ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সবুজ সবজি ক্ষেতেই পেকে লাল

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ১২ জুলাই ২০১৬

সবুজ সবজি ক্ষেতেই পেকে লাল

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ সবজির বাম্পার ফলনই এবার কপাল পুড়েছে কৃষকের। পানির দামেও বিক্রি করতে না পেরে অনেক কৃষকের সবজি এখন ক্ষেতেই পেকে লাল হয়ে গেছে। ক্ষেতে পাইকারি সবজির দাম এতটাই কমে গেছে যে, তা বিক্রি করে শ্রমিকের মূল্যই জুটছে না। ফলে অনেক কৃষক ক্ষেত থেকে পটল, করলা, ঝিঙ্গা ও কাঁচামরিচ তুলছেন না। ফলে ক্ষেতে এসব সবুজ সবজি পেকে ক্রমেই লাল বর্ণ ধারণ করে খসে পড়ছে। জেলার পবা ও মোহনপুরের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে এসব দৃশ্য দেখা গেছে। পবা ও মোহনপুরের স্থানীয় পাইকারি বাজারগুলোয় এখন করলা কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫ টাকা, পটল ৭ থেকে ৮ টাকা আর কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা দরে। কৃষকরা জানান, এবার সবজিতে রোগবালাই না থাকায় এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। উৎপাদনের চেয়ে ক্রেতা কম থাকায় দাম কমেছে বলে জানান কৃষক, ব্যবসায়ী ও কৃষি সংশ্লিষ্টরা। তবে যারা আগাম ফসল তুলেছেন তারা কিছুটা দাম পেয়েছেন। রাজশাহীর অন্যতম পাইকারি সবজির মোকাম পবার নওহাটা বাজার। এ বাজার থেকে রাজশাহী শহরের সাহেব বাজারের দূরত্ব প্রায় ৮ কিলোমিটার। অথচ এখানে খুচরা বাজারে সবজির দামে তফাত অনেক। অন্তত দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে এসব সবজি। পবার কৃষক আক্কাস আলী বিশ্বাস গত রবিবার দুই মণ কাঁচামরিচ বিক্রি করতে এনেছেন স্থানীয় পারিলার পাইকারি বাজারে। দুই-তিনজন ক্রেতা মরিচের দাম প্রতি কেজি ৮ থেকে ১০ টাকা বলছেন। শিয়ালবেড় গ্রামের কৃষক আকবর আলী একই বাজারে নিয়ে এসেছেন লাউ। প্রতিটি লাউ মাত্র তিন থেকে পাঁচ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মোহনপুরের বেড়াবাড়ি গ্রামের কৃষক ইয়াদ আলী নিয়ে এসেছেন করলা। পাইকারি বাজারে ক্রেতারা প্রতি কেজি দাম বলছেন মাত্র ৫ টাকা। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত তারা ওই দামেই সবজি বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সবজির ভাল ফলন হয়েছে কিন্তু ক্রেতা কম। ফলে লোকসান গুনতে হচ্ছে কৃষকদের। দাম কম হওয়ায় অনেকে ক্ষেত থেকে সবজি তুলছেন না। আবার অনেকে পটল, তরাই, লাউ গরুকে খাওয়াচ্ছেন। মোহনপুর উপজেলার মৌগাছি গ্রামের চাষী ইউসুফ আলী জানান, জমি থেকে সবজি তুলতে একজন শ্রমিককে ২শ’ থেকে ৩শ’ টাকা দিতে হয়। এরপরও আছে পরিবহন খরচ। অথচ একমণ পটল বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১৪০ টাকায়, যা তিন মণ পটল বিক্রি করে একজন শ্রমিকের দামের সমান। ফলে অনেকেই পটল না তুলে ক্ষেতেই নষ্ট করছেন। ক্ষেতেই পেকে সবুজ পটল লাল হয়ে ঝরে পড়ছে।
×