ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়া

১৪৭ বছর ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল (ভিএম) গার্লস স্কুল

প্রকাশিত: ০৪:২১, ১৮ জুন ২০১৬

১৪৭ বছর  ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল (ভিএম) গার্লস স্কুল

দেড় শ’ বছর আগে ১৮৬৯ সালে তৎকালীন ভারতবর্ষের এই বাংলায় যখন নারী শিক্ষা ছিল কার্যত গৃহবন্দী, সেই সময়ে বগুড়ায় প্রতিষ্ঠিত হয় গার্লস স্কুল। গত শতকের পঞ্চশের দশকের শেষ ভাগ পর্যন্ত যার পরিচিতি ছিল ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল (ভিএম) গার্লস স্কুল। ১৯৬২ সালে সরকারীকরণের পর নাম হয় বগুড়া গভর্নমেন্ট গার্লস হাইস্কুল। বর্তমানে এই স্কুলটি নারী শিক্ষার অগ্রগতির চিত্র বয়ে আনছে নিত্য বছর। নারীকে অবরোধবাসিনী থেকে বের করে এনে শিক্ষার হাল ধরিয়েছিলেন নারী জাগরণের আলোকবর্তিকা বেগম রোকেয়া। তারই রেশ ধরে তৎকালীন শিক্ষিত ও এলিট শ্রেণী বগুড়ায় নারী জাগরণের যাত্রা শুরু করে স্কুল প্রতিষ্ঠা করে। ১৮৬৯ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে তৎকালীন জমিদার নবাব পরিবারের পূর্বসূরি বর্তমান নবাববাড়ি সড়কের ধারে স্কুলের জন্য জমি দান করে। সেখানেই মাটির ঘর তুলে নারী শিক্ষার যাত্রা। ওই সময়েই স্কুলের ভেতরে দূরের নারী শিক্ষার্থীদের জন্য হোস্টেল প্রতিষ্ঠা করা হয়। জেলার বিভিন্ন এলাকার মেয়েরা সমাজের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে এই স্কুলে পড়তে আসে। নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে অবদান রাখতে ওই সময়ে এগিয়ে আসে প্রগতিশীল ধারার বনেদি পরিবার। তাদের একজন মুক্তা। বয়স ৮০। ঢাকায় থাকেন। বললেন, তখনকার দিনে মেয়েরা শুধু স্কুলের পাঠই নিত না, এলাকার অন্যান্য মেয়েরাও যাতে শিক্ষিত হয় এ জন্য তাদের উদ্বুদ্ধ করার কাজও করেছে। ওই স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ হাবিবা বেগম বললেন, পঞ্চাশের দশকে স্কুলের অনেক শিক্ষার্থী সাইকেলে চড়েও এসেছে। স্কুলে স্পোর্টসে অংশ নিয়েছে। এই স্কুলের শিক্ষার্থীরা সেই সময়েই গড়ে উঠেছে প্রগতিশীল ধারায়। যা আজও বিদ্যমান। এভাবেই নারীদের এগিয়ে চলার পথ তৈরিতে স্কুলটি অবদান রাখে। গ্রেট ব্রিটেনের মহারাণী ভিক্টোরিয়ার নামানুসারে স্কুলের নামকরণ হয় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল। শুরু থেকেই এই স্কুল মাধ্যমিক শিক্ষা পর্যন্ত চালু করে। স্কুলের প্রথম প্রধান শিক্ষক ছিলেন লিলি ম-ল। স্কুলের বর্তমান প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুন জানান দশমিক ৮৮২৫ শতাংশের ওপর গড়ে তোলা হয়েছে তিন দিকে ত্রিতল ভবন। আরেক দিকে প্রধান শিক্ষকের বাসভবন। স্কুলের ভেতরে অনেকটা জায়গায় মেয়েদের খেলাধুলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও মেয়েদের এক্সট্রা কারিকুলাম এ্যাকটিভিটিজের ওপর জোর দিয়ে সংস্কৃতির ধারায় গড়ে তোলা হয়। ফলে তাদের মধ্যে গড়ে উঠছে স্পোর্টসম্যানশিপ ও সংস্কৃতি। এই স্কুলে মেয়েদের শিক্ষা দেয়া হয় এই কথায়- যে জাতি তার নিজের সংস্কৃতিতে যত সমৃদ্ধ, তারা তত উন্নত। স্কুলে পুঁথিগত বিদ্যার বাইরে জ্ঞানার্জনের জন্য বই পড়তে উৎসাহিত করা হয়। প্রতি বছর প্রাথমিক শিক্ষা জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা ও মাধ্যমিক পরীক্ষায় সবচেয়ে ভাল ফলাফল করে রাজশাহী বোর্ডের অন্যতম বিদ্যাপীঠে পরিণত হয়েছে। সংস্কৃতির ধারায় গড়ে ওঠা শিক্ষার্থীরা তাদের কর্মজীবনেও সফল। এই স্কুলে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অনেকেই ভাল ডাক্তার, প্রকৌশলী, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা ছাড়াও বিদেশ বিভুঁইয়ে সুনাম কুড়িয়েছে। Ñসমুদ্র হক, বগুড়া থেকে
×