ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদে বাজেট আলোচনা

উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে বিএনপি-জামায়াত গুপ্তহত্যা চালাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ১৪ জুন ২০১৬

উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে বিএনপি-জামায়াত  গুপ্তহত্যা চালাচ্ছে

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা চলমান গুপ্তহত্যার কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, দেশ যখন আগামীর পথে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে, উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে সারাবিশ্বে প্রশংসিত হচ্ছে, ঠিক তখনই দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে বিএনপি-জামায়াত জোট দেশে গুপ্তহত্যা চালাচ্ছে। জনগণের সমর্থন হারিয়ে এখন নিরীহ জনগণের ওপরই প্রতিশোধ নিচ্ছে। ক্ষমতার জন্য মরিয়া হয়ে ইসরাইলের মোসাদের সঙ্গে তারা হাত মেলাচ্ছে। এদের শক্ত ও কঠোরহস্তে দমন করতে না পারলে উন্নয়ন-অগ্রগতির কাক্সিক্ষত লক্ষ্য পূরণ হবে না। ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে সোমবার সংসদ অধিবেশনে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নেন- প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, সরকারী দলের মেজর জেনারেল (অব) সুবিদ আলী ভূঁইয়া, গাজী ম ম আমজাদ হোসেন, সাবিহা নাহার বেগম, আনোয়ারুল করিম আনার, ওয়ার্কার্স পার্টির মোস্তফা লুৎফুল্লাহ, ন্যাপের আমেনা আহমেদ, জাতীয় পার্টি জেপির রুহুল আমিন এবং জাতীয় পার্টির খোরশেদ আরা হক। আলোচনা শেষে সংসদ অধিবেশন আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টা পর্যন্ত মূলতবি করা হয়। তবে আলোচনার সময় অধিকাংশ বক্তাই লিখিত বক্তব্যে পাঠ করায় তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া। সরকারী দলের সংসদ সদস্য সাবিহা নাহার বেগম লিখিত বক্তব্যে পাঠ করেও নির্ধারিত সময়ে বক্তব্য শেষ করতে না পেরে কিছুটা সময় প্রার্থনা করেন। এ সময় ফজলে রাব্বি মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, লিখিত বক্তব্য পাঠ করতে গেলে স্পীকারের অনুমতি নিতে হয়। মাত্র একজন সদস্য লিখিত বক্তব্য পাঠের জন্য স্পীকারের অনুমতি চেয়েছেন। অন্যরা কেউ চাননি। লিখিত বক্তব্যও নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে পারবেন নাÑ এমনটা মেনে নেয়া যায় না। আলোচনায় অংশ নিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট দুই বছর নারকীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেছে। সেখানে ব্যর্থ হওয়ার পর এখন দেশকে অস্থিতিশীল করতে তারা গুপ্তহত্যা চালাচ্ছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িক। তাই আমরা যেন বিভ্রান্ত না হই, পূর্বের মতোই ঐক্যবদ্ধ থাকি। এমন কিছু না করি বা বলি, যাতে অপশক্তি, ষড়যন্ত্রকারী ও গুপ্তহত্যাকারীদের হাত শক্তিশালী হয়। মনে রাখবেন শান্তিপূর্ণ, উন্নয়ন ও অগ্রগতির বাংলাদেশ বিনির্মাণে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কোন বিকল্প নেই। জাতীয় পার্টির সেলিম উদ্দিন আর্থিক খাতে অর্থ হরিলুটের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, বিভিন্ন ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুণ্ঠন করা হলেও কোন বিচার নেই। এভাবে চললে প্রস্তাবিত বাজেট কোনদিনই বাস্তবায়িত হবে না। বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদের সাহসী নেতৃত্বের কারণেই দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রয়েছে। এ ধারাটি বজায় রাখতে হবে। মেজর জেনারেল (অব) সুবিদ আলী ভূঁইয়া বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে স্বপ্ন আছে, চ্যালেঞ্জও আছে। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বের কারণেই বৈশ্বিক প্রতিকূলতার মধ্যে আর্থ-সামাজিক খাতে বৈপ্লবিক উন্নতি সাধিত হয়েছে। তিনি শিক্ষা খাতে বরাদ্দ আরও বৃদ্ধির দাবি জানান। বন ও পরিবেশ উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব বলেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া সন্ত্রাসের নেত্রী। অন্যদিকে শেখ হাসিনা একজন ক্যারিশম্যাটিক লিডার। তার দক্ষ নেতৃত্বের প্রশংসায় আজ বিশ্ব নেতারাও পঞ্চমুখ। সারাবিশ্বে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আরও এগিয়ে যাবে। ন্যাপের আমেনা আহমেদ স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বাজেটে বরাদ্দ অপ্রতুলতার সমালোচনা করে বলেন, কর যাতে গরিবের গলার ফাঁস না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। পরোক্ষ কর দেশের নিম্নবিত্ত-গরিব মানুষের চাপ বাড়ায়। তাই কর না বাড়িয়ে আওতা বাড়ানো উচিত। খেলাপি ঋণ আদায়ে আরও কঠোর হতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজ সারাবিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃত। এ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। ওয়ার্কার্স পার্টির মোস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেন, মৌলবাদী অর্থনীতি থেকে আমাদের অর্থনীতিকে বের করে আনতে হবে। বিএনপি-জামায়াত ও যুদ্ধাপরাধীরা এখন সন্ত্রাসী, গুপ্তহত্যা, পেট্রোল বোমা, পুড়িয়ে মানুষ হত্যা ও পাকিস্তানমুখী রাজনীতি শুরু করেছে। দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে বিএনপি এখন ইসরাইলের মোসাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ আগামীর পথে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। ক্রিকেট খেলায় বাংলাদেশের টাইগাররা আজ বিশ্বের সব বাঘা বাঘা টিমের কাছে আতঙ্কের নাম। তরুণ তুর্কি মুস্তাফিজুরের প্রশংসায় সারাবিশ্বের ক্রিকেটবোদ্ধারা পঞ্চমুখ। জাতীয় পার্টির খোরশেদ আরা হক বলেন, দেশের প্রধান দুই দল ক্ষমতার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে ঠিক তখন দেশকে আবার পিছিয়ে দিতে একটি দল দেশে গুপ্তহত্যা চালাচ্ছে। ইউপি নির্বাচনের সহিংসতার দায়ভার সরকারকেই নিতে হবে। আজ দেশে স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নেই, আমাদের জীবনেরও কোন গ্যারান্টি নেই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতি করতে সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে।
×