ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্ঘটনাপ্রবণ ১৪ স্থানে বসছে ওয়াচটাওয়ার, থাকবে ২০ রেকার

ঈদে সড়ক-মহাসড়কে যানজট নিরসনের উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ২৫ জুন ২০১৬

ঈদে সড়ক-মহাসড়কে যানজট নিরসনের উদ্যোগ

গাফফার খান চৌধুরী ॥ ঈদে ঘরমুখো মানুষকে অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টিসহ সব ধরনের প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা করতে দেশের প্রতিটি আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের হকারদের ছবিসহ তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। পাশাপাশি যানজট কমাতে ঈদের তিন দিন আগ থেকে অতিজরুরী জিনিসপত্র পরিবহনের কাজে নিয়োজিত যানবাহন ছাড়া সব ধরনের মালবাহী বড় গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ঈদে ঢাকা টাঙ্গাইল ছাড়া অন্যান্য মহাসড়কে যানজট তুলনামূলক অনেক কম হবে। সারাদেশের মহাসড়কে অধিক দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থান বিবেচনা করে ১৪ জায়গায় বসানো হচ্ছে ওয়াচ টাওয়ার। দুর্ঘটনায় পড়া যানবাহন দ্রুত সরিয়ে যানজট নিরসনে ২০টি রেকার থাকছে। আগামী ১ জুলাই থেকে সড়ক মহাসড়কে ছিনতাই ও দুর্ঘটনা কমাতে মাঠে নামছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য। দুর্ঘটনা ও যানজট কমাতে নানা উদ্যোগ নেয়ার কথা জানালেন হাইওয়ে পুলিশের প্রধান উপমহাপুলিশ পরিদর্শক মল্লিক ফখরুল ইসলাম। তিনি বলছেন, সারাদেশের মহাসড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ যানজট ও দুর্ঘটনা কমাতে ৩৫ হাইওয়ে থানা এবং ৩৭ পুলিশ ফাঁড়ি কাজ করছে। মোতায়েন করা হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত ফোর্স। আর ঈদের তিন দিন আগে থেকে সহাসড়কে নিত্য পণ্যবাহী যানবাহন, বিশেষ করে ট্রাক ও বড় বড় লরি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যানজট নিরসনে দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থানগুলোতে ওয়াচ টাওয়ার বসানো হচ্ছে। যাতে দুর্ঘটনা বা বিকল হয়ে পড়া যানবাহন সম্পর্কে আগাম তথ্য পেয়ে দ্রুত সমস্যার সমাধান করা যায়। এতে করে যানজট কিছুটা হলেও কমে আসবে। দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থানগুলোতে রেকার স্ট্যান্ডবাই রাখা হচ্ছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ও মেঘনা সেতুতে যানজট হতে পারে। এছাড়া অন্য মহাসড়কগুলোতে যানজট হওয়ার এবার তেমন কোন সম্ভবনা নেই। যাত্রীদের অজ্ঞান পার্টি মলম পার্টির হাত থেকে রক্ষা করতে দেশের সব আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে থাকা হকারদের ছবিসহ তালিকা করা হয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী সিসি ক্যামেরার কার্যক্রমও রাখা হয়েছে। পুলিশের হাইওয়ে বিভাগ থেকে আরও জানা গেছে, সারাদেশে ১১ হাজার ৮০৬ কিলোমিটার মহাসড়ক রয়েছে। প্রতিবারই ঈদে ও বর্ষার সময় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। কিন্তু এবার ভিন্ন চিত্র দেখা যাবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়ক নির্মিত হওয়ায় এবার এই মহাসড়কে যানজট থাকবে না বললেই চলে। একই অবস্থা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কেও। কারণ এ মহাসড়কও চার লেনে উন্নীত হয়েছে। তারপরও মহাসড়কে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কোন যানবাহন বিকল হলে, সামান্য সময়ের জন্য যানজট হতে পারে। বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করতে অত্যন্ত দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থান বিবেচনা করে মহাসড়কের ১৪টি স্থানে সুউচ্চ ওয়াচ টাওয়ার বসানো হচ্ছে। ওয়াচ টাওয়ার থেকে শক্তিশালী বাইনোকুলার দিয়ে অনেক দূরের মহাসড়কের যানবাহনের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হবে। কোন গাড়ি বিকল হলে সঙ্গে সঙ্গে ওয়াচ টাওয়ার থেকে খবর পাঠানো হবে রেকারের দায়িত্বে থাকা পুলিশ টিমকে। সঙ্গে সঙ্গে রেকার ছুটে যাবে। বিকল গাড়ি দ্রুত রাস্তা থেকে সরানো সম্ভব হলে, যানজট তুলনামূলক অনেক কম হবে। এসব রেকার ছাড়াও জেলা পুলিশের রেকার থাকছে। বিকল হয়ে পড়া যানবাহন দ্রুত সরিয়ে নিতে প্রস্তুত রাখা হচ্ছে ২০টি রেকার। এবার ঈদে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানজট হওয়ার আশঙ্কা বেশি। কারণ মহাসড়কটি চারলেনে উন্নীত করার কাজ চলছে। কাজ পুরোপুরি শেষ না হওয়ায় যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হতে পারে। বিশেষ করে ঢাকা থেকে বাইপাইল মহাসড়ক পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে খানাখন্দ রয়েছে। অল্প বৃষ্টিতেই রাস্তায় পানি জমে যায়। আর একটির গাড়ি ওভারটেক করতে পারে না। দুটি গাড়ির একত্রে ওভারটেক করা অসম্ভব। এছাড়া উত্তরবঙ্গের প্রায় সব যানবাহন এই মহাসড়কটি দিয়ে যাতায়াত করে। ফলে রাস্তার তুলনায় যানবাহনের চাপ বেশি। যে কারণে প্রায় প্রতিবছরই এ মহাসড়কটিতে তীব্র যানজট লাগে। এবার কুমিল্লা মেঘনা সেতুতেও যানজট হতে পারে। কারণ বেশ কয়েকটি সড়কের যানবাহন একটি সেতু দিয়ে পার হওয়ার কারণে যানজটটি সৃষ্টি হয়। এজন্য ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ও মেঘনা সেতুতে ধাপে ধাপে যানবাহন চলাচলের জন্য ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। হাইওয়ে পুলিশ বলছে, মহাসড়কে ছিনতাইসহ যেকোন ধরনের অপরাধ দমনে জেলা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, এপিবিএন, র‌্যাব, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনী মাঠে থাকছে। তারা যানবাহন নিয়মমাফিক যাতায়াত করে কিনা তা মনিটরিং করবে। রাতে চলাচলকারী যাত্রীবাহী বাসে হাইওয়ে পুলিশের তরফ থেকে যাত্রীদের ভিডিও ধারণ করে রাখা হবে। গাড়িটি দুর্ঘটনায় পড়লে, যাতে গাড়ি ও যাত্রী সর্ম্পকে তথ্য পাওয়া যায় এজন্যই এমন ব্যবস্থা থাকছে। সাধারণত দ্রুত গতি, অতিরিক্ত যাত্রী, ভাঙ্গাচোরা রাস্তা, খানাখন্দ, পানিতে ডুবে থাকা গর্ত, চালক নেশাগ্রস্ত অবস্থায় যানবাহন চালানোর কারণে অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এছাড়া ছিনতাইকারীদের ধাওয়ার মুখে পড়েও অনেক সময় যানবাহন দুর্ঘটনায় পড়ে থাকে। যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করতে হাইওয়ে পুলিশ স্পিডগান নিয়ে রাস্তায় অবস্থান করবে।
×