ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কোন মামলা হয়নি, গ্রেফতারও নেই

কারাগার থেকে বেরনো মাত্রই গুলি করা হয় হেমায়েতকে

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ২২ জুন ২০১৬

কারাগার থেকে বেরনো মাত্রই গুলি করা হয় হেমায়েতকে

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ জেলা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বেরুনো মাত্রই সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয় হেমায়েত উদ্দিন (৩৮)। তার নামে শহরতলীর পশ্চিমাঞ্চলে ম-লগাতি এলাকায় একটি সন্ত্রাসী বাহিনী রয়েছে। কোতয়ালি থানার পুলিশ জানায়, একটি অস্ত্র মামলায় জামিন পেয়ে সোমবার সন্ধ্যার পর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বের হয় হেমায়েত। সঙ্গে সঙ্গে ফটকের সামনেই অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা তাকে গুলি করে । পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তার পরিবার থেকে কোন মামলা করা হয়নি। হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত কাউকে গ্রেফতারও করা যায়নি। তবে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা নম্বরবিহীন মোটরসাইকেলটি কার, তা পুলিশ শনাক্ত করার চেষ্টা করছে। যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র সুপার শাজাহান আহমেদ বলেন, রাত ৮টা ১০-১৫ মিনিট আগে মুক্তি পেয়ে হমায়েত কারা ফটকের সামনের রাস্তা পর্যন্ত গিয়েছিল। এ সময় দুটি মোটরসাইকেলযোগে এসে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। কারাগারের প্রধান ফটকে দায়িত্বরত রক্ষীরা দুর্বৃত্তদের ধাওয়া করে। এ সময় দুটি মোটরসাইকেলের একটি দুই দফা পড়ে যায়। ফলে দুর্বৃত্তরা নাম্বার প্লেটবিহীন টিভিএস মোটরসাইকেলটি ফেলেই পালিয়ে যায়। সিনিয়র সুপার আরও বলেন, কারারক্ষীরা বিষয়টি ফোনে জানানোর সঙ্গে সঙ্গে আমি বাসভবন থেকে বেরিয়ে আসি। রক্ষীদের কাছ থেকে জানতে পারি, দুর্বৃত্তরা হেমায়েতকে লক্ষ্য করে প্রথম দুই রাউন্ড গুলি ছোড়ে। পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে পড়ে থাকা হেমায়েতের মাথায় তারা আরেক রাউন্ড গুলি করে পালিয়ে যায়। এদিকে, গুলিবিদ্ধ হেমায়েতকে উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান কোতয়ালি থানার এসআই শাহাবুল। জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, হাসপাতালে আনার আগেই হেমায়েতের মৃত্যু হয়। এক রাউন্ড গুলি তার মাথায় বিদ্ধ হয়েছে। যশোর কোতোয়ালি থানার এসআই নাহিয়ান জানান, হেমায়েতের বিরুদ্ধে কোতয়ালি থানায় ১৯টি মামলা রয়েছে। তার মধ্যে হত্যা, বিস্ফোরক দ্রব্য ও অস্ত্র মামলাও আছে। হেমায়েত সদরের ম-লগাতি এলাকায় একটি সন্ত্রাসী বাহিনী পরিচালনা করতেন বলে জানান থানার এই কর্মকর্তা। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোহিতকুমার নাথ সাংবাদিকদের জানান, হেমায়েত আওয়ামী লীগ কর্মী। তবে তার কোন পদ-পদবি ছিল না। মোহিতনাথ স্থানীয় লোকজনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, তফশিডাঙ্গার মামুন, কৃষ্ণবাটির মনা ও বাবু এই হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত। নিহত হেমায়েত উদ্দিন ম-লগাতির জিন্নাত ওরফে জিন্নাত কসাইয়ের ছেলে। ছেলের কারামুক্তির কথা শুনে জেলগেটে এসেছিলেন হেমায়েতের মা রোকেয়া বেগম। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতা মোহিতকুমার নাথের সহযোগী জনৈক মিঠু তাকে বাড়ি ফিরে যেতে বলেন। ফেরার পথে তিনি ছেলে খুন হয়ে যাওয়ার কথা শুনে হাসপাতালে ফিরে আসেন। রোকেয়া বেগমের অভিযোগ, একই এলাকার হাসান, আজিজুল, কৃষ্ণবাটি গ্রামের মনা, বাবু, ফিরোজের সঙ্গে হেমায়েতের বিরোধ ছিল। তারাই আমার ছেলেকে গুলি করে মেরেছে। মঙ্গলবার দুপুরে লাশের ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে ম-লগাতি গ্রামে তার লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
×