ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জামালপুরের ৮ রাজাকারের মামলার রায় যে কোন দিন

যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ মীর কাশেম আলী ফাঁসির রায় রিভিউয়ের আবেদন করেছেন

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ২০ জুন ২০১৬

যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ মীর কাশেম আলী ফাঁসির রায় রিভিউয়ের আবেদন করেছেন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদ-ে দ-িত চট্টগ্রামের ‘বাঙালী খান’ জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলী তার রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেছেন। রবিবার আপীল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় মীর কাশেমের পক্ষে এ আবেদন করেন তার আইনজীবী। ৬৮ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে চৌদ্দটি যুক্তি দেখানো হয়েছে। দুপুর বারোটার দিকে মীর কাশেমের আইনজীবী মীর আহমেদ বিন কাশেম আপীল বিভাগের সংশ্লষ্ট শাখায় রিভিউ আবেদনটি দাখিল করেন। এদিকে জামালপুরের ৮ রাজাকারের মামলার রায় যে কোন দিন ঘোষণা করা হবে। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াত ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের এই সদস্যকে ২০১৪ সালের নবেম্বরে মৃত্যুদ- দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। এই রায়ের বিরুদ্ধে মীর কাশেম আলী আপীল করলে সেখানে তার সর্বোচ্চ সাজা বহাল থাকে। রিভিউয়েও যদি মীর কাশেমের ফাঁসির রায় বহাল থাকে তবে তার সামনে খোলা থাকবে কেবল রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ। ক্ষমা চেয়ে ক্ষমা না পেলে রাষ্ট্র তার দ- কার্যকর করবে। ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদ- বহাল রেখে গত ৮ মার্চ মীর কাশেম আলীর আপীল খারিজ করে দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপীল বিভাগের বেঞ্চ। আপীলের রায়ে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিন আহমেদকে খুনের দায়ে এক অভিযোগে মৃত্যুদ- এবং আরও ছয় অভিযোগে ৫৮ বছর কারাদ-ের সাজা বহাল রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ১২ নম্বর অভিযোগে হত্যার দায় থেকে এই জামায়াত নেতা অব্যাহতি পেলেও ১১ নম্বর অভিযোগ সর্বোচ্চ সাজাই বহাল রাখা হয়েছে। এর আগে ২০১৪ সালের ২ নবেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে দুই অভিযোগে মীর কাশেমের মৃত্যুদ- এবং আট অভিযোগে সবমিলিয়ে ৭২ বছরের কারাদ- হয়েছিল। একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০১২ সালের ১৭ জুন তাকে গ্রেফতার করা হয়। ২০১৪ সালের ২ নবেম্বর ট্রাইব্যুনালের রায়ে মীর কাশেম আলীকে মৃত্যুদ- দেয়া হয়। জামালপুরের ৮ রাজাকার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামালপুরের আলবদর বাহিনীর উদ্যোক্তা আশরাফ হোসেনসহ ৮ রাজাকারের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার রায় যে কোন দিন ঘোষণা করা হবে। প্রসিকিউশন পক্ষ ও আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে সিএভি (যে কোন দিন রায়) ঘোষণা করা হয়। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল -১ রবিবার এ আদেশ প্রদান করেন। এ সময় প্রসিকিউশন পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ও প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল। অন্যদিকে গ্রেফতারকৃত দুই আসামির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সৈয়দ মিজানুর রহমান, ব্যারিস্টার এহসান এ সিদ্দিকী ও গাজী এম এইচ তামিম। যুক্তিতর্কের শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ-ের আরজি জানায়। অন্যদিকে আসামিপক্ষ অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আবেদন করে। আট আসামি হলেন- ইসলামী ব্যাংকের সাবেক পরিচালক শরীফ আহাম্মেদ ওরফে শরীফ হোসেন, মোঃ আশরাফ হোসেন, মোঃ আব্দুল মান্নান, মোঃ আব্দুল বারী, হারুন, মোঃ আবুল হাশেম, এ্যাডভোকেট মোঃ শামসুল হক ওরফে ‘বদর ভাই’ এবং এস এম ইউসুফ আলী। এদের মধ্যে গ্রেফতার শামসুল ও ইউসুফকে রবিবার কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। বাকি ছয়জনকে পলাতক দেখিয়েই এ মামলার বিচার চলে। যুদ্ধাপরাধের পাঁচ অভিযোগে গত বছর ২৬ অক্টোবর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ আটজনের বিচার শুরু করে ট্রাইব্যুনাল। প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ সাংবাদিকদের বলেন, “মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষ হয়েছে। আদালত রায় অপেক্ষমাণ রেখেছেন। এখন যে কোন দিন রায় ঘোষণা হবে। তুরিন আফরোজ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ-ের আরজি জানিয়েছি। সাক্ষ্য ও তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আসামিদের সর্বোচ্চ দ- হবে বলে প্রত্যাশা করি।’ অন্যদিকে গাজী তামিম বলেন, ‘অভিযোগ খ-ন করে আমরা আসামিদের খালাসের আরজি জানিয়েছি।’ চলতি বছর ২৯ এপ্রিল এই আট আসামির বিরুদ্ধে প্রসিকউশনের দাখিল করা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। গত ২ মার্চ তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর পুলিশ শামসুল ও ইউসুফকে গ্রেফতার করে। নিয়ম অনুযায়ী বাকিদের আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও তারা তা করেনি। গ্রেফতার শামসুল হক জামালপুর জেলা জামায়াতের সাবেক আমির এবং সিংহজানি স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক ইউসুফও একসময় জামায়াতের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। এই দুইজন একাত্তরে রাজাকার বাহিনীতে এবং বাকি ছয়জন আলবদর বাহিনীতে ছিলেন বলে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার ও প্রসিকিউশন সূত্রে জানা গেছে। আট আসামির পাঁচ অভিযোগ ॥ আট আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে জামালপুরে রাজাকার-আলবদর বাহিনী ও শান্তি কমিটি গঠন, স্থানীয় সাধনা ঔষধালয় দখল করে আলবদর বাহিনী ও শান্তি কমিটির কার্যালয় স্থাপন এবং সিংহজানি হাইস্কুলে আলবদরদের প্রশিক্ষণ প্রদান। এছাড়া পিটিআই হোস্টেল ও আশেক মাহমুদ কলেজের ডিগ্রী হোস্টেল দখল করে নির্যাতন কেন্দ্র গড়ে সেগুলোতে ১০ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা-গণহত্যা, আটক, অপহরণ, নির্যাতন ও গুমের অভিযোগ আনা হয়েছে। প্রথম অভিযোগ ॥ ১৯৭১ সালের ২২ এপ্রিল থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে আসামি ইউসুফ আলী ও শামসুল হক তৎকালীন জামালপুর মহকুমায় ১০ হাজার লোককে হত্যা এবং ৭৫ হাজার ঘর-বাড়ি ধ্বংস করেন। দ্বিতীয় অভিযোগ ॥ আসামি আশরাফ হোসেন, শরীফ আহমেদ, আব্দুল মান্নান, মোঃ হারুন ও আব্দুল বারী ১৯৭১ সালের ৭ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই এবং ২২ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত জামালপুরের সরিষাবাড়ী থানার মইষ ভাদুরীয়া ও ধূপদহ গ্রামের শহীদ আব্দুল হামিদ মোক্তারের বাড়ি, মোঃ সাইদুর রহমান ভূঁইয়ার বাড়ি, আমির আলী খানের বাড়ি, পিটিআই হোস্টেলের টর্চার ক্যাম্প, জামালপুর শ্মশানঘাটে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেন। তৃতীয় অভিযোগ ॥ ১৯৭১ সালের ১০ জুলাই রাত ৩টার দিকে আসামি শরীফ আহমেদ, আশরাফ হোসেন, আব্দুল মান্নান, আব্দুল বারী, আবুল হাসেম, শামসুল হক ও ইউসুফ আলী জামালপুরের সিএ্যান্ডবি রোডের দয়াময়ী লেনের মল্লিক ভিলা থেকে শহীদ নুরুল আমীনকে অপহরণের পর ওই দিনই তাকে হত্যা করেন। চতুর্থ অভিযোগ ॥ ১৯৭১ সালের ২২ এপ্রিল থেকে ১১ ডিসেম্বর আসামি আশরাফ হোসেন, শরীফ আহমেদ, আব্দুল মান্নান ও আব্দুল বারী জামালপুরের আশেক মাহমুদ ডিগ্রী কলেজের নির্যাতন কেন্দ্রে আইয়ুব আলী ফকিরকে আটকে রেখে নির্যাতন করে হত্যা করেন। পঞ্চম অভিযোগ ॥ ১৯৭১ সালের ২২ এপ্রিল থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে জামালপুরের পিটিআই নির্যাতন কেন্দ্রে শহীদ আব্দুল হামিদ মোক্তার, সাইদুর রহমান ওরফে সাদু চেয়ারম্যান, শহীদ আব্দুল হামিদ খান ও স ম রেজাউল করিমকে আটক রেখে নির্যাতন করে হত্যা করেন আসামি শরীফ আহমেদ, আশরাফ হোসেন, আব্দুল মান্নান, আব্দুল বারী, আবুল হাসেম, শামসুল হক ও ইউসুফ আলী।
×