ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীতে ট্রেন-বাসের টিকেট কারসাজি

কর্মস্থলমুখী মানুষের ॥ বিড়ম্বনা চরমে

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ১১ জুলাই ২০১৬

কর্মস্থলমুখী মানুষের ॥ বিড়ম্বনা চরমে

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ ঈদের পর রাজশাহী থেকে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় বাস ও ট্রেনে ফিরতি টিকেট নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন অনেকে। ঈদের ২০ দিন আগেও টিকেট নিশ্চিত করেও সিন্ডিকেটের কারণে অনেকে হাতে পাননি বাসের টিকেট। রাজশাহী থেকে চলাচলকারী প্রায় সব বাসের একই অবস্থা। ফলে ছুটি শেষেও অনেকে ফিরতে পারেননি গন্তব্যে। বাধ্য হয়ে অনেকে আন্তঃজেলা রুটে চলাচলকারী বাসে চরম বিড়ম্বনা ও ঝুঁকি নিয়েই গন্তব্যে পৌঁছেছেন। রাজশাহী-ঢাকাগামী দেশ ট্রাভেলসসহ কয়েকটি বিলাসবহুল কোচ সার্ভিসের বিরুদ্ধে এবার টিকেট কালোবাজারির অভিযোগ উঠেছে। পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ করতে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা, ঈদের ছুটি শেষে আবার কর্মস্থলে ফেরার টানকে পুঁজি করে টিকেট সিন্ডিকেট এবার বিড়ম্বনায় ফেলেছে যাত্রীদের। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন অনেকে। অনেকে বেশি মূল্য দিয়ে কোন রকমে টিকেট পেয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উত্তরের বিভাগীয় শহর রাজশাহী থেকে বাসে রাজধানী ঢাকা ফোরার জন্য এরই মধ্যে এক সপ্তাহের আগাম টিকেট ‘হাওয়া’ হয়ে গেছে। কাউন্টার ঘুরেও ফিরতি টিকেট পাচ্ছেন না যাত্রীরা। তবে আসল ঘটনা হচ্ছে টিকিট আছে, সেগুলো বিক্রিও হচ্ছে। কিন্তু প্রকাশ্যে নয়, গোপনে। অনেকটা বাড়তি দামে। সেক্ষেত্রে ৪৫০ টাকার সাধারণ টিকেট বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৭০০ টাকায়। আর ৯০০ টাকার শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত টিকেট বিক্রি হচ্ছে কোন ক্ষেত্রে এক হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত। এদিকে, ট্রেনের টিকেট না থাকায় গ্যাঁড়াকলে পড়ে অনেককে বাসে যাতায়াতের জন্য বাড়তি ভাড়াই গুনতে হচ্ছে। রাজশাহী নগরীর শিরোইল বাস টার্মিনাল এলাকায় অবস্থিত হানিফ কাউন্টার থেকে বেরিয়ে রবিবার এমনই অভিযোগ করেছেন অনেকে। ফিরতি টিকেট কাটতে গিয়ে ঘাম ঝরেছে । অবশেষে টিকিট পেয়েছেন। তবে ৪৫০ টাকার টিকেটের জন্য ৫৫০ টাকা দিতে হয়েছে। ঈদের ২০ দিন আগে রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী দেশ ট্রাভেলসের জন্য তিনটি টিকেট নিশ্চিত করেছিলেন ঢাকায় কর্মরত সামশুল ইসলাম। শেষ দিনে টিকেট নিতে এসে তিনি জানতে পারেন তার টিকেট বিক্রি হয়ে গেছে। এতে তিনি পরিবার নিয়ে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েন। রাজশাহী থেকে ঢাকার কর্মস্থলমুখী মানুষগুলোর এখন একই হাল। ফিরতি টিকেট না পেয়ে নানান দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে রাজধানী ফিরছেন কর্মজীবীরা। অনেকে বেশি দাম দিয়েও টিকেট নামের সোনার হরিণ পাচ্ছেন না। আবার কেউ কেউ টাকা দিয়ে স্ত্রী, সন্তান নিয়ে উঠছেন ছাদে। শিরোইল বাস টার্মিনালে গার্মেন্টসকর্মী সেলিম আলী জানালেন, আজ যে কোন মূল্যে তাকে ঢাকায় ফিরতেই হবে। না হলে বেতন কাটা পড়বে। কিন্তু বাস কাউন্টারে টিকেট কেনার উপায় নেই। কারণ আগেই বলা হচ্ছে আজ থেকে আরও সাত দিনের কোন ফিরতি টিকেট নেই। তাই স্ত্রী, সন্তান নিয়ে বাসের ছাদে চড়ে বসেছেন। বর্তমানে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, ন্যাশনাল ও দেশ ট্রাভলস, গ্রীন লাইন এবং শ্যামলী পরিবহনসহ বিভিন্ন নামীদামী কোম্পানির বাস কাউন্টারের একই অবস্থা। ভেতরে দাঁড়িয়ে, ইঞ্জিন কাভারে বসে বা ছাদে চড়ে যাওয়া যাচ্ছে কেয়া, মডার্ন, ইসলাম ট্রাভলস, তুহিন ও রাব্বানিসহ বিভিন্ন পরিবহনে। তবে হানিফ কাউন্টারের সহকারী ম্যানেজার শাহীন আহমেদ বাড়তি টাকার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ঈদের ছুটি শেষে পরের সাত দিনের টিকেট আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। অনেকে স্বজনদের মাধ্যমে টিকেট নিয়েছেন। আবার যারা আগে এসেছেন, তারা রাজশাহী নেমেই ফিরতি টিকেট নিয়েছেন। ফলে এখন টিকেটশূন্য। তবে কারও যাত্রা বাতিল হলে ওই টিকেট মিলতে পারে বলে জানান তিনি। দেশ ট্রাভেলসের রাজশাহী কাউন্টারের ম্যানেজার আরিফ হোসেন জানান, মালিকপক্ষ অনেক সময় টিকেট বাতিল করেন। অনেক সময় প্রশাসনের লোকদের টিকেট ব্যবস্থা করে দিতেই টিকেট ক্যানসেল করতে বাধ্য হতে হয়।
×