ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

২৮ জুন আন্তর্জাতিক নিলাম রাজউকের

১৪২তলা আইকনিক টাওয়ার নির্মাণ চুক্তি পিছিয়ে গেল

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ১৪ জুন ২০১৬

১৪২তলা আইকনিক টাওয়ার নির্মাণ চুক্তি পিছিয়ে গেল

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ জমিসংক্রান্ত জটিলতার অবসান না হওয়ায় ১৪২ তলাবিশিষ্ট স্বপ্নের আইকনিক টাওয়ার নির্মাণের চুক্তি পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। এ ভবনটি নির্মাণের জন্য পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের মাস্টারপ্ল্যানেও কিছুটা সংশোধন আনা হচ্ছে। আইকনিক টাওয়ারটি দুই হাজার ফুটের বেশি উচ্চতার হওয়ায় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন কর্তৃপক্ষের অনাপত্তিপত্রের জন্য ইতোমধ্যেই চিঠি দিয়েছে রাজউক। এছাড়া পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং (মতামত) প্রয়োজন। এখনও আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং সম্পন্ন হয়নি। এসব কারণেও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কেপিসি গ্রুপের সঙ্গে আপাতত চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়নি। তবে চলতি জুন মাসের শেষনাগাদ কেপিসি গ্রুপের কর্ণধার কালী প্রদীপ চৌধুরী বাংলাদেশে আসছেন। আর তখনই আইকনিক টাওয়ার নির্মাণ সংক্রান্ত চুক্তিটি সম্পন্ন হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ভবিষ্যতে যাতে কোন আইনী জটিলতা না হয় সেজন্য আগামী ২৮ জুন আন্তর্জাতিক নিলাম আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজউক (রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ)। নিলামে আন্তর্জাতিক নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোও অংশ নিতে পারবে। নিলাম প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে প্রকল্প এলাকার প্রযুক্তিগত সমীক্ষার (টেকনিক্যাল স্টাডি) দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটের ব্যুরো অব রিসার্চ, টেস্টিং এ্যান্ড কনসালটেশন বিভাগকে। এ প্রকল্পের আইনগত দিকগুলো দেখভাল করছেন ব্যারিস্টার তানজীব উল আলম। জানা গেছে, আইকনিক টাওয়ার নির্মাণে ৭০ একর জমির প্রয়োজন হবে। শুধু তাই নয়, প্রকল্পটি ঘিরে পূর্বাচল এবং এর নিকটস্থ এলাকা নিয়ে একটি স্বতন্ত্র মহানগর গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আর তাই প্রস্তাবিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, এবার আমি একটি স্বপ্নের কথা বলতে চাই। আমার এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রবৃদ্ধি সঞ্চালক ও জনবান্ধব একটি বিশেষ প্রকল্প সম্পর্কে। পূর্বাচল ও এর নিকটস্থ এলাকা নিয়ে একটি পৃথক মহানগর গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ মহানগরে পিপিপি’র আদলে একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে একটি আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার, একটি আধুনিক স্পোর্টস কমপ্লেক্স এবং ১৪২ তলা বিশিষ্ট আইকনিক টাওয়ার স্থাপন করা হবে। তিনি বলেন, কনভেনশন সেন্টারের মূল মিলনায়তনে ৫ হাজার লোকের বসার ব্যবস্থা থাকবে এবং স্পোর্টস কমপ্লেক্সের মূল স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা হবে ৫০ হাজার। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। অর্থনৈতিক কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি হবে। প্রকল্পের সুফল পাবে সকল পর্যায়ের জনগণ। তিনি বলেন, দেশী-বিদেশী সবার কাছেই স্থাপনাগুলো বিশেষভাবে আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন স্থান হিসেবে সমাদৃত হবে। জানা গেছে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে কেপিসি গ্রুপের চেয়ারম্যান কালী প্রদীপ চৌধুরী ভবনটি নির্মাণের ইচ্ছা প্রকাশ করে অর্থমন্ত্রী মুহিতের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে কেপিসি গ্রুপের পক্ষে অর্থমন্ত্রী ১০০ একর জায়গার ওপর মূল ভবনসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনাগুলো নির্মাণের জন্য গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় নবেম্বর মাসে পূর্বাচলের সিবিডি অংশে ওই জায়গা দিতে রাজি হয়। রাজউকের কর্মকর্তারা বলছেন, ভবনটিতে আন্তর্জাতিক কনভেনশন, এক্সিবিশন সেন্টারসহ থাকবে হোটেল, থিয়েটার ও শপিং মল। এটিকে ঘিরে তৈরি হবে আরও কয়েকটি ছোট-বড় ভবন এবং অনেক নান্দনিক স্থাপনা। উচ্চতার দিক থেকে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবনটি হচ্ছে দুবাইয়ে অবস্থিত ১৬৫ তলার বুর্জ আল খলিফা। পূর্বাচলে এ ভবনটি নির্মিত হলে তা হবে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ উচ্চতার। এটি নির্মাণে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা (১.২ বিলিয়ন ডলার)। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কেপিসি গ্রুপই আইকনিক টাওয়ার নির্মাণ করবে। তবে জমি প্রাপ্তিসংক্রান্ত বিষয়গুলোর এখনও চূড়ান্ত সুরাহা হয়নি। আর তাই আপাতত চুক্তিটি পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রস্তাবিত বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। চলতি জুন মাসের শেষনাগাদ চুক্তিটি করা হতে পারে।
×