ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এবার শিশুদের প্রিয় বার্বিডলের গোলাপী ঝালরের পোশাক

প্রকাশিত: ০৫:১২, ২০ জুন ২০১৬

এবার শিশুদের প্রিয় বার্বিডলের গোলাপী ঝালরের পোশাক

রহিম শেখ ॥ নতুন পোশাক ছাড়া ঈদের আমেজ থাকে না শিশুদের মাঝে। বাবা-মাও নিজেদের পছন্দের কথা না ভেবে গুরুত্ব দেন সন্তানদের আনন্দ। তাইতো ব্যবসায়ীরা ঈদ উৎসবে এবারও শিশুদের পোশাকে নিয়ে এসেছেন ভিন্নতা। ঈদবাজারে শিশুদের কথা মাথায় রেখে আয়োজনের কোন কমতি নেই। কারণ তাদের চাহিদাও ভিন্ন। সে যে পুতুলটি নিয়ে খেলে সেই ‘বার্বি ডল’-এর গোলাপি ঝালরের পোশাকটিই হয়ে ওঠে তার ঈদের আবদার। আবার কার্টুন চরিত্র ব্যাটম্যান, সুপারম্যানের মতো সাজতেও মন চায়। তবে সবকিছু ছাপিয়ে এবারও দেশীয় কাপড়ের পাশাপাশি শিশুদের পছন্দে প্রভাব ফেলছে ভারতীয় চলচ্চিত্রের খুদে অভিনয় শিল্পীদের পোশাক। পোশাক ডিজাইনারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার প্রিন্টের পোশাকের চাহিদা একটু বেশি। গরম এবং মাঝে মাঝেই বৃষ্টি, তাই সুতির কাপড়ের চাহিদা আছে বেশ। হাতের কাজ, কারচুপি, এ্যাপ্লিক, রিবনের প্রভাব রয়েছে কমবেশি। প্রজাপতির ডানা, কাপড়ের ফুল, টুনটুনি পাখি, সবই দেখা গেছে মোটিফ হিসেবে। শিশুর যা কিছু ভাল লাগে, তাই প্রাধান্য পাচ্ছে এবার। ছোট ছেলেদের পোশাকেও রয়েছে এর ছাপ। ছেলেদের শার্ট বা ফতুয়ায় প্রাধান্য পাচ্ছে হাফহাতা এবং হাতাছাড়া কাট। লং প্যান্টের বদলে কোয়ার্টার। সাদা পাঞ্জাবির পাশাপাশি রঙিন পাঞ্জাবি বেশ পছন্দ ছেলেশিশুদের। শিশুদের ক্ষেত্রে আরামের জন্য সবারই মনোযোগ সুতিতে। দেশী পোশাকে পাবেন ভয়েল, বেক্সি ভয়েল, কটন জর্জেট, এ্যান্ডি কাপড়ে পছন্দের পোশাক। পাশাপাশি নজর রাখা হয়েছে রঙের বিষয়টি। কন্ট্রাস্ট কালার খুব চলবে শিশুদের এবারের ঈদপোশাকে। পিংক, পার্পেল, ফিরোজা, ম্যাজেন্টা, লাল, নীলের সব রঙেই চলছে মিক্সম্যাচের খেলা। তবে প্রিন্টও বেশ পছন্দ করছে শিশুরা। দুই থেকে ১২ বছর বয়সী মেয়েশিশুদের জন্য থাকছে সালোয়ার-কামিজ, ফ্রক, স্কার্ট-টপস, ফতুয়া, থ্রিপিস ও টি-শার্ট। আর ছেলেদের জন্য ফতুয়া, প্যান্ট, শার্ট, টি-শার্ট, পাঞ্জাবি, শর্ট পাঞ্জাবি ইত্যাদি। মেয়েশিশুদের পোশাকের নক্সা ও কাটিংয়ে রয়েছে বিশেষ ভিন্নতা। এ্যালাইন কাট, হাতাকাটা পোশাক ছাড়াও ঘটি হাতার ফ্রক ও টপসের সংগ্রহ বেড়েছে। এছাড়া কামিজের লেইসের ওপর বিশেষ ডিজাইন থাকছে। অধিকাংশ পোশাকই হাতাছাড়া বা ছোট হাতার। রাজধানীর বেশ কয়েকটি মার্কেট ও বিপণিবিতান ঘুরে দেখা গেছে, গত কয়েক বছরের মতো এবারও ঈদের পোশাকে ভারতীয় চলচ্চিত্র ভিত্তিক পোশাকের আধিপত্য চলছে। ঢাকাসহ সারাদেশের অভিজাত বিপণিবিতানগুলোতে দেশী পোশাকের তুলনায় বিদেশী পোশাকের দিকেই ক্রেতাদের বেশি মনোযোগ। এবার ঈদের বাজারে এসেছে হিন্দি চলচ্চিত্রের নামে একাধিক পোশাক। ভারতীয় চলচ্চিত্রের নায়িকাদের ব্যবহৃত পোশাকের আদলে তৈরি পোশাক কম বয়সীদের পছন্দের শীর্ষে। বসুন্ধরা সিটির নিচতলায় শিশুদের পোশাকের দোকানগুলোতে রয়েছে প্রধানত বিদেশী পোশাকের সম্ভার। মার্কেটের কিডস ওয়ার্ল্ডের বিক্রয়কর্মীরা জানান, এবারও গত কয়েক বছরের মতো বেশি বিক্রি হচ্ছে ভারতীয় চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট কয়েকটি ভারতীয় পোশাক। বড়দের মতো খুকী ও কিশোরীদের পোশাকে এবারও ভারতীয় চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট পোশাকের চাহিদা বেশি। বসুন্ধরা সিটির চিতা ডিজাইনের ব্যবস্থাপক মোঃ রনি বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার শিশুদের পোশাকের দাম বেড়েছে গড়ে প্রায় ২০-৩০ ভাগ। দেশী পোশাক মানের দিক থেকে বিদেশী পোশাকের চেয়ে কোন অংশে কম নয়, দামেও কিছুটা সাশ্রয়। তবু কেন জানি না, বিদেশী পোশাকের প্রতিই ক্রেতাদের বেশি ঝোঁক। রবিবার বসুন্ধরা সিটিতে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে ঈদের শপিং করতে এসেছিলেন ধানম-ির বাসিন্দা লুবনা রহমান। শুরুতেই শিশুদের পোশাকে দাম নিয়ে অভিযোগ করেন তিনি। কি আর করা বাচ্চাদের আবদার মেটাতে পছন্দসই পোশাকই কিনতে হয়েছে। বসুন্ধরা সিটির কিডস ওয়ার্ল্ডের স্বত্বাধিকারী মোঃ খোকন বলেন, বিক্রি এখন আগের তুলনায় বেড়েছে। তবে সামনের দিনগুলো নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এ ব্যবসায়ী। বসুন্ধরা সিটির বেবিস গ্যালারিতে কথা হয় বিক্রয়কর্মী মোঃ তাজুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, এবার তাদের দোকানে ঈদে ছোটদের জন্য এসেছে চীন, থাইল্যান্ড ও ভারতীয় পোশাক। ৬ থেকে ১২ বছরের শিশুদের থ্রি কোয়ার্টারের মূল্য ৯৮০ থেকে ২২৫০ টাকা। সালোয়ারের বিশেষ একটি সেটের মূল্য ২৪৮০ থেকে ১৮৫০ টাকা, ডিভাইডার ফ্রক ১২০০ থেকে ১৮৫০ টাকা। ছেলেদের টি-শার্ট পাওয়া যাচ্ছে ৮৫০ থেকে ১৪৯০ টাকায়। চিতা ডিজাইনে কিশোরদের ভারতীয় টি-শার্ট পাওয়া যাচ্ছে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকায়, জিন্স প্যান্ট ২২০০ থেকে ৩০০০ টাকায়, শার্ট ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকায়। বসুন্ধরা সিটির ‘দেশীদশ’ অংশে রয়েছে দেশে তৈরি বাহারি পোশাকের সম্ভার। এখানেও দেশি ডিজাইনের বাহারি নকশায় তৈরি নতুন পোশাকের জন্য শিশুদের নিয়ে অভিভাবকদের ভিড়। ফ্যাশন হাউস কে-ক্র্যাফটের ব্যবস্থাপক মোঃ নাসির হোসেন বলেন, বড়দের ডিজাইনগুলোই ছোটদের গঠন অনুযায়ী আমরা তৈরি করেছি। গরমে শিশুদের আরামের কথা ভেবে অধিকাংশ পোশাক তৈরি করা হয়েছে সুতি কাপড়ে। আমরা ২ বছর থেকে শুরু করে ১২ বছরের শিশুদের উপযোগী নতুন নতুন ডিজাইনের পোশাক বাজারে এনেছি। এ প্রসঙ্গে ফ্যাশন হাউস রঙের কর্ণধার বিপ্লব সাহা বলেন, শিশুদের পোশাকের মোটিফ হিসেবে এলোমেলো নক্সার বদলে চল বেড়েছে সাদাসিধে নকশা। বর্ণমালা কিংবা মজার সব ছবির ব্লকপ্রিন্টও আছে। সুপারহিরো সিরিজের নানা কমিক ক্ল্যাসিক্যাল চরিত্রগুলোও আছে ছোটদের পোশাকের ক্যানভাসে। বিক্রেতারা জানালেন, ডরিমন টি-শার্টের দাম ৮৫০, স্পাইডারম্যান ৭০০ থেকে ৭৫০ আর নিউমার্কেটে শিশুদের পোশাক ১৭০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। ফ্যাশন হাউসগুলোয় কাজ অনুসারে পাঞ্জাবিগুলোর দাম পড়বে ৫০০ থেকে ২ হাজার, টি-শার্ট ১৫০ থেকে ৫০০, ফতুয়া ২৫০ থেকে ৪৫০, মেয়েশিশুদের ফ্রক পাওয়া যাবে ৫০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে। এছাড়া নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত ঈদের বাজারের জন্য ভিড় করছেন ফুটপাথে। নিউমার্কেট সংলগ্ন ফুটপাথের ছোটদের পোশাক ব্যবসায়ী ইমাম হোসেন বলেন, ঈদের বিক্রির হিড়িক এখনও শুরু হয়নি, এমনকি এখনও বিক্রি স্বাভাবিকের তুলনায় কম। বাজারদর আগের তুলনায় সব পোশাকে বেড়েছে গড়ে বিশ ভাগ। তিনি জানান, তার দোকানে জিন্স প্যান্টের মূল্য ২০০ থেকে ৫০০ টাকা, হাফ প্যান্ট ১৫০ টাকা, শার্ট ১৫০ থেকে ৫০০ টাকা, টি-শার্ট ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা, ফ্রক ৩০০ টাকা, স্কার্ট ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা ও সালোয়ার ১৫০ থেকে ২০০ টাকা।
×