ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রাজিলের সাম্বা ছন্দে হাইতির হাহাকার

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ১০ জুন ২০১৬

ব্রাজিলের সাম্বা ছন্দে হাইতির হাহাকার

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ক্ষুধার্ত বাঘের খাঁচায় পড়লে কি হয় তা হাড়ে হাড়ে বুঝতে পেরেছে হাইতি। পুঁচকে এই দেশ শতবর্ষী কোপা আমেরিকা ফুটবলে পরাশক্তি ব্রাজিলের মুখোমুখি হয়েছিল। বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার ভোরে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার অরলান্ডোর সিটরাস বোলে ‘বি’ গ্রুপের ম্যাচে ব্রাজিলের সাম্বা ছন্দে রীতিমতো নাস্তানাবুদ হয়েছে হাইতি। একপেশে ম্যাচে এ্যাটাকিং মিডফিল্ডার ফিলিপ কাউটিনহোর দুর্দান্ত হ্যাটট্রিকে হাইতিকে ৭-১ গোলের বিশাল ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়েছে রেকর্ড সর্বোচ্চ পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। নিজেদের প্রথম ম্যাচে ইকুয়েডরের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করলেও এ ম্যাচে পুরনো সাম্বা ছন্দ ফিরে পায় সেলেসাওরা। নেইমার না থাকলেও পুরো ম্যাচে নান্দনিক ফুটবল উপহার দেন কার্লোস দুঙ্গার শিষ্যরা। ব্রাজিলের বড় জয়ে কাউটিনহোর হ্যাটট্রিক ছাড়াও জোড়া গোল করেন রেনাটো অগাস্টো। একটি করে গোল করেন গাব্রিয়েল ও লুকাস লিমা। ইকুয়েডর ও পেরুর মধ্যকার গ্রুপের অপর ম্যাচটি ২-২ গোলে ড্র হয়। হাইতিকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালের পথে এক ধাপ এগিয়ে গেছে ব্রাজিল। দুই ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে তারা। গ্রুপের শেষ ম্যাচে ড্র করলেও শেষ আটে পৌঁছে যাবে আসরের আটবারের চ্যাম্পিয়নরা। এর আগে দুটি প্রীতি ম্যাচে মুখোমুখি হলেও প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্টে এই প্রথম ব্রাজিলের বিরুদ্ধে খেলল হাইতি। আগের দুই মোকাবেলায় ১০ গোল হজম করেছিল তারা। বিপরীতে একটিও দিতে পারেনি। এবার ‘লাকি সেভেন’ গোল হজম করলেও হাইতি হয়ত তৃপ্তি খুঁজে নেবে ব্রাজিলের জালে একবার বল পাঠাতে পেরে। পুরো ম্যাচেই অসাধারণ পারফরমেন্স প্রদর্শন করেন কাউটিনহো। গত মৌসুমে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের ফর্ম ধরে রেখে নিজের হ্যাটট্রিকও তুলে নেন ২৩ বছর বয়সী এই এ্যাটাকিং মিডফিল্ডার। তার করা প্রতিটি গোলই ছিল দৃষ্টিনন্দন। গত মৌসুমে লিভারপুলের হয়ে সব ধরনের প্রতিযোগিতায় ১২ গোল করেন। ওই পারফরমেন্স জাতীয় দলে আনতে পারায় কাউটিনহোকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন কোচ দুঙ্গা। শুরু থেকেই আধিপত্য বিস্তার করে খেলতে থাকা ব্রাজিলকে ১৪ ও ২৯ মিনিটে দুই গোল করে এগিয়ে দেন কাউটিনহো। ৩৫ মিনিটে অগাস্টোর গোলে ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় পেলের দেশ। বিরতির পর আরও ক্ষুরধার হয়ে ওঠে সেলেসাওদের আক্রমণ। ৫৯ মিনিটে ব্রাজিলের হয়ে চতুর্থ গোল করেন গাব্রিয়েল। ৬৭ মিনিটে পাঁচ নম্বরটি আসে লিমার পা থেকে। ৭০ মিনিটে হাইতির পক্ষে সান্ত¡নাসূচক একমাত্র গোলটি করেন জেমস মার্সেলিন। ৮৬ মিনিটে অগাস্টো নিজের জোড়া গোল পূর্ণ করেন। ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তে (৯২ মিনিট) আরও একটি দৃষ্টিনন্দন গোল করে নিজের হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন কাউটিনহো। ম্যাচ শেষে ব্রাজিল কোচ কার্লোস দুঙ্গা বলেন, কাউটিনহো সত্যি সত্যিই তাঁকে যে সুযোগটা দেয়া হয়েছে, সেটা কাজে লাগিয়েছে। আমরা তাঁকে অনেক দিন ধরেই বলছি, ‘লিভারপুলের কাউটিনহো’ হয়ে উঠতে। একটু উদ্যোগী হয়ে, নিজের মতো করেই দলের নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকা গ্রহণ করতে। তিনি আরও বলেন, জয়টা দারুণ। কিন্তু এই জয়ে খুব বেশি উল্লসিত হওয়ার কিছু নেই। আমরা এখনও কিছুই করিনি। এই ম্যাচটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল, ম্যাচটা আমরা জিততে পেরেছি। এবার আমাদের লক্ষ্য পেরুর বিরুদ্ধে জয়। হাইতি মিডফিল্ডার জিন-মার্ক আলেক্সান্ডার ব্রাজিলের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচের স্মৃতি সবসময়ই মনে থাকবে বলে জানিয়েছেন। যদিও এত বড় ব্যবধানে হার কোনভাবেই কাম্য নয়। তিনি বলেন, এটা আমাদের জন্য একটা তিক্ত অভিজ্ঞতা। এ ধরনের পরাজয় সারাজীবন মনে থাকে। ব্রাজিলের মতো দলের বিরুদ্ধে ভুলের কোন জায়গা নেই। তারা আমাদের সেই ভুলেরই শাস্তি দিয়েছে। আরেক ম্যাচে আরিজোনার গ্লেনডেলে দুই গোলে পিছিয়ে থেকেও দারুণভাবে ম্যাচে ফিরে আসে ইকুয়েডর। এর ফলে তারা পেরুর কোয়ার্টার ফাইনালের পথেই কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়নি বরং নিজেদের আশাও টিকিয়ে রেখেছে। ওয়েস্টহ্যাম ইউনাইটেডের এনার ভ্যালেন্সিয়া ও ব্রাজিলিয়ান ভিত্তিক মিডফিল্ডার মিলার বোলানোসের দুই গোলে ম্যাচে সমতা ফেরায় ইকুয়েডর। এর আগে পেরু ৫ ও ১৩ মিনিটে ক্রিশ্চিয়ান কুয়েভা ও এডিসন ফ্লোরেসের দুই গোলে এগিয়ে যায়।
×