ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিত্যপণ্যের দাম বাড়ালে কঠোর ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ১০ জুন ২০১৬

নিত্যপণ্যের দাম বাড়ালে কঠোর ব্যবস্থা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রমজানে কারসাজি করে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ালে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, পবিত্র রমজান মাস সংযমের মাস। এ মাসে ব্যবসায়ীদের সংযমী হওয়া উচিত। তাই ব্যবসায়ীরাও সংযমের মধ্য দিয়েই ব্যবসা করবেনÑ এমন আশা প্রকাশ করে বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, অতিরিক্ত মুনাফার চেষ্টা করলে মীর গ্রুপের মতো অবস্থা হবে। বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ, বিপণন ও মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক পর্যালোচনা সভায় তোফায়েল আহমেদ এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক রাখতে চাই। তবে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে পণ্যের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করলে প্রয়োজনে কঠিন পদক্ষেপ নেয়া হবে। ভোক্তা অধিকার রক্ষায় সরকার কোন ধরনের ছাড় দিবে না। তিনি বলেন, উৎপাদনকারী ও বিক্রেতা ইচ্ছে করে বাজারে পণ্য কম সরবরাহ করে থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে বাজারে চিনি ছাড়া অন্যসব পণ্যের দাম স্বাভাবিক আছে। খুব শীঘ্রই চিনির মূল্য স্বাভাবিক হয়ে আসবে। মুক্তবাজার অর্থনীতির এই যুগে পণ্যমূল্যের উর্ধগতি নিয়ন্ত্রণে দাম বেঁধে দেয়ার বদলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ আলোচনার ওপরও গুরুত্ব দেন মন্ত্রী। প্রসঙ্গত, মিল থেকে ৪৬ টাকা কেজি দরে কেনা চিনি পাইকারিতে ৫৮ টাকায় বিক্রি করায় চট্টগ্রাম নগরীর খাতুনগঞ্জের হাজী মীর আহমদ ট্রেডার্সকে গত বুধবার ২০ লাখ টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। ওই সময় মীর গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুস সালাম ও সেলস ম্যানেজার জানে আলমকে ২০ লাখ টাকা করে জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় মীর গ্রুপের খাতুনগঞ্জ কার্যালয় সিলগালা ও তিন কর্মচারীকে আটক করা হলেও পরে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। এ ঘটনার কথা উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, অতিরিক্ত মুনাফার চেষ্টা করলে দায়ী ব্যবসায়ীর পরিণতি মীর গ্রুপের মতো হবে। তিনি বলেন, আমরা রোজা থাকি, তারাবি নামাজ পড়ি, ইফতার করি, সেহরি খাই। এটা হলো সংযমের মাস। সবাই যেন আমরা সংযমী হই। ব্যবসায়ীদের দাবি মেনে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর না করার কথা মনে করিয়ে দিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা বাজেট দিয়েছি, ভ্যাট নিয়ে অনেক কথাবার্তা হয়েছে। আমরা সেটা কার্যকর করি নাই। তারপর আমরা একটা সহনীয় বাজেট দিয়েছি। বাজেট দেয়ার পর বাজারে অন্য রকম প্রতিক্রিয়া হয়, সেটা এবার হয় নাই। পরিশোধনকারীরা ৪৮ টাকায় চিনি বাজারে ছাড়ে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, কিছু কিছু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করতে চায়। চিনি ৪৮ টাকায় পাইকারি বাজারে যায়, আমরা এটা জেনে গেলাম। এখন কেউ এটার দাম যদি বাড়াতে চেষ্টা করে, এ ক্ষেত্রে যারা কারসাজি করে, তাদের বিরুদ্ধে কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করব। তবে চিনি ও ছোলার দাম বৃদ্ধির পেছনে কয়েকটি যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে মন্তব্য করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দেশী চিনি শিল্পকে রক্ষায় সরকার ট্যারিফ বাড়িয়েছিল। এরপরও চিনির কেজি ৬০ টাকার নিচে থাকার কথা। হয়তো আকস্মিকভাবে কেউ কারসাজি করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা ধরা পড়েছে। চিনি যারা পরিশোধন করে তারা ৪৮ টাকায় বিক্রি করে। পাইকাররা যদি ২-৩ টাকা ব্যবসা করে, খুচরা বিক্রেতারা যদি ৫ টাকা লাভ করে, তারপরও এটা ৫৭-৫৮ টাকার বেশি হওয়া উচিত না। সরকার খুচরা পর্যায়ে চিনির দাম বেঁধে দিবে কি না জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে এটা করা যায় না। এটা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাজও না। এটা করলে কাজেও আসে না। তবে তিনি ভোক্তা অধিদফতরকে বাজার মনিটরিং জোরদার করার আহ্বান জানান। ছোলার বিষয়ে তিনি বলেন, এক বছর আগে আন্তর্জাতিক বাজারে এর দাম ছিল ৫২ টাকা কেজি। এখন তা বেড়ে ৭৩ টাকা হয়েছে-৬০ ভাগ দাম বেড়েছে। এটা রোজার সময় মানুষ খায়। আমরাও খাই। ভারতে ১০ লাখ টন ঘাটতি আছে। অস্ট্রেলিয়ায় ১০ লাখ টন উদ্বৃত্ত থাকলেও ভারত পুরোটা নিয়ে নিচ্ছে। তারপরও আমার মনে হয়, প্রথম যে উর্ধগতি ছিল-এখন তা স্বাভাবিক হয়ে আসছে। গণমাধ্যমকেও এ বিষয়ে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, যারা নিজেরা পণ্য কেনে না, বাজারেও যায় না, খবরও রাখে না, এমন অনেকে টকশোতে গিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়। সভায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মোঃ শফিকুল ইসলাম লস্কর বলেন, চিনির দাম কেন বাড়লো-সেটা মনিটরিং করা হবে। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে সভায় জানানো হয়, বর্তমানে পর্যাপ্ত চিনি মজুত রয়েছে। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ৪৮ টাকা দরে বিভিন্ন স্থানে ট্রাকে চিনি বিক্রি করা হচ্ছে। চিনি সঙ্কটের কোন সম্ভাবনা নেই। চিনি ব্যবসায়ীদের পক্ষে সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান সভায় জানান, দেশে পর্যাপ্ত চিনি মজুত রয়েছে এবং সরবরাহে কোন সমস্যা নেই। মিল গেটে চিনি ৪৮ টাকা দরে বিক্রয় করা হচ্ছে। দেশে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৫ হাজার মেট্রিক টন চিনির চাহিদা রয়েছে। এখন প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ হাজার মেট্রিক টন চিনি সরবরাহ করা হচ্ছে।
×