ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ছদ্মবেশে জঙ্গী ॥ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ১০ জুন ২০১৬

ছদ্মবেশে জঙ্গী ॥ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে বিভিন্ন স্থানে ঘাঁপটি মেরে থাকা জেএমবি ও আরএসও ক্যাডার অনেকে ছদ্মবেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পড়া-লেখা এবং চাকরি করে চললেও কিলিং কর্মকা-ে নির্ধারিত সময়ে ঠিকই হাজির হয়ে থাকে। বড় ধরনের কিলিং ও নাশকতায় আরাকান বিদ্রোহী গ্রুপ রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) এবং জেএমবি একসঙ্গে কাজ করে থাকে বলে তথ্য মিলেছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার বিভিন্ন স্থানে কেজি স্কুল, প্রাথমিক বিদ্যালয় ও অর্ধশতাধিক কওমী মাদ্রাসা, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিচয় গোপন করে নিয়মিত পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গা বংশোদ্ভূত অন্তত ১০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। এমনকি সরকারী ও সেরকারী অনেক দফতরে রোহিঙ্গারা চাকরি করে যাচ্ছে। এদের মধ্যে চট্টগ্রামের কমপক্ষে ১০টি কওমী মাদ্রাসায় রয়েছে ৫ সহস্রাধিক রোহিঙ্গা সন্তান। বিদেশী এনজিও সংস্থার মদদ ও আর্থিক সহায়তায় কতিপয় লোভী শিক্ষকের কারণে কৌশলে ওইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ওরা অনায়াসে ভর্তি হচ্ছে। রোহিঙ্গা জঙ্গী আরএসও’র অর্থায়নে পরিচালিত একাধিক কওমী মাদ্রাসার বহু রোহিঙ্গা ছাত্র এবং বিদেশী এনজিও সংস্থার মদদ ও আর্থিক সহায়তায় নির্ধারিত শিক্ষার্থীরা জঙ্গীপনায় জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পেট্রোলবোমা নিক্ষেপসহ বিভিন্ন নাশকতামূলক কর্মকা-ে ভাড়ায় গিয়ে থাকে ওইসব রোহিঙ্গা শিক্ষার্থী। স্কুল ও মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে এসএসসি, এইচএসসি পাস করে রোহিঙ্গারা নির্বিঘেœ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছে। নিজেদের বাংলাদেশী দাবি করে পরীক্ষা পাসের সনদ দেখিয়ে জাতীয় সনদও হাতিয়ে নিয়েছে ওরা। স্থানীয়দের মেয়ে বিয়ে করে শক্তি করেছে রোহিঙ্গা শিক্ষার্থীর অনেকে। মিয়ানমারে নিপীড়িত মুসলিম হিসেবে সহানুভূতি দেখিয়ে মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থান দেয়া হলেও ওসব রোহিঙ্গা শিক্ষার্থী একদিন এ দেশের জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকার শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গ। সূত্রে জানা যায়, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে আরাকান বিদ্রোহী গ্রুপের (আরএসও) ক্যাডাররা ইতোপূর্বে বিভিন্ন নাশকতা, নৈরাজ্য সৃষ্টির কাজে অংশগ্রহণ ছাড়াও জঙ্গীদের সঙ্গে বোমা হামলায়ও যোগ দিয়েছে এমন অভিযোগ আছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। রোহিঙ্গা জঙ্গীরা পার্বত্য বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলাতে আরএসওর অর্থায়নে মাদ্রাসা-মক্তব ও এতিমখানা গড়ে তুলতে বেশি আগ্রহী কেন? তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে অভিজ্ঞজন মত প্রকাশ করেছেন। এদিকে এক শ্রেণীর ধান্ধাবাজ নেতার কারণে সমাজসেবা অধিদফতরসহ বিভিন্ন ফাউন্ডেশন থেকে সরকারের বরাদ্দকৃত বার্ষিক বাজেট চলে যাচ্ছে রোহিঙ্গা জঙ্গীদের গড়া একাধিক এতিমখানায়। আর এ কাজে মোটা অঙ্কের একটি ভাগ যাচ্ছে সরকারদলীয় কতিপয় নেতার পকেটে। দেশের এতিম অসহায় শিশু-কিশোর এতিমদের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারী রসদ সামগ্রী ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে এতিম নামধারী ওই রোহিঙ্গা সন্তানরা। কক্সবাজার সরকারী কলেজের পেছনে সরকারী জায়গা দখল করে রোহিঙ্গা জঙ্গী বিভিন্ন মামলার আসামি হাফেজ ছলাহুল ইসলাম পরিচালনাধীন ইমাম মুসলিম ইসলামিক সেন্টার (র) ও ইসলামপুর জুম নগরে এবং পিএমখালী পাহাড়ে গড়ে ওঠা জামিনে মুক্ত রোহিঙ্গা জঙ্গী আবু ছালেহ পরিচালনাধীন মাদ্রাসায় বহু রোহিঙ্গা এবং আরএসও ক্যাডার রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ পেয়ে প্রশাসন ওসব রোহিঙ্গা আস্তানায় অভিযানে যাওয়ার আগেই আগাম খবর পৌঁছে যায় রোহিঙ্গা জঙ্গীগোষ্ঠীর কাছে। ফলে তারা সতর্ক হয়ে পড়ে।
×