ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ওয়াশিংটনে পঞ্চম অংশীদারি সংলাপ ২৩ ও ২৪ জুন

জিএসপি সুবিধা পেতে সহযোগিতা চাইবে ঢাকা

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৫ জুন ২০১৬

জিএসপি সুবিধা পেতে সহযোগিতা চাইবে ঢাকা

তৌহিদুর রহমান ॥ সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধ, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা, মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান শক্তিশালীকরণ, ঢাকায় অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ইত্যাদি ইস্যুতে ঢাকার জোরালো অবস্থান চায় ওয়াশিংটন। অপরদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা, সাইবার নিরাপত্তা, আগাম তথ্য বিনিময় ইত্যাদি ক্ষেত্রে ওয়াশিংটনের কাছে সহযোগিতা চাইবে ঢাকা। চলতি মাসে ওয়াশিংটনে অংশীদারি সংলাপে দুই দেশের পক্ষে থেকে এসব বিষয় তুলে ধরা হচ্ছে। বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বহুমাত্রিক সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে আগামী ২৩ জুন ওয়াশিংটনে দুই দিনব্যাপী পঞ্চম অংশীদারি সংলাপ শুরু হচ্ছে। নিরাপত্তা সহযোগিতা, উন্নয়ন ও সুশাসন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগসহ বিশদ দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক বিষয়াদি আরও বিস্তৃত পরিসরে ও গভীরভাবে আলোচনার জন্য অংশীদারি সংলাপ দুই দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ ফোরাম হিসেবে বিবেচিত। এই ফোরামের মাধ্যমেই দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা ধীরে ধীরে আরও বিস্তৃত হচ্ছে। অংশীদারি সংলাপ সামনে রেখে ঢাকা-ওয়াশিংটনের মধ্যে এখন আলোচনা চলছে। ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে যেসব বিষয়ে আলোচনায় জোর দিতে চায়, তা ইতোমধ্যেই ঢাকাকে অবহিত করা হয়েছে। এবারের সংলাপে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি অগ্রাধিকার দিচ্ছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামিক স্টেট (আইএস) উত্থানের পরে বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের ঝুঁকি রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বার বার অভিযোগ করে আসছে বাংলাদেশে আইএসের অস্তিত্ব রয়েছে। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সে অভিযোগ অস্বীকার করা হচ্ছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে বাংলাদেশের সর্বশেষ পদক্ষেপ জানতে চায় বাংলাদেশ। এ বিষয়ে ওয়াশিংটন সর্বোচ্চ সহযোগিতাও দিতে চায়। মধ্যপ্রাচ্যে আইএসের উত্থানের পর বিশ্বজুড়ে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। জঙ্গী গোষ্ঠী বিমানবন্দরে হামলা ও বিমান ছিনতাই করতে পারে এমন আশঙ্কা করে আসছে দেশটি। সে কারণে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিতে তাগিদ দিয়ে আসছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এবারের সংলাপে বিমানবন্দরের নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে ওয়াশিংটন। বাংলাদেশে একের পর এক ব্লগার, লেখক, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর হামলায় উদ্বিগ্ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এসব হামলার ঘটনায় দোষীদের দ্রুতবিচার চায় দেশটি। এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার কর্মকর্তা জুলহাস মান্নান হত্যাকা-ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ রয়েছে। জুলহাস মান্নান হত্যার পরে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে যুক্তরাষ্ট্রের জোরাল আহ্বান জানিয়েছে। এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধার (জিএসপি) বিষয়টি ঝুলে আছে। বাংলাদেশ সরকার অভিযোগ করে আসছে, পোশাক শিল্পের উন্নয়নে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া সবগুলো শর্তই পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। তারপরও জিএসপি সুবিধা দিচ্ছে না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি রাজনৈতিক কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে এই সুবিধা দিচ্ছে না বলেও অভিযোগ করে আসছেন সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও এমপিরা। এবারের সংলাপে জিএসপি সুবিধা নিয়ে আলোচনা তুলবে ঢাকা। ঢাকার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে নিজেদের নাগরিক ও দূতাবাসের কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। তবে তাদের নিরাপত্তায় বাংলাদেশ সরকার যেসব ব্যবস্থা নিয়েছে সেসব অবহিত করবে ঢাকা। এছাড়া আইএস ইস্যুতে ওয়াশিংটনের কাছ থেকে তথ্য বিনিময় করতে চায় ঢাকা। কেননা আইএস ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বার বার কথা বলে আসলেও সরকারকে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য দেয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। আইএস ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আগাম তথ্য পাওয়ার বিষয়টি আলোচনায় আনতে চায় ঢাকা। ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠেয় এই সংলাপ সামনে রেখে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একাধিক বৈঠক হয়েছে। এছাড়া পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকের সঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের মধ্যেও আলোচনা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ছাড়াও বাণিজ্য, বিদ্যুত ও জ্বালানি, শ্রম ও জনশক্তি, স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এই সংলাপে অংশ নেবেন। এবারের সংলাপে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, উন্নয়ন সহযোগিতা, খাদ্য নিরাপত্তা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ইত্যাদি বিষয়গুলোও আলোচনায় আসতে পারে। গত বছর ৩০ এপ্রিল ও পহেলা মে ঢাকায় চতুর্থ অংশীদারি সংলাপ হয়েছিল। এতে যোগ দিয়েছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের রাজনৈতিক বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ওয়েন্ডি শারম্যান এবং দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল। বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে তৃতীয় অংশীদারি সংলাপ ২০১৪ সালের ২৮-২৯ অক্টোবর ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হয়। পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকের নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল ওই সংলাপে অংশ নেন। বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিতীয় অংশীদারি সংলাপ ২০১৩ সালের ২৬ ও ২৭ মে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে অংশ নেন মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের সহকারী সচিব ওয়েন্ডি শারম্যান। বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক। ২০১২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর প্রথম সংলাপ যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হয়। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের ঢাকা সফরে অংশীদারী সংলাপের বিষয়ে এক চুক্তি সই হয়। তারপর থেকে প্রতি বছর একবার ঢাকা পরের বার ওয়াশিংটনে এই সংলাপের আয়োজন করা হয়।
×