ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সমুদ্র সম্পদ অনুসন্ধান

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ১১ জুন ২০১৬

সমুদ্র সম্পদ অনুসন্ধান

সমুদ্র জয়ের পর চার বছর কেটে গেছে। বিলম্বে হলেও সমুদ্রে জরিপ, গবেষণা ও সম্পদ অনুসন্ধানে ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরকে (জিএসবি) সরকারের নির্দেশ প্রদান বড় সুসংবাদ। এটা ঠিক যে, বিশাল সমুদ্রসীমা জয়ের ফলে বাংলাদেশের সামনে জাহাজ নির্মাণ শিল্প ও বন্দরসুবিধা বৃদ্ধি, মৎস্য ও জলজ সম্পদসহ সমুদ্র তলদেশে থাকা প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ এবং পর্যটন ব্যবসা সম্প্রসারণ প্রভৃতি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সমুদ্রসীমা নিষ্পত্তির পর সমুদ্র বিষয়ে মহাপরিকল্পনা, জাতীয় নিরাপত্তা ও সম্পদ উত্তোলনে জাতীয় সক্ষমতা বিকাশের কাজটি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। আইনগত কর্তৃত্ব কার্যকর কর্তৃত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই সেটি জরুরী। যতটা জানা তার চেয়ে অনেক বেশি অজানা বিশাল সম্পদের আধার এই সমুদ্র। এই সমুদ্রসীমায় বাংলাদেশের কর্তৃত্ব নিশ্চিত করা এবং সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গেই বিবেচনা করতে হবে। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যাচ্ছে ২০১৩ সালে বঙ্গোপসাগর থেকে ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড ৮০ লাখ টন মাছ শিকার করেছে। অথচ আমরা মাত্র ৭৩ হাজার টন মাছ শিকার করেছি। আধুনিক মাছ ধরার ট্রলার ও সরঞ্জামের অভাবে মৎস্য সম্পদ আহরণে আমরা পিছিয়ে থাকলে সেটা হবে দুর্ভাগ্যজনক। বিগত বছরগুলোতেও দেখা গেছে উপকূল অঞ্চল থেকে বঙ্গোপসাগরের ৬৬৪ কিলোমিটার পর্যন্ত বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা বিস্তৃত হলেও এর মধ্যে ৬০০ কিলোমিটার সমুদ্রসীমা থেকে বিশেষ কিছু আহরণ করা সম্ভব হয়নি। ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা মামলায় বিজয়ের পরে বঙ্গোপসাগর এলাকার দুইশ’ নটিক্যাল মাইলের বাইরে মহীসোপানে বাংলাদেশের প্রবেশাধিকার সুরক্ষিত হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সমুদ্র অঞ্চলের আয়তন এখন এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার। ভারত-মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র মামলায় বিজয়ের পরে বাংলাদেশের আওতায় পড়া সমুদ্র অঞ্চলের সম্পদের ক্ষেত্র ও অর্থনৈতিক মূল্য নির্ধারণ করা জরুরী। বঙ্গোপসাগর দেশের সার্বিক সম্পদের একটি বিশাল উৎস। এই সমুদ্র সীমানার মধ্যে শুধু বিপুল মৎস্য ভা-ার নয়, রয়েছে অফুরন্ত প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদের ভা-ারও। বিশেষ গঠন-প্রকৃতির কারণেই তেল-গ্যাসসহ নানা খনিজ সম্পদ সঞ্চিত রয়েছে এই সাগরের তলদেশে। প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে বিশ্বের অনেক দেশই তাদের টেকসই উন্নয়ন কর্মসূূচীর মাধ্যমে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। বাংলাদেশের মতো একটি উপকূলীয় রাষ্ট্রের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে, বিশেষ করে সমুদ্র পরিবহন ও বন্দর সহযোগিতা বৃদ্ধি, মৎস্য আহরণ, মৎস্য রফতানি, পর্যটন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সামুদ্রিক সম্পদ আহরণ, কৃত্রিম দ্বীপ নির্মাণ সর্বোপরি জীববিজ্ঞান ও সমুদ্রবিজ্ঞান প্রভৃতি ক্ষেত্রে উন্নয়নের একটি নতুন দ্বার উন্মোচিত হওয়ার উত্তম সম্ভাবনা রয়েছে। সকল সম্ভাবনাকে সর্বোতভাবে কাজে লাগানোই এখন আসল লক্ষ্য। সমুদ্রের তলদেশে সম্পদ অনুসন্ধান এবং তা উত্তোলন বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন বিষয়। এ থেকে অঢেল প্রাপ্তির সম্ভাবনা উজ্জ্বল। তাই সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষকে অত্যন্ত বিচক্ষণতা, পেশাদারিত্ব ও আন্তরিকতার সঙ্গে অগ্রসর হতে হবে। এ লক্ষ্যে আমাদের মিত্র দেশগুলোর সহযোগিতা গ্রহণের বেলায়ও দূরদর্শিতার পরিচয় রাখতে হবে; সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। সমুদ্রের সম্পদ আহরণ ও ব্যবহারের জন্য সবচেয়ে বড় প্রয়োজন যে মানবসম্পদের উন্নয়ন, সে কথা নানা মহল থেকেই উচ্চারিত হয়ে আসছে। এ জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই।
×