ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

জামিনে মুক্ত ৫ শতাধিক জঙ্গী লাপাত্তা, দেশ নিরাপত্তা ঝুঁকিতে!

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২৫ জুন ২০১৬

জামিনে মুক্ত ৫ শতাধিক জঙ্গী লাপাত্তা, দেশ নিরাপত্তা ঝুঁকিতে!

শংকর কুমার দে ॥ দেশের বিভিন্ন কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে ৫ শতাধিক জঙ্গী লাপাত্তা হয়ে গেছে। জঙ্গীবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান চলাকালেও জামিনে মুক্ত হয়েছে অন্তত ১৪ জঙ্গী। অনেক জঙ্গীই আবার নির্ধারিত তারিখে আদালতে হাজিরা দিচ্ছে না। জেএমবি, হুজি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, হিযবুত তাহরীর, শহীদ হামজা ব্রিগেডসহ বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের সদস্য। মাদারীপুরে কলেজ শিক্ষক হত্যাচেষ্টায় হাতেনাতে ধরা পড়া হিযবুত জঙ্গী ফাহিম বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার আগে একবার রাজধানীর উত্তরায় তাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। গ্রেফতারের পর জামিনে মুক্ত হয়ে কলেজ শিক্ষককে টার্গেট কিলিং বা গুপ্তহত্যা চেষ্টার আসামি ফাহিম বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। আবার অনেক জঙ্গীই জামিনে মুক্ত হয়েই লাপাত্তা, কেউ কেউ বিদেশে পালিয়ে গেছে, কেউ আবার অনেকেই গুপ্ত হত্যার মতো তৎপরতায় লিপ্ত। আইনের ফাকফোঁকর গলিয়ে জামিনে মুক্ত হয়ে লাপাত্তা হয়ে যাওয়ার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর(পিপি) দীর্ঘদিন ধরেই একে অপরকে দোষারোপ ও দায়ী করে চলেছে। আদালত, গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে সাঁড়াশি অভিযানের মধ্যেই অনেক জঙ্গী জামিনে মুক্ত হয়ে গেছে। আবার সাঁড়াশি অভিযান চালানো হলেও জামিনে মুক্ত জঙ্গীদের অনেকে গ্রেফতার জালে আটকা পড়েনি। তবে সাঁড়াশি অভিযানের মধ্যে ১৯৪ জঙ্গী সন্দেহে গ্রেফতার হলেও টার্গেট কিলিংয়ের সঙ্গে জড়িত মাত্র ৩ দুর্ধর্ষ জঙ্গী যারা সিøপার সেলের সদস্য তাদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর মধ্যে শরীফ ওরফে মুকুল রানা ও ফাইজুল্লাহ ফাহিম বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। অপর একজন সুমন ওরফে শিহাব গ্রেফতার হওয়ার পর রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ পর্যায়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়ার পর তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। সাঁড়াশি অভিযানের এই সাফল্যের মধ্যেই জঙ্গীরা জামিনে মুক্ত হয়ে যাওয়ার খবর পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। চট্টগ্রামে পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু আক্তারকে হত্যার পর ১০ দিনের সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনার মধ্যেই আইনের ফাঁকফোকরে চিহ্নিত কয়েক জঙ্গী জামিনে বেরিয়ে গেছে। সূত্র মতে, সাঁড়াশি অভিযানের মধ্যেই জামিনে মুক্ত হয়ে গেছে হিযবুত তাহরীরের প্রধান সমন্বয়কারী শেখ ওমর শরীফ, হরকাতুল জিহাদ-হুজি নেতা আবুল কালাম, শহীদ হামজা ব্রিগেডের অর্থদাতা হিসেবে অভিযুক্ত ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানাসহ ১৪ জঙ্গী। এর মধ্যে নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের ৮, জেএমবির ১ ও হরকাতুল জিহাদের ২ জঙ্গী। জঙ্গী কার্যক্রমে অভিযুক্ত শহীদ হামজা ব্রিগেডের আছে ৩ জন। হিযবুত তাহরীরের জামিনে মুক্ত হওয়া সদস্যরা হলো বোয়ালখালীর রায়হানুল ইসলাম ও হাবিবুন্নবী প্রকাশ আশিকুর রহমান, কক্সবাজারের পেকুয়ার আরিফুল ইসলাম ও কুতুবদিয়ার ইফতেখারুল ইসলাম, সীতাকু-ের আব্দুল কাদির, হাটহাজারীর ইসমাইল, জামালপুরের আবুল কালাম এবং চাঁদপুরের শেখ ওমর শরীফ। হুজির সদস্য পাবনার আবদুল্লাহ আল আমিন ও জামালপুরের আবুল কালাম। জেএমবির নীলফামারির আবু হাফিজ। শহীদ হামজা ব্রিগেডের ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা ছাড়াও মোছাম্মৎ রহিমা আক্তার, এনামুল হক জামিনে বেরিয়ে গেছেন বলে জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থা সূত্র জানায়, সারা দেশের কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হওয়া জঙ্গীদের ধরতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে। জামিনে মুক্ত হওয়া অন্তত ৫শতাধিক জঙ্গীর হদিস মিলছে না। জামিনে মুক্ত জঙ্গীরা আদালতে হাজিরা দিচ্ছে না। কোন কোন জঙ্গী দেশের বাইরে পালিয়ে গেছে। আবার কেউ দেশের ভেতরেই ঘাপটি মেরে তৎপরতা চালাচ্ছে। জঙ্গী সংগঠনগুলোর শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা পালিয়ে থেকেও নতুন ফ্রন্ট গঠনে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ জিহাদি গ্রুপ নামের একটি সংগঠনের পক্ষে কাজ করছে নিষিদ্ধ পাঁচটি জঙ্গী সংগঠন। তারা দেশে বড় ধরনের হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। দেশে গত এক দশকে জঙ্গী তৎপরতা নানা ধরনের প্রতিরোধের মুখোমুখি হলেও নির্মূল হয়নি। বরং নতুন নতুন নামে নতুন কৌশল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে জঙ্গীরা। যেসব জঙ্গী জামিনে বেরিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে তার মধ্যে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠনগুলোর সদস্যরাও আছে। এর মধ্যে জেএমবি, হুজি ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, হিযবুত তাহরীর অন্যতম। এসব জঙ্গীর অনেকেই বিদেশের জঙ্গী সংগঠনসহ প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। এর মধ্যে নিষিদ্ধ ঘোষিত হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজিবি), জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), হিযবুত তাহরীর বাংলাদেশ, জাগগ্র মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমজেবি) ও শাহাদৎ-ই আল হিকমা নিষিদ্ধ হওয়ার পরও তারা তৎপরতা চালাচ্ছে কখনও গোপনে আবার কখনও প্রকাশ্যেই। গোপন আস্তানা গেড়ে তারা তৎপরতা চালাচ্ছে। জঙ্গী তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে আনসারুল্লাহ বাংলাটিম নামের আরেকটি সংগঠনও। হিযবুত তাহরীর নিষিদ্ধ হলেও প্রায়ই তারা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মাঝেমধ্যেই রাজধানীসহ বিভিন্ন মহানগর এলাকায় ঝটিকা মিছিল করছে হিযবুত তাহরীর। বড় ধরনের কোন নাশকতামূলক কার্যক্রম না চালালেও তাদের উদ্দেশ্য সে রকম বলেই দাবি করছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। গোয়েন্দা সূত্র মতে, জেএমবি ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারা দেশের ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা হামলা চালিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এরপর দফায় দফায় দেশের বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলা চালিয়ে আইনজীবী, বিচারক, পুলিশ, সরকারী-বেসরকারী কর্মকর্তাসহ ৩৩ জনকে হত্যা করে জেএমবি। ঝালকাঠির দুই বিচারক হত্যার ঘটনায় শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাইসহ শীর্ষ পর্যায়ের ছয় জঙ্গী নেতার ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর কিছুদিন জেএমবির তৎপরতা কম ছিল। তখন জেএমবির অনেক সদস্যকে গ্রেফতারও করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে অনেকেই সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাবে খালাস পায়। অনেকে জামিন পায়। তারা কারাগার থেকে ফিরে গিয়ে আবার সংগঠিত হতে থাকে। সম্প্রতি জেএমবির তৎপরতা আবার বেড়েছে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের জনসভায় বোমা হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় হুজি নেতা মুফতি হান্নানসহ সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় ১৪ নেতা কারাগারে আছেন। তারা গ্রেফতার হওয়ার পর হরকাতুল জিহাদের কার্যক্রম কিছুটা স্তিমিত হয়ে পড়ে। সারা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা হুজি নেতাকর্মীরা সংগঠিত হয়ে আবার তাদের তৎপরতা বাড়িয়েছে। কয়েক দিন আগে বোমা তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জামসহ ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে ছয়জনকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গত কয়েক মাসে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের বেশ কয়েক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয় জিহাদ সংক্রান্ত বই, বোমা তৈরির সরঞ্জামসহ। গোয়েন্দা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জেএমজেবি, শাহাদৎ-ই-আল হিকমাসহ ছোট কিছু সংগঠনের নেতকর্মীরা প্রকাশ্যে না এলেও তাদের গোপন তৎপরতা বেড়ে চলেছে। তবে তারা হুজি ও জেএমবির সঙ্গে একত্র হয়ে তৎপরতা চালিয়ে থাকে। জঙ্গী তথ্য নেই ॥ জঙ্গী তৎপরতার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া জঙ্গী সংগঠনগুলোর জঙ্গীরা বেশিরভাগই ছদ্মনাম নিয়ে ঠিকানা বদল করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে। পুরনো ঠিকানায় এখন আর তাদের পাওয়া যায় না। গ্রামের সঙ্গেও তাদের যোগাযোগ নেই। এছাড়া তাদের সম্পর্কেও কোন তথ্য নেই পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দাদের কাছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জামিনপ্রাপ্ত জঙ্গীদের কার্যক্রম সব সময় মনিটরিং করার দাবি করলেও বাস্তব অবস্থা ভিন্ন। এ কারণেই জামিনপ্রাপ্ত জঙ্গীরা সহজে লাপাত্তা হয়ে যায়। কেউ কেউ পুলিশের নাকের ডগা দিয়ে চলে যায় বিদেশে। আবার কেউ কেউ জামিনে মুক্তির পরও চালিয়ে যায় সাংগঠনিক কার্যক্রম। এ অবস্থায় পুলিশ ও গোয়েন্দারা শঙ্কিত। ধারণা করা হচ্ছে, এসব জঙ্গী সদস্যই একত্রিত হয়ে সাংগঠনিক তৎপরতা আরও জোরদার করছে। তারা সম্মিলতভাবে আবারও যে কোন সময় দেশে বড় ধরনের নাশকতা চালাতে পারে। সম্প্রতি একটি গোয়েন্দা সংস্থা আদালত থেকে বিভিন্ন সময়ে জামিনপ্রাপ্ত হিযবুত তাহরীর, হিযবুত তাওহীদ ও জেএমবির শতাধিক সদস্যের ব্যাপারে খোঁজ নিয়েছে। এ সময় দেখা যায়, জামিনপ্রাপ্ত জঙ্গী সদস্যদের বেশিরভাগই আর পুরনো ঠিকানায় নেই। জামিন পাওয়ার পর তারা ঠিকানা বদল করে অন্যত্র চলে গেছে। এমনকি গ্রামের বাড়িতে খোঁজ নিয়েও তাদের বর্তমান ঠিকানা জানা যায়নি। তারা বদলে ফেলেছে মোবাইল নম্বর ও ই-মেইল আইডি। জামিন পাওয়ার পর তারা গ্রামের বাড়িতেও যাচ্ছেন না। মোবাইল ও পরিচিতজনদের মাধ্যমেই আত্মীয়-স্বজনদের খোঁজ-খবর রাখছেন। আদালতে হাজিরা দিচ্ছে না ॥ হিযবুত তাওহীদের সদস্য আনিছুর রহমান সাকির, নুরুল ইসলাম সজল, রাজু আহম্মেদ, এবিএম রায়হান সরকার রাজধানীর দক্ষিণখান থানা এলাকায় থাকতেন। ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে। এ ঘটনার ব্যাপারে যথারীতি মামলা দায়ের করা হয়। পরে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট থেকে তারা জামিন লাভ করে। জামিন পাওয়ার পর থেকেই লাপাত্তা রয়েছে সাকিব ও সজল। তারা ঠিকানা বদল করে ফেলেছে। আদালতে হাজিরাও দিচ্ছে না। তবে একই মামলার আসামি রাজু আহম্মেদ ও রায়হান জামিনে মুক্ত হওয়ার পরে পূর্বের ঠিকানা বদল করলেও আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছে। লাপাত্তার জঙ্গী সদস্যদের তালিকায় আরও আছে, শ্যামপুর থেকে গ্রেফতারকৃত জেএমবি সদস্য সৈয়দ জিয়াউল ইসলাম ওরফে লিয়ন ওরফে রোকন ওরফে জিতু ওরফে উজ্জ্বল ওরফে হিমু। জামিন পাওয়ার পর থেকে তিনি পুরোপুরিই লাপাত্তা রয়েছেন। কলাবাগান থানার আসামি হিযবুত তাহরীর সদস্য শেখ ওমর শরীফ ওরফে রাসেল, আনিছুর রহমান ওরফে রুহুল, সাব্বির আহম্মেদ, এসএম আরাফাত, আফজাল হোসেন, আসিফ ইকবাল, একেএম ওয়ায়েজ মাহমুদ, তৌহিদ আলম, নূর উদ্দিন ওরফে শিমুল, ইফতেখারুল করিম, এসএম সাইফুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন ওরফে বাতেন, হাজারীবাগের মধুবাজার থেকে গ্রেফতারকৃত তৌহিদুর রহমান, পল্টন এলাকার শিহাব, মোঃ জামিলুর রহমান, ফাহিম, নাজমুল হক, এসএম শামসুদ্দোহা, মোঃ নেয়ামত, কলাবাগানের এসএম আঃ গনি, ফয়জুর রহমান টিপু, বাড্ডা থেকে গ্রেফতারকৃত রাজীব, মোঃ সালাউদ্দিন গাজী ওরফে সালাউদ্দিন, মোঃ মাহবুবুল আলম, মোঃ আছাবুর রহমান ওরফে রানা, মোঃ ছালাউদ্দিন, মোঃ শামীম তালুকদার, পূর্ব কাফরুল এলাকার ফেরদৌস ওয়াহেদ ওরফে প্রিন্স, কোতোয়ালি থানা এলাকার মোঃ কামরুল ইসলাম, ইসমাইল, মোঃ তাজুল ইসলাম, মোঃ রুস্তম আলী, উত্তরার মোঃ বাকী বিল্লাহ, দক্ষিণখান থানা এলাকার মোঃ আমিরুল ইসলাম, মোঃ রাকিব, মোফাজ্জল হোসাইন, উত্তরার সাইদুর রহমান রাজীব, বাড্ডা থানা এলাকার আসওয়াদউজ্জামান, শহিদুল আমীন চৌধুরী, মোহাম্মদপুর এলাকার আহম্মেদ হোসেন সাদী, মাওলানা মোঃ ইদ্রিস, গোলাম মর্তুজা, উত্তরার কাজী মোশেদুল হক ওরফে পাবন জামিনে মুক্তির পর আমেরিকায় চলে গেছেন। লাপাত্তা রয়েছেন পল্টন এলাকার ফয়সাল, আদাবরের শাহ আলিফ প্রিন্স ওরফে মঞ্জু, মোহাম্মদপুরের মোঃ তারেক আজিজ ওরফে তারেক ওরফে ধ্রুব, হাজারীবাগের মোঃ সালাউদ্দিন খান ওরফে পান্না, রামপুরার জাহিদ হোসেন, শাহবাগ এলাকার শাহাদত হোসেন ওরফে সায়মন, মতিঝিলের সৈয়দ ইমদাদুল হক সৈকত, রমনা এলাকার তৌফিক আহাম্মদ ওরফে হাসান ওরফে রিফাদ, পল্টন এলাকার মোঃ রাসেল, মোঃ জনি, মোঃ সাব্বির আহাম্মদ ওরফে আকাশ, খালেদ জোবায়ের সিদ্দিক, বিমানবন্দর থানার মাহামুদুল বারী, কলাবাগান থানার এসএম আশরাফুজ্জামান, ধানম-ি এলাকার এসএম আল-আমিন ওরফে আলামিন অন্যতম। হিযবুত তাওহীদের এবিএম রায়হান সরকার, মোঃ নজরুল ইসলাম (সজল), রাজু আহম্মেদ জামিনে মুক্তির পর থেকে লাপাত্তা রয়েছেন। তবে এদের কয়েকজন সহকর্মী আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন বলে জানা গেছে। জেএমবি’র সদস্য এমরানুল হক রাজীব ওরফে মাইনুল রাজধানীর পল্লবী এলাকা থেকে গ্রেফতার হন ২০০৯ সালে। বিস্ফোরক দ্রব্যসহ তাকে গ্রেফতার করা হয়। বর্তমানে তিনি জামিনে থেকে নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন। একই অবস্থা পল্লবী থেকে গ্রেফতারকৃত আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে আবু হানিফের। এদের বর্তমান ঠিকানা ও কার্যক্রমের ব্যাপারে গোয়েন্দা ও পুলিশের কাছে কোন তথ্য নেই। পলাতক জঙ্গীর তালিকা ॥ র‌্যাব ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গ্রেফতার করা জঙ্গীদের মধ্যে ৫ শতাধিক জঙ্গী জামিনে মুক্তি পেয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। সম্প্রতি দেশে যেসব টার্গেট কিলিং বা গুপ্ত হত্যার ঘটনা ঘটেছে তার সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে। পালিয়ে থাকা জঙ্গীর মধ্যে জেএমবির সদস্যই বেশি। অনেকেই জামিন পেয়ে আর আদালতে হাজিরা দিচ্ছে না। পালিয়ে থাকা জঙ্গীদের মধ্যে আছে ফারুক আহম্মেদ, শরিফ, খাইরুল ইসলাম, ময়েজ উদ্দিন, মহব্বত ওরফে তিতুমীর ওরফে নাহিদ, ওয়ালিউল্লাহ ওরফে হামিদ শফিক, মিলন, সবুজ, সাজেদুর, মানিক, মাজিদ, কফিল উদ্দিন ওরফে রব মুন্সী, আজিবুল ইসলাম ওরফে আজিজুল, শাহান শাহ, হামিদুর রহমান, বজলুর রহমান, বাবর, মাওলানা শফিকুর রহমান, মাওলানা ইদ্রিস আহম্মদ, মাওলানা হাবিবুর রহমান, সিরাজগঞ্জের আবদুল আজিজ, নরসিংদীর মোস্তফা কামাল, কক্সবাজারের রেজাউল করিম, চট্টগ্রামের রেজাউল, কিশোরগঞ্জের শরিয়তউল্লাহ, চাঁদপুরের মুসা আহম্মদ, কক্সবাজারের হাফেজ রফিকুল ইসলাম, হাফেজ সিরাজুল করিম, আনোয়ার উদ্দিন জাবেদ, ওসমান ও হাবিব, হুজির বিস্ফোরক বিভাগের প্রধান প্রশিক্ষক মাওলানা মুজাহিদুল ইসলাম, শারীরিক বিভাগের প্রধান প্রশিক্ষক হাফেজ জাহাঙ্গীর বদর, মাওলানা আবদুর রহমান, খুলনার হাফেজ মোহাম্মদ আবু তাহের, আবুল হোসেন ওরফে আবুল হাসেম, ফেনীর গিয়াস উদ্দিন, আবদুল আজিজ, জসিম উদ্দিন, চট্টগ্রামর সাখাওয়াত হোসেন, কামরুল ইসলাম নুরুল আলম, কুমিল্লার দিদারুল আলম, ময়মনসিংহের আবুল কাশেম, কুমিল্লার ইউসুফ, হবিগঞ্জের নুরুল হক, মাওলানা আবু তাহের, মহিবুর রহমান, মৌলভীবাজারের আবদুল হক, বাগেরহাটের মমতাজ উদ্দিন, নাঈম, আসাদ, সোহাগ, গোপালগঞ্জের বোরহান উদ্দিন মাসুম, রাজবাড়ীর হাফেজ আলী ইয়াস আহম্মদ, পটুয়াখালীর ইব্রহিম ওয়ালিউল্লাহ, গোপালগঞ্জের খালেদ, দিনাজপুরের রাশিদুল ইসলাম, চাঁদপুরের আবু জিহাদ, মাওলানা মামুনুর রশীদ, মাওলানা আবু বক্কর, সাঈদ আহম্মদ প্রমুখ। পুলিশের মুচলেকায় মুক্ত ॥ নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন হিজবুত তাহরীরের প্রশিক্ষিত সদস্য আতিকুর রহমান ওরফে আতিক পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় ২০১৪ সালের ২৪ মে। ঐদিনই তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেয় আদালত। গ্রেফতারের চার মাসের মাথায় ২০১৪ সালের ৯ অক্টোবর আতিক কারগার থেকে জামিনের বের হলে জেলগেট থেকে তাকে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশ। আর কখনও নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠনের সাথে জড়িত হবে না এবং প্রতি সপ্তাহে পুলিশের কাছে হাজিরা দেয়ার শর্তে মুচলেকা নিয়ে আতিককে ছেড়ে দেয়া হয়। একইভাবে জামিন নেয়ার পর পুলিশের কাছে মুচলেকা দিয়েছিল হিজবুত তাহরীর সদস্য নারায়াণগঞ্জের আসিফ হাসান ওরফে রাসেল ওরফে রানা, রাঙ্গুনীয়ার নাজমুল কাদের, গাইবান্ধার আফজালুল ওরফে আতিকসহ ১১ হিজবুত সদস্য, পাঁচজন জেএমবি ও চারজন হরকত-উল-জিহাদের (হুজি) সক্রিয় সদস্য। পরবর্তীতে তারা কেউ পুলিশের কাছে হাজিরা দিতে আসেননি। জামিনে ছাড়া পাওয়া জঙ্গীরাও গোয়েন্দা কার্যালয়ে এখন আর হাজিরা দিতে আসেন না। তারা আদালতেও হাজিরা দেন না। ফলে জামিনে বের হওয়া জঙ্গীরা বর্তমানে কী অবস্থায় আছে সে সম্পর্কে পুলিশের কোন ধারণা নেই। পালিয়ে থাকা এসব জঙ্গীকে গ্রেফতারের জন্য আবার জাল ফেলেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। কারাগারে সক্রিয় জঙ্গীরা ॥ গোয়েন্দা সংস্থা জঙ্গীর ওপর যে প্রতিবেদন তৈরি করেছে তা থেকে জানা গেছে, দেশের সব কারাগারে আটক থাকা জঙ্গীদের সঙ্গে কৌশলে দেখা করে দিকনির্দেশনা নিয়ে আসছে সহযোগীরা। তারপরই আবারও বড় ধরনের নাশকতা, টার্গেট কিলিং বা গুপ্ত হত্যার মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। কাশিমপুর কারাগার থেকে ময়মনসিংহ আদালতে নেয়ার সময়ে প্রিজন সেলে গুলি ও বোমাবাজি করে জেএমবির যে ৩ জঙ্গী ছিনিয়ে নিয়েছিল তার মধ্যে একজন বন্দুকযুদ্ধে নিহত হলেও অপর ২ জন এখনও ধরা পড়েনি। কারাগারের ভেতর থেকে জঙ্গীদের নির্দেশনা অনুযায়ী এসব জঙ্গীকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটানো হয়েছে, যার কারণে এক পুলিশ নিহত ও কয়েক সদস্য আহত হয়েছে। যেসব জঙ্গী ছিনিয়ে নিতে অংশগ্রহণ করেছে তারা তো ধরা পড়েইনি, এমনকি ছিনিয়ে নেয়া জঙ্গীরাও ধরা পড়েনি। এসব জঙ্গীরা টার্গেট কিলিং বা গুপ্ত হত্যার সঙ্গে জড়িত কিনা তাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। কারাগারে থেকে যেসব জঙ্গীরা তৎপর তাদের মধ্যে আছে, আবুল কালাম, গুলজার হোসেন, নুর আলম, রফিকুল ইসলাম, নাবিল রহমান, জাহেদ ইসলাম, সুমন, শাহাদৎ, সেন্টু, সাইফুল্লাহ, নাইমুজ্জামান, সোহাগ, শাহাদৎ হোসেন, লাল্টু, মালেক নান্টু, জুলফিকার আলী, আবু জাফর, জাহিদুর রহমান, হোসেন সজীব, ইউনুস আলী, দেলোয়ার হোসেন দুলাল, মনির ওরফে রিপন, আবুল খায়ের, মুসা, আবদুল মতিন ওরফে জাকির, সালাউদ্দিন আহম্মেদ, মেহেদী হাসান আবির, জহিরুল ইসলাম ওরফে জাহিদ ওরফে বাদল, মোহাম্মদ হাসান শেখ, আবদুল মাজেদ, সুরুজ, আকবর ওরফে আল আমিন, মোহাতাসিম বশির ওরফে নাসির, জাহিদুর রহমান ওরফে জাহিদ, মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান, তারিকুল্লা, রুবেল, মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ওরফে বাতেন, দেলোয়ার হোসেন সজীব প্রমুখ কারাগারে বেশি উচ্ছৃঙ্খল বলে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য এসেছে। কারাগারে অন্তরীণ এসব জঙ্গীদের সঙ্গে কারা দেখা করতে আসে তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তাদের গতিবিধি লক্ষ্য রেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঢাকা গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেছেন, ধরা পড়ার পর আদালত থেকে জামিন পেলে পুলিশের কিছুই করার থাকে না। এদের অনেকেই আত্মগোপনে থেকে ফের সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে বলে তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। ভয়ঙ্কর এসব জঙ্গী জামিন পেয়ে যাচ্ছে, আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানতেই পারছেন না এটা ভাবাই যায় না। পলাতক এসব জঙ্গীকে গ্রেফতার করতে না পারলে গোটা দেশ নিরাপত্তা হুমকিতেই থাকবে। আত্মগোপনে থাকা দুর্ধর্ষ জঙ্গীরা গোপনে একত্র হয়ে যে কোন সময় বড় ধরনের নাশকতা চালাতে পারে বলেও তার আশঙ্কা। পলাতক এসব জঙ্গী ধরতে গোয়েন্দা তৎপরতা এবং গ্রেফতার অভিযান একসঙ্গেই চলছে।
×