ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আর্মেনীয় গণহত্যা

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ৬ জুন ২০১৬

আর্মেনীয় গণহত্যা

ঘটনা শত বছর আগের, প্রথম মহাযুদ্ধ আমলের। তবে স্বীকৃতি মিলল এতদিন পরে জার্মানির পার্লামেন্টে। বৃহস্পতিবার দেশটির পার্লামেন্টে এঞ্জেলা মের্কেলের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার উত্থাপিত এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব পাস হয় সর্বসম্মতিক্রমে। প্রস্তাবটি সমর্থন করে বিরোধী দলে থাকা গ্রীন পার্টিও। এখানে উল্লেখ করা আবশ্যক যে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ১৫ লাখ আর্মেনীয়কে হত্যা করে অটোমান তুর্কীরা। লাখ লাখ আর্মেনীয়কে করা হয় বাস্তুচ্যুত। তবে তুরস্ক বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। তুরস্কের ভাষ্য, সুনির্দিষ্ট কোন জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে হত্যাযজ্ঞ পরিচালিত হলে তাকে গণহত্যা বলা যেতে পারে। তুরস্ক সরকারের দাবি, সে সময় একটি নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী হিসেবে আর্মেনীয়দের টার্গেট করে গণহত্যা চালানো হয়নি। অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের সময় বহু তুর্কী নাগরিকও হত্যার শিকার হয়েছেন। তবে তুরস্কের এই দাবি ধোপে টেকে না। বরং সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত তুর্কী ঔপন্যাসিক ওরহান পামুকসহ সে দেশের অনেক শিল্পী-সাহিত্যিক-সাংবাদিক-চলচ্চিত্রকারও আর্মেনীয় হত্যাযজ্ঞকে গণহত্যা বলে অভিহিত করে থাকেন। এর জন্য তারা বিভিন্ন সময়ে নিগৃহীতও হয়েছেন। ইতোপূর্বে জার্মানির আগে ফ্রান্স, রাশিয়াসহ ২০টিরও বেশি দেশ একে গণহত্যা বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। স্বীকৃতিদাতাদের মধ্যে পোপ ফ্রান্সিসও রয়েছেন। তবে প্রস্তাবটি জার্মানির পার্লামেন্টে পাস হওয়ার প্রাক্কালে তুরস্ক বরাবরের মতোই তীব্র প্রতিবাদ করে আসছিল। এমনকি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী এই বলে হুমকিও দিয়েছেন যে, প্রস্তাবটি পাস হলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে প্রভাব পড়তে পারে। ইতোমধ্যে জার্মানিতে তুরস্কের রাষ্ট্রদূতকে দেশে ডেকে পাঠানো হয়েছে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করার জন্য। অন্যদিকে আঙ্কারায় জার্মানির চার্জ দ্য এ্যাফেয়ার্সকেও তলব করা হয়েছে দেশে। এক প্রতিক্রিয়ায় আর্মেনিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, জার্মানির পার্লামেন্টের এই স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এক মূল্যবান অর্জন। বাস্তবে তুরস্কের এহেন অবস্থানের কোন ব্যাখ্যা বা সমর্থন পাওয়া যায় না। আর্মেনীয় গণহত্যার বিষয়টিকে অস্বীকার করে তুরস্ক প্রকৃতপক্ষে ইতিহাসের সত্যকেই অস্বীকার করতে চাইছে। তুরস্কের এই মনোভাবের সঙ্গে অনেকাংশে মিল খুঁজে পাওয়া যায় বাংলাদেশের প্রতি সে দেশের অবস্থান থেকে। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকেই অজ্ঞাত কারণে তুরস্ক এর প্রতিবাদ করে আসছে। ধৃষ্টতা দেখিয়ে তারা এমনকি এই বিচার বন্ধ করতেও বলেছে ঢাকাকে। সর্বশেষ যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির দ- কার্যকরের পর তুরস্ক তার রাষ্ট্রদূতকে ১১ মে ডেকে পাঠায় ঢাকা থেকে। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে বাংলাদেশও আঙ্কারা থেকে রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠিয়েছে। অবশ্য ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে এতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে কোন প্রভাব পড়বে না। বাস্তবে অবশ্য এর সমর্থন মেলে না। তুরস্ক সে দেশে নিজামীসহ আরও কোন কোন যুদ্ধাপরাধীর নামে রাস্তা করার ঘোষণা দিয়েছে। তারা এমনকি যুদ্ধাপরাধী ইস্যুতে প্রতিক্রিয়া না দেখানোয় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমালোচনাও করেছে। এবার যখন আর্মেনীয় গণহত্যার বিষয়টি নতুন করে চেপে বসতে চাইছে তুরস্কের ঘাড়ে, তখন নতুন করে বিষিয়ে উঠছে পুরনো ক্ষত। যেমনটি হয়ে থাকে পাকিস্তানের ক্ষেত্রে। পাকিস্তান সরকার, সেদেশের সেনাবাহিনী ও এদেশীয় দোসররা যেমন বরাবরই বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার বিষয়টি অস্বীকার করে থাকে, অনুরূপ অপপ্রয়াস পায় তুরস্কও। তবে তাতে ইতিহাসের সত্য চাপা থাকে না কখনই।
×