ পেয়েছে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা। ‘পিস’ শব্দটি ব্যবহার করে ভিন্ন ভিন্ন নামে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের শতাধিক স্কুল পরিচালিত হচ্ছে, যেখানে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের অনুমোদনের বাইরে জামায়াতের দলীয় আদর্শের পাঠ্যবই পড়ানো হয়। এসব স্কুলের পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। আবার কোন কোন স্কুল পরিচালনা পর্ষদে চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকরাও রয়েছেন। ঢাকা, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, গাজীপুর, নোয়াখালী, ফেনীসহ বিভিন্ন জেলায় নামে-বেনামে পরিচালিত স্কুলগুলোকে জামায়াত-শিবির সাংগঠনিক কাজে ব্যবহার করছে সন্দেহ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। পিস স্কুলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জামায়াত-শিবিরের নেতা ও জড়িত সরকারী কর্মকর্তাদের ওপর নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে এতে। এছাড়া স্কুলের আয়ের উৎস ও ব্যয় খতিয়ে দেখতেও বলা হয়েছে। স্থানীয় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলার কথাও আছে প্রতিবেদনে। এছাড়া প্রতিবেদনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের এসব প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করার জন্য দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির মাধ্যমে নির্দেশ দেয়ার সুপারিশও আছে। প্রতিবেদনে পিস স্কুলের শিক্ষার্থীরা উগ্র ধর্মীয় মতবাদে দীক্ষিত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, কোন কোন পিস স্কুল পরিচালিত হয় ‘ইনভাইটস পিস লিমিটেড’ নামের একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। এর চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ও ঢাকা মহানগর জামায়াতের রোকন আবু জাফর মুহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ। ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক স্কুল কার্যক্রম সম্পাদক ও বর্তমানে ঢাকা মহানগর জামায়াতের রোকন আলমগীর মোঃ ইউনুস। পিস স্কুলে কেন্দ্রীয় জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য ড. আহসান হাবীব ইমরোজ সম্পাদিত বাংলা বই, সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদুদী ও মতিউর রহমান নিজামীর লেখা সাংগঠনিক বই পড়ানো হয়।
×