ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইকুয়েডর ধাক্কায় শুরু ব্রাজিলের

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ৬ জুন ২০১৬

ইকুয়েডর ধাক্কায় শুরু ব্রাজিলের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ একেই বলে বুঝি নিয়তি! যে ইকুয়েডরকে সব সময় বলে-কয়ে হারিয়েছে সেই তাদের সঙ্গে ধাক্কা খেয়েই শতবর্ষী কোপা আমেরিকা ফুটবলে মিশন শুরু করেছে ব্রাজিল। বাংলাদেশ সময় রবিবার সকালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার প্যাসাডেনার রোজ বোল স্টেডিয়ামে ‘বি’ গ্রুপে দু’দলের ম্যাচটি গোলশূন্য ড্র হয়। একই গ্রুপের আরেক ম্যাচে দুর্বল হাইতিকে কোনরকমে ১-০ গোলে হারিয়ে শুভসূচনা করেছে পেরু। ‘এ’ গ্রুপের কোস্টারিকা ও প্যারাগুয়ের মধ্যকার ম্যাচটিও গোলশূন্য অমীমাংসিতভাবে শেষ হয়। ইনজুরির কারণে কোপা আমেরিকার ব্রাজিল দল থেকে ছিটকে গেছেন কাকা, ডগলাস কোস্টার মতো তারকারা। সময়ের অন্যতম সেরা ফুটবলার নেইমারও নেই ব্রাজিলের কোপা আমেরিকা দলে। আর তাদের অনুপস্থিতিটাও বেশ ভালমতো টের পেয়েছে ব্রাজিল। ম্যাচে বেশিরভাগ সময় বলের দখল নিজেদের কাছে রাখতে পারলেও গোল করার মতো তেমন ভাল সুযোগ সৃষ্টি করতে পারেননি উলিয়ান, জোনাস, কাউটিনহোরা। দ্বিতীয়ার্ধে রেফারির একটি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ব্রাজিলের পক্ষে না গেলে হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হতো তাদের। এবারের কোপায় ব্রাজিল অনেকটা ভাঙাচোরা দল নিয়ে মিশন শুরু করেছে। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপের বেশিরভাগ ফুটবলারই বর্তমান দলে নেই। ইকুয়েডরের বিরুদ্ধে ম্যাচে গেল বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলা ব্রাজিল দলের মাত্র একজন খেলেছেন। তিনি হচ্ছে চেলসি মিডফিল্ডার উইলিয়ান। ম্যাচের ৭৬ মিনিটে তাকে তুলে নেন কোচ কার্লোস দুঙ্গা। এই ম্যাচের আগে কোপা আমেরিকাতে ১৩ বার মুখোমুখি হয়েছিল ব্রাজিল ও ইকুয়েডর। এর মধ্যে ১২টি ম্যাচেই জয় পায় পেলের দেশ। একটি ম্যাচ ড্র হয়। সেটি ১৯৬৩ সালের আসরে। অর্থাৎ দীর্ঘ ৫৩ বছর পর আবারও ব্রাজিলকে জয়বঞ্চিত করল ইকুয়েডর। ম্যাচটি জিতে ইতিহাস গড়ারও সুযোগ ছিল সাম্প্রতিক সময়ে তুখোড় ফর্মে থাকা দলটির। কিন্তু রেফারির বিতর্কিত সিদ্ধান্তে সেটা হয়নি। ম্যাচের ৬৬ মিনিটে ব্রাজিলের জালে বল ঢুকিয়েও দিয়েছিল ইকুয়েডর। স্ট্রাইকার মিলার বোলানোসের ক্রস ব্রাজিলের গোলরক্ষক এ্যালিসন বেকারের হাতে লেগে জালে জড়িয়ে যায়। কিন্তু সহকারী রেফারির বিতর্কিত সিদ্ধান্তে ওই যাত্রা বেঁচে যায় আটবারের চাম্পিয়ন ব্রাজিল। ফলে থেমে যায় ইকুয়েডরের উদ্যাপনও। গোলটি হয়ে গেলে হার দিয়েই শুরু হতো ব্রাজিলের! সেক্ষেত্রে সেলেসাওদের বিরুদ্ধে কোপা আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম জয়ের স্বাদ নেয়াও হয়ে যেতে ইকুয়েডরের। গোলটি বাতিল করার কারণ হিসেবে রেফারি জানান, ‘বোলানোসের ক্রসের আগে বলটি লাইন ক্রস করেছিল।’ অবশ্য পরে টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, বল লাইন ক্রস করেনি। ম্যাচের শুরুটা হয় দারুণ উত্তেজনার মধ্য দিয়ে। পঞ্চম মিনিটে ব্রাজিলের রক্ষণভাগে ভীতি ছড়ান ইকুয়েডরের এনার ভ্যালেন্সিয়া। ডান দিক দিয়ে দৌড়ে গিয়ে বল বাড়ান বোলানোসের দিকে। বোলানোসও নেন জোরালো শট। কিন্তু বলটা চলে যায় গোলপোস্টের কিছুটা বাইরে দিয়ে। দুই মিনিট পর ব্রাজিলও দেয় দারুণ জবাব। বেশ খানিকটা দৌড়ে গিয়ে কাউটিনহোর দিকে বল বাড়ান উইলিয়ান। কিন্তু লিভারপুল তারকার শট দারুণভাবে রুখে দেন ইকুয়েডরের গোলরক্ষক এস্টেবান ড্রিয়ের। বিরতির পর ইকুয়েডরকে গোলবঞ্চিত করার পর ৮৩ মিনিটে গোলের ভাল সুযোগ পেয়েছিল বিখ্যাত হলুদ জার্সিধারীরা। উইলিয়ানের বদলি হিসেবে খেলতে নেমে নায়ক হয়ে যেতে পারতেন লুকাস মউরা। রেনেটা আগুস্টোর পাস থেকে গোলমুখে হেড নিয়েছিলেন মউরা। তার হেড ইকুয়েডরের গোলরক্ষককে ফাঁকি দিলেও, গোলবার ঘেঁষে বাইরে চলে যায়। ফলে হতাশা সঙ্গী করেই মিশন শুরু করতে হয় সাম্বা ছন্দের দেশটিকে। ইকুয়েডরের বিরুদ্ধে ড্র করায় সঙ্গত কারণেই হতাশ ব্রাজিলের খেলোয়াড়রা। কিন্তু এরপরও ইতিবাচক দলটির কোচ কার্লোস দুঙ্গা। তিনি ম্যাচ শেষে বলেন, আমাদের আরও ভাল খেলা উচিত ছিল। সামনে আরও ভাল খেলতে হবে। এ ম্যাচে গোল ছাড়া আমরা সবকিছুই ভাল করেছি। প্রথম ম্যাচে ভাল দলের বিরুদ্ধে আমরা যেভাবে খেলেছি তা ভালই হয়েছে। মজার বিষয় হচ্ছে, এই মাঠেই ১৯৯৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে ইতালিকে হারিয়ে চতুর্থ বিশ্বকাপ জয় করেছিল ব্রাজিল। সে সময় সেলেসাওদের অধিনায়ক ছিলেন বর্তমান কোচ দুঙ্গা। অন্যদিকে গোল বাতিলের দুঃখে পুড়েছেন ইকুয়েডরের কোচ গুস্টাবো কুইনটেরোস। তিনি বলেন, ম্যাচ শেষে বাতিল হওয়া গোলটির ভিডিও আমি ২৫ বার দেখেছি। বল লাইন ক্রস করেনি। এভাবে গোলটি বাদ না করলেও পারতেন সহকারী রেফারি।
×