ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাহে রমজান

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ২৩ জুন ২০১৬

মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ আজ মাহে রমজানের ১৭তম দিবস। আর কয়েকটি রোজার পরই আসছে নাজাতের দশক। মানুষের জীবনকাল খুবই সংক্ষিপ্ত। এমনকি প্রাচীনকালের মানুষের জীবন আয়ু থেকে এ যুগের মানুষের আয়ুষ্কাল খুবই নগণ্য। পাশাপাশি আল্লাহর অনেক সৃষ্টি, গাছ, জীবজন্তু মানুষের চেয়েও বেশি জীবন পেয়ে থাকে। তাহলে মানুষ শ্রেষ্ঠ কেন? অথবা কিভাবে মানুষ এ সংক্ষিপ্ত জীবনটুকু সদ্ব্যবহার করে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে পারে, পারে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক কল্যাণ ও মুক্তি অজর্নে। বর্তমান দেশে দেশে একটা কথা আছেÑ ‘নারীরা পুরুষের চেয়ে এগিয়ে।’ আমাদের মনে হয় কথাটি বাস্তব এবং প্রাচীনও। নতুন নয়। ধৈর্যশীলতা ও সৃজনশীলতা তাদের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করে। ইসলামের প্রথম বাণী গ্রহণকারী ছিলেন পুরুষেরও আগে একজন মহীয়সী মহিলা। তিনি বিবি খাদিজা। নবীজীর পরমা স্ত্রী। ঘরে ঘরে পুরুষের চেয়ে মহিলারা ইবাদত, তিলাওয়াত ও তাজবীদে সময় দেন বেশি। হজের মধ্যেও আমরা দেখি পুরুষের চেয়ে আমাদের মা-বোনরা পবিত্র হারামাইন শরীফাইনে বেশি সময় ইবাদত করেন ও অবস্থান করেন। পুরুষরা যখন সেখানে অতিরিক্ত খাওয়া দাওয়া, বেড়ানো ও আরাম আয়েশে উন্মুখ থাকে, আমাদের মহিলা হাজীগণ তখন দেখি ধৈর্যের বাণী শুনিয়ে পুরুষদের নিবৃত্ত করেন এবং দলে দলে ছুটে চলেন হারাম শরীফের দিকে। বাংলাদেশের মহিলাদের এক্ষেত্রে আগ্রহ তুলনামূলক বেশি। কারণ তারা জানে এক মাস/দেড়মাস হজ মৌসুম ছাড়া তাদের আর মসজিদে যাওয়া হবে না। দেশের সর্বত্র পুুরুষের জামাতবদ্ধ হয়ে নামাজ পড়ার, ওয়াজ নসিহত শোনার, খুতবা শুনার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু মহিলাদের মসজিদে আসার কোন সুযোগ নেই। তাদের জন্য আলাদা স্পেস করে দেয়ার জন্য কোন আগ্রহ নেই সমাজপতিদের। অথচ সব দেশে এমনকি অমুসলিম দেশেও একটি মসজিদে নির্দিষ্ট একটা অংশ নারীদের নামাজ কালাম, শৌচাগার ব্যবহার, পাক পবিত্রতা অর্জনের স্থায়ী ব্যবস্থা থাকে। দুর্ভাগ্য আমাদের মসজিদের ইমামদের, দুর্ভাগ্য খতীবদের, দুর্ভাগ্য মুতওয়াল্লি ও সমাজপতিদের যারা গোটা দুনিয়া থেকে এ শিক্ষা গ্রহণ করে আমাদের নারীদের অধিকারটুকু মসজিদে স্থাপন করছেন না। অথচ সমাজে তারা পুরুষের অর্ধেক। তারা ইসলামের শিক্ষায় শিক্ষিত হলে গোটা পরিবার হবে ইসলামী, তাদের কর্মস্থলে পুরুষের মতো তারাও থাকবে ইসলামী নীতি নৈতিকতায় উদ্দীপ্ত। আরেকটি বিষয় একেবারেই মানবিক। ইসলাম মানবতার ধর্ম। নিরাপত্তা ও পবিত্রতার ধর্ম। একজন পুরুষ চলতে পথে বাথরুমের হাজত হলে নামাজের নামে, ওয়াক্তের নামে, ওজুর নামে সহজেই পাক পবিত্রতা অর্জন করতে পারে। এ ক্ষেত্রে যে মা-বোনটি আমাদের পথচলার সহযাত্রী তার জন্য সমাজে কী মানবিক ব্যবস্থা আছে? তার জন্য নেই চলতে পথে হাজত সারার, পবিত্রতা অর্জনের ও ওয়াক্তমতো সালাত আদায়ের কোন ব্যবস্থা। ইফতার বা রোজা সমাপ্তি ঘটানোর অনুষ্ঠান সুন্দর করা এ মাসে অন্যতম সওয়াবের কাজ। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) ইরশাদ করেছেন : ‘মান ফাত্তারা সোয়ায়িমান কানা লাহু মাগফিরা... । কোন ব্যক্তি যদি কাউকে ইফতার করায় তা তার জন্য গুনাহ মাফের কারণ হয়।’ আমরা নিজেরা পরিবারে ইফতার অনুষ্ঠানকে প্রাণবন্ত করব এবং সম্ভব হলে মসজিদে মুসল্লিদের জন্য কিছু কিছু ইফতার পাঠানোর চেষ্টা করব। এ কাজে প্রধান ভূমিকা আদর্শ গৃহিণীদের। এ মাস কুরআন নাজিলের মাস, এমনকি অন্যান্য সব কটি বড় বড় ধর্ম গ্রন্থ এ মাসে নাযিল হয়েছিল। আমাদের নারীরা এ মাসে বেশি বেশি করে কুরআন তিলাওয়াত করতে পারে। এমনিতেই অন্য মাসের তুলনায় এ মাসের কোন ফরজ ইবাদাত ৭০ গুণ সাওয়াব বেশি, কোন নফল ইবাদতের সাওয়াব ফরজ ইবাদতের সমতুল্য। তাই কুরআন তিলাওয়াতের সাথে সাথে আরও অধিক সাওয়াবের নিয়তে আমাদের কুরআনের অর্থ ও ব্যাখ্যা অধ্যয়ন করা জরুরী। কারণ এ মাসের মতো অখ- সময় মহিলাদের জন্য আর আসে না। পুরুষের পাশাপাশি আমাদের নারীরাও আত্মশুদ্ধির জন্য মাসলা মাসায়েলের কিতাবসমূহ ও ইসলামী সোনালী যুগের মহীয়সী নারীদের জীবনী অধ্যয়ন করা উচিত। মাহে রমজানে গোটা পরিবারকে ইসলামী আমেজে ভরে দেয়ার জন্য আমাদের নারী সমাজের অনেক দায়িত্ব। আজকালকার শিশুরা বাকি এগারো মাস সাধারণ শিক্ষার জন্য ধর্মীয় শিক্ষা, কুরআন তিলাওয়াত এবং নিয়োমিত ইবাদাত বন্দেগী থেকে দুরে সরে থাকে। এ ক্ষেত্রে নারীরা তাদের ঘরে বাইরে ইবাদাত ও ইসলামী শিক্ষামুখী হওয়ার জন্য অনুপ্রাণীত করতে পারে। নচেৎ এ সব শিশুরা এক সময় ধর্মানুরাগ হারাবে, ইহকাল পরকালের সমন্বিত জীবন গড়ার ক্ষেত্রে বিভ্রান্তিতে ডুবে থাকবে। যা কোন পিতামাতা, অভিভাবক পরিবার ও সমাজের জন্য কল্যাণকর নয়। আল্লাহ আমাদের সকলকে উম্মুল মুমিনিন হযরত খাদিজা, হযরত আয়েশা, হযরত ফাতিমা (রাদি.) এর মতো সকল পূর্ণাত্মা নারীদের পদাংক অনুসরণ করার এবং মাহে রমজানের বরকত লাভের অধিকারী হওয়ার তাওফিক দান করুন আমিন।
×