ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপিকে ডোবাচ্ছে মাতা-পুত্র

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ৭ জুন ২০১৬

বিএনপিকে ডোবাচ্ছে মাতা-পুত্র

মাতা খালেদা ও পুত্র তারেক একের পর এক অদ্ভুত, পৈশাচিক কৌশল ও ষড়যন্ত্র অবলম্বন করে শুধু যে বিএনপিকে ডোবাচ্ছে তা নয়, বরং বাংলাদেশ এবং বাঙালী জাতির ভাবমূর্তিও ধ্বংস করছে। একই সঙ্গে জাতির অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দেশের শান্তি-সমৃদ্ধিও ধ্বংস করে ’৭১-এর পরাজিত শক্তির লক্ষ্য পূরণে দেশবিরোধী, বর্তমান সরকারবিরোধী অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এই দুই পুতুলকে অবশ্য নেপথ্য থেকে নাচাচ্ছে তাদের পরিচালক ‘বস্’, আইএসআই, আইএসআইয়ের দীর্ঘকালের সহচর সিআইএ এবং সিআইয়ের চিরকালের বন্ধু মোসাদ। এ কথা এখন জনগণের কাছে আর কি অপ্রকাশ্য আছে? এই প্রেক্ষাপট একদিনে সৃষ্টি হয়নি। জানতে ও বুঝতে হলে একটু পিছনে ফিরে যেতে হবে। কেন এরশাদ জিয়া হত্যার বিচার না করে তেরজন মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তার বিচার করেছিল শুধু সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধে? চট্টগ্রামের সেনা কমান্ডার, জিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকা মেজর জেনারেল মঞ্জুরকে পুলিশের হাত থেকে সেনা কর্তৃত্বে আনার সঙ্গে সঙ্গেই গুলি করে হত্যা করা হলো কার নির্দেশে? জিয়া হত্যার সব তথ্য মঞ্জুর জানাতে উদগ্রীব ছিলেন এবং সেটি হতে না দিতেই যে মঞ্জুরকে হত্যা করা হয়, তা তো এখন সত্য। আরেকটি ঘটনা প্রমাণ করে যে, ’৭১-এর পরাজিত পাকিস্তান ও যুদ্ধাপরাধীর পক্ষের সেই শক্তি একদিকে ক্ষমতায় বসাতে এরশাদকে বেছে নিল, অন্যদিকে ’৭১-এর প্রথমাংশে পাকিস্তানী সেনা অধ্যুষিত ঢাকা সেনানিবাসে একা বাসরত রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ জিয়াপতœী খালেদাকে বিএনপির নেতৃত্বে বসাল। এই সমীকরণটি দেশের ’৮১ পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতিতে যুদ্ধাপরাধী পক্ষকে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করে। এ দীর্ঘ সময়ে জিয়াউর রহমানের দ্বারা দেশী যুদ্ধাপরাধী ও বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার খুনীরা দায়মুক্তি পেয়ে, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি চর্চার পূর্ণ সুযোগ পেয়ে, মন্ত্রিত্ব পেয়ে, মধ্যপ্রাচ্যসহ আইএসআইয়ের অর্থ সহায়তায় ব্যবসা-বাণিজ্য করে বিপুল ধনসম্পদের মালিক হয়ে ওঠে। পাশাপাশি তাদের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ধর্মভিত্তিক ভ্রান্ত আদর্শ প্রচারণা ও এক্ষেত্রে নতুন প্রজন্মের পাকিস্তানপন্থী, প্রাচীন খেলাফত শরিয়াপন্থী বাংলাদেশ গঠনে ও জঙ্গী খুনী গোষ্ঠী তৈরিতে পূর্ণ মনোযোগ দেয়ার দীর্ঘ সময় লাভ করে। যা হোক, বিএনপি-জামায়াতের সুরক্ষার ঢাল হিসেবে জন্ম নিয়েছিল প্রকৃতপক্ষে মুক্তিযুদ্ধের তিন শত্রু আইএসআই, সিআইএ ও যুক্তরাষ্ট্রের সে সময়ের সরকার ও পাকিস্তানী ভুট্টো সরকারের পরিকল্পনা ও ইচ্ছায়। একইসঙ্গে বাংলাদেশী যুদ্ধাপরাধীদের যে অবিশ্বাস্য সুযোগ-সুবিধা দিয়ে জিয়া সুপ্রতিষ্ঠিত ও শক্তিশালী করে নিহত হয়েছিল, সেটি অব্যাহত রাখার জন্য বিশ্বস্ত এরশাদকে ক্ষমতায় রেখে জিয়াপতœী, যে আগে থেকেই পাকিস্তানী সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরিচিত ছিল সেই খালেদা জিয়াকে আইএসআইয়ের উদ্দেশ্য পূরণের জন্য যথেষ্ট দক্ষ করে তুলতে প্রকৃতই সময় দরকার ছিল যা সে পেয়েছে এরশাদের দশ বছরে। সুতরাং জিয়া হত্যার বিচার খালেদা এরশাদের কাছে দাবি করতে অক্ষম ছিল। এমনকি নিজেও ক্ষমতাসীন হয়ে এ বিচার করতে পারেনি। মোটামুটি এক দশক সময়ে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী সেজে যুদ্ধাপরাধীদের প্রকৃত মিত্র হয়ে তাদের সব রকমের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশকে পাকিস্তানের আদলে জঙ্গী, জেহাদীদের অভয়ারণ্য হিসেবে গড়ে তুলতে খালেদা প্রশিক্ষিত হয়ে ওঠে। সম্ভবত নেপথ্য শক্তির সাজানো স্বৈরাচারবিরোধী ’৯০-এর আন্দোলনে প্রকৃতপক্ষে বিএনপির চাইতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও সমমনা দলগুলোর নেতাকর্মীদের অনেক বেশি আত্মত্যাগের মাধ্যমে এরশাদ (সম্ভবত আইএসআইয়ের নির্দেশে) ক্ষমতা হস্তান্তর করে। ’৯১-এর নির্বাচনে জয়ী খালেদার নেতৃত্বে বিএনপি প্রথমবার সরকার গঠন করে। কাকতালীয়ভাবে ’৮১ সালে খালেদা জিয়া এবং শেখ হাসিনা একসঙ্গেই রাজনীতিচর্চা শুরু করেন। প্রথমজন পাকিস্তান ও যুদ্ধাপরাধীর পক্ষে, দ্বিতীয়জন তার বিপরীতে মুক্তিযুদ্ধের প্রতিনিধিত্ব করেন। একদিকে যুদ্ধাপরাধীর পক্ষে বড় হয়ে রাষ্ট্রবিরোধী অপরাজনীতির চর্চা করে আজ পঞ্চাশোর্ধ হয়েছে তারেক রহমান। অন্যদিকে পঁয়তাল্লিশ বছর বয়সী শেখ হাসিনা পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় হয়েছেন তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, তার বোন সায়মা ওয়াজেদ হয়েছেন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু মনস্তত্ত্ববিদ। ’৭৫ থেকে আজ পর্যন্ত জিয়া, খালেদা ও তারেক বিএনপি নামের দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব ধরে রাখলেও বিএনপিকে গণতন্ত্রমুখী, জনকল্যাণকামী রাজনৈতিক দল হিসেবে কখনোই গড়ে তোলেনি। কারণ, দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল গঠন তাদের বা নেপথ্য শক্তির উদ্দেশ্য কখনোই ছিল না। তাদের প্রথম ও প্রধান উদ্দেশ্য ছিল এখনও আছেÑ বাংলাদেশকে ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হতে বাধা দেয়া, এবং শরিয়াপন্থী ধর্মীয় রাষ্ট্রে পরিণত করা যা হবে অকার্যকর, অনুন্নত, দরিদ্র, হিজাবে বন্দী নারী ও টুপি দাড়ির নারী স্বাধীনতা বিদ্বেষী পুরুষের দেশ। আরও হবে জঙ্গীদের ভূস্বর্গ। বর্তমানে ওরা, অর্থাৎ আইএসআই, সিআইএ এবং মোসাদের পরিকল্পনায় দেশকে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান ও আদিবাসীহীন রাষ্ট্রে পরিণত করার পরিকল্পনা খালেদা-তারেক বাস্তবায়ন করছে। ওরা প্রথম পর্যায়ে হিন্দুর জমি দখল, নারী ধর্ষণ ও বসতবাড়ি ভাংচুর, শুরু করে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ওরা টার্গেট কিলিং শুরু করে, হিন্দু ব্যবসায়ী, স্বর্ণকার, পুরোহিত, শিয়া ধর্মাবলম্বী, আহমদীয়া, খ্রীস্টান যাজক, বিদেশী খ্রীস্টান, বৌদ্ধ আদিবাসী ভিক্ষু, হামলা করে ভাংচুর করে মন্দির, প্যাগোডা, দেব, দেবী, বুদ্ধমূর্তি, ইমামবাড়ায় বোমা হামলা করে। দখল করতে শুরু করে হিন্দুদের, আদিবাসীদের জমি, ভিটা, ক্ষেত, খামার, দোকান-ব্যবসা। তৃতীয় পর্যায়ে ওরা মফস্বলের ছোট শহরে হিন্দু স্কুল শিক্ষকদের মিথ্যা ইসলাম ধর্ম অবমাননার প্রচারণা চালিয়ে হিন্দুরা দক্ষ শিক্ষক হিসেবে পরিচিত হয়েও তাদের এমন হয়রানির শিকার করা হচ্ছে যাতে তারা নিজেরাই দেশত্যাগ করে। এ কাজটি খুবই সূক্ষ্ম পরিকল্পনার মাধ্যমে পরিচালনা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ভীত, সন্ত্রস্ত প্রায় একশ’ নারী, পুরুষ, শিশু দেশত্যাগ করেছে বলে জানা গেছে। এর পাশাপাশি মুসলমান কিন্তু বাউল, সুফী দর্শনে বিশ্বাসীদের টার্গেট কিলিংয়ের শিকার করা হচ্ছে। খুন হয়েছেন সুফী-বাউলপ্রেমী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, হোমিও চিকিৎসক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হামলায় আহত হয়েছেন। এর আগে ওরা তরুণ, তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ, মুক্তিযুদ্ধপন্থীদের, বিশেষত যারা ঢাকার শাহবাগসহ সব জেলায় গণজাগরণমঞ্চ গঠন করে জনগণের মনে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি করেছিল, তাদের অনেককে ‘ইসলাম অবমাননাকারী’ গণ্য করে হত্যা করেছে। সর্বশেষ জুলহাস মান্নান, নাট্যকর্মী তনয় এদের হত্যার শিকার। এসব হত্যাকারী দেশী জঙ্গী, তবে মোসাদ কর্তৃক নিযুক্ত এবং প্রশিক্ষিত কিনা সেটি স্পষ্ট নয়। তবে, এটা খুবই সন্দেহজনক যে, ওইসব ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তিকে খুন করার সঙ্গে সঙ্গে নিউইয়র্কভিত্তিক সাইট ইনটেলিজেন্স গ্রুপ সেটি ইহুদী রমণী পরিচালনা করে দাবি করছেÑ এ খুন আইএস করেছে। এ দেশটি আইএস আক্রান্ত, এটি প্রমাণ করার চেষ্টা চলছে প্রমাণিত হলে কাদের লাভ হবে- জনগণকে সেটি উপলব্ধি করতে হবে। স্মর্তব্য, শোনা যায় আল কায়েদা-তালেবান প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে এদেশে এক সময় আয়মান আল জাওয়াহিরি এসেছিল। কিছুদিন পরে তারা ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে নাকি বলে গেছেÑ এদেশে তালেবানের জন্ম দেয়া যাবে না, এরা ভিন্ন জাতের মুসলমান। এটা শোনা কথা। তবে খাঁটি শতভাগ। ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতায় দেখা যাচ্ছে, নির্বাচন, গণতন্ত্র, এমনকি দল গঠনÑ এসবে কখনই খালেদা-তারেক আগ্রহী ছিল না। তাদের পোষা জঙ্গীদের দ্বারা নববর্ষের বোমা হামলা থেকে শুরু করে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, দশ ট্রাক অস্ত্র খালাস, সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মী খুন হয়েছে, শাহ কিবরিয়া, আহসানুল্লাহ মাস্টারসহ বহু টার্গেট কিলিং করেছে, পেট্রোলবোমা হামলা করে শতাধিক নারী, পুরুষ, শিশু হত্যা করেছে, এখনও করে যাচ্ছে। যে জঙ্গীদের দ্বারা তারা হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটাচ্ছে তারা তাদেরই মিত্র জামায়াত ও তাদের দ্বারা জন্ম নেয়া দু’দলের কাছ থেকে আশ্রয়-প্রশ্রয়প্রাপ্ত। মুক্তিযুদ্ধপন্থী, প্রগতিশীল ও সংখ্যালঘুদের ওপর ক্রমাগত হামলা চালিয়ে দেশকে ইসলামী শরিয়াভিত্তিক জঙ্গী জেহাদীদের আবাসে পরিণত করাই এদের একমাত্র লক্ষ্য।
×