ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গণভবনে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়

বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদের কোন স্থান নেই ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১০ জুলাই ২০১৬

বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদের কোন স্থান নেই ॥ প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়িকারীদের ‘ইসলামের শত্রু’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছেন, যারা তারাবির নামাজ না পড়ে মানুষ খুন করে কিংবা ঈদের দিন যেখানে ঈদের জামাত হবে তার কাছাকাছি জায়গায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলার মতো জঘন্য-ঘৃণ্য অপরাধ করে থাকে; তারা কখনই ইসলামে বিশ্বাস করে না। আসলে এরা ইসলামের শত্রু। কলেজ অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া নিখোঁজ ছেলেদের সম্পর্কে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে অবহিত করার জন্য অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার তাদের খুঁজে বের করে এবং বাড়িতে ফিরিয়ে নিতে প্রযুক্তিগত সহযোগিতাসহ সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা দেবে। গত বৃহস্পতিবার গণভবনে সর্বস্তরের জনগণের সঙ্গে পবিত্র ঈদ-উল- ফিতরের শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিখোঁজদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে প্রতিটি গ্রাম ও ওয়ার্ডে কমিটি গঠনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, সরকার এ ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেবে। যেসব ছাত্র দীর্ঘদিন অনুপস্থিত তাদের নাম-ছবিসহ সার্বিক তথ্য সম্পর্কেও পুলিশকে অবহিত করতে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতিও আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নিখোঁজ ছেলেদের নাম পুলিশের কাছে প্রকাশের সময় অভিভাবকরা তাদের নিজেদের পরিচয় গোপন রাখতে পারেন। নিখোঁজ হলে শুধু জিডি করে বসে থাকবেন না। ছবিসহ তথ্য প্রকাশ করুন। তাদের চিকিৎসা থেকে শুরু করে যা লাগে সে ব্যবস্থা আমরা করতে পারব। প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে দেশের প্রতিটি এলাকায় কমিটি গঠনেরও উদাত্ত আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়কণ্ঠে বলেন, আমরা পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, বাংলাদেশ সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদের স্থান হতে পারে না। সন্ত্রাসবাদকে বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ সমস্যা মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দায়িত্ব কাঁধে নিতে হবে এবং একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, পৃথিবীতে বাংলাদেশ একমাত্র দেশ অতি অল্প সময়ে এখানে সন্ত্রাসীদের খতম করতে পেরেছি। গত সপ্তাহে গুলশানের সন্ত্রাসী হামলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা ধর্মের নামে এ ধরনের কর্মকা- চালিয়ে পবিত্র ধর্ম ইসলামকে কলুষিত করছে, ইসলামের নামে মানুষ হত্যার মতো জঘন্যতম কর্মকা- আর কি হতে পারে? নামাজের সময় নামাজ না পড়ে মসজিদে নববীতে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালিয়ে মানুষ হত্যা করে তারা ইসলামের নামে কোন্ ধরনের ইসলামিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করতে চায়? আসলে তারা ইসলামের শত্রু। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধর্মান্ধরা শরিয়া আইন বাস্তবায়নের দাবি এবং মানুষের তৈরি আইনের বিরোধিতা করে। তাহলে কেন তারা তাদের লক্ষ্য অর্জনে মানুষের তৈরি অস্ত্র, বোমা, প্রযুক্তি ব্যবহার করছে? কেন তারা ফেসবুক ও মোবাইল ব্যবহার করছে? এগুলো তো মানুষেরই তৈরি। ইসলামকে শান্তি ও সৌভ্রাতৃত্বের প্রতীক আখ্যয়িত করে তিনি বলেন, ইসলাম কোন নিরীহ মানুষকে হত্যা বরদাশ্ত করে না; এমনকি অন্য ধর্মের অনুসারীদেরও। একমাত্র আল্লাহই চূড়ান্ত ন্যায়বিচারক এবং তিনি কখনও অন্য কারো হাতে দায়দায়িত্ব প্রদান করেননি। তিনি বলেন, আল্লাহর প্রতি জঙ্গীদের কোন বিশ্বাস নেই। তারা তাদের আল্লাহর চেয়েও শক্তিশালী মনে করে। কাজেই তারা কখনও বেহেশতে যাবে না। তারা দোজখে নিক্ষিপ্ত হবে। আর অন্যদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানারও কোন অধিকার তাদের নেই। কিছু স্থানীয় এবং বিদেশী মানবাধিকার সংস্থার সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, তারা কয়েক বছর কিছু যুবকের নিখোঁজের ব্যাপারে কেবল সরকারকে দোষারোপ করে আসছে। নিখোঁজদের সম্পর্কে সরকারকে সঠিক কোন তথ্য না দিয়ে শুধু সরকারের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। তিনি বলেন, তারা যদি আমাদের সঠিক তথ্য দিত আমরা তাদের উদ্ধারে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতাম। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। অথচ একটি অশুভ শক্তি দেশের সকল সাফল্য ব্যর্থ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি দেশবাসীকে এ ধরনের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সজাগ থাকতে এবং তার সরকারের প্রতি আস্থা রাখার আহ্বান জানান। দেশব্যাপী এলাকায় এলাকায় কমিটি গঠন করে সন্ত্রাসী কর্মকা-ের ঘটনা প্রতিহত করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোন আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী এর সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলে তার দায় তাদের ওপরই বর্তাবে। ইউনিয়ন ও জেলা-উপজেলায় সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কারা বিপথে গেছে, কারা জঙ্গীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সেই তথ্য দেন। আমরা দেশবাসীর পাশে আছি। গণভবনের প্রবেশপথ ঈদের দিন সকাল সাড়ে ৯টায় খুলে দেয়া হলে ঈদের নামাজের পর সর্বস্তরের জনগণ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করতে গণভবনে প্রবেশ করে। এ উপলক্ষে গণভবনের বিশাল আঙ্গিনা বর্ণাঢ্য সাজে সজ্জিত করা হয়। শুরুতেই সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও মন্ত্রিসভার সদস্যরা ফুলের তোড়া উপহার দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধা, আওয়ামী লীগ সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন পেশাজীবী ও ব্যবসায়ী সংগঠন এবং ভিক্ষুক ও দুস্থ জনগণ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, শে খ ফজলুল করিম সেলিম, এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, ড. মশিউর রহমান, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, আওয়ামী লীগ নেতা ডাঃ দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, এ কে এম রহমতুল্লাহ এমপি, ফারুক খান এমপি এ সময় উপস্থিত ছিলেন। পরে প্রধানমন্ত্রী সুপ্রীমকোর্টের বিচারক, পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তা, বন্ধুপ্রতিম বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ঈদের আগের দিন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা প্রশাসকগণ স্ব স্ব উপজেলা ও জেলার ঈদ জামাত ও রথযাত্রার জন্য ন্যূনতম একটি করে ভলান্টিয়ার টিম গঠন করেন। এই টিম শৃঙ্খলা রক্ষায় ভূমিকা পালন করে। এছাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা প্রশাসকগণ ঈদ জামাত ও রথযাত্রার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে আপডেট অবহিত করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুসলমানদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে ফুল, ফল এবং মিষ্টি পাঠিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। ঈদের দিন রাজধানীর মোহাম্মদপুরের গজনবি রোড়ে মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ার-১ এ বসবাসকারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তার শুভেচ্ছার নির্দশন স্বরূপ ফুল, ফল ও মিষ্টি পাঠান। প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস)-১ জাহাঙ্গীর আলম, এপিএস-২ এ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান শেখর এবং প্রটোকল অফিসার খুরশীদ উল আলম বিকেলে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে এ সকল সামগ্রী পৌঁছে দেন। মুক্তিযোদ্ধারা স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, ঈদ এবং পহেলা বৈশাখসহ প্রতিটি অনুষ্ঠানে তাদের স্মরণ করায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান এবং তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তারা তাদের পুনর্বাসনের জন্য মোহাম্মদপুরে একটি বহুতলবিশিষ্ট আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ার-১ নির্মাণ করায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য এবং দীর্ঘায়ু কামনা করেন। উল্লেখ্য, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের ৮০টি পরিবার এই ভবনে বাস করছে। নিহত ২ পুলিশ কর্মকর্তার পরিবার এবং আহত ২৬ পুলিশ সদস্যকে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে গুলশানের সন্ত্রাসী হামলায় নিহত দুই পুলিশ অফিসারের পরিবার এবং ওই ঘটনায় আহত ২৬ পুলিশ সদস্যকে ঈদ উপহার হিসাবে ৩২ লাখ টাকা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন নিহত দুই পুলিশ কর্মকর্তার পরিবার এবং আহত পুলিশ সদস্যের কাছে ঈদের উপহার তুলে দেন। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১ জুলাই রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি রেস্টুরেন্টে হামলার ঘটনায় নিহত দুই পুলিশ কর্মকর্তাÑ গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল করিম এবং বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ সালাহউদ্দিন খানের পরিবারকে তিন লাখ টাকা করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিবের কাছ থেকে নিহত দুই পুলিশ কর্মকর্তার পরিবারের সদস্যরা ঈদের পোশাক ও খেলনা সামগ্রী গ্রহণ করেন। অন্যদিকে, আহত ২৬ পুলিশ সদস্যের প্রত্যেককে একলাখ টাকা করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
×