ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

উষ্ণতম বছর পার করছে পৃথিবী

অনাকাক্সিক্ষত গরমে গলদঘর্ম দেশ, প্রাণ যায় অবস্থা

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ৫ জুন ২০১৬

অনাকাক্সিক্ষত গরমে গলদঘর্ম দেশ, প্রাণ যায় অবস্থা

মোরসালিন মিজান ॥ সূর্য ও পৃথিবীর দূরত্ব কি হঠাৎ কমে গেল? দু’য়ের মধ্যকার আনুমানিক দূরত্ব তো ১৪.৯৬ কোটি কিলোমিটার। ঘুচে গেল কখন? এত যে তাপ, হাঁসফাঁস করা গরম, কোত্থেকে আসে? মাঝে মধ্যেই এমন প্রশ্ন মনে উঁকি দিচ্ছে। যে কারও মনে উঁকি দেবে। কারণটি এই যে, গরমের সঙ্গে আর পারা যাচ্ছে না। ষড়ঋতুর দেশ। দুই মাস পর পর রূপ বদলায় প্রকৃতি। বদলানোর কথা। কিন্তু সব কেমন যেন উলট পালট হয়ে গেছে। এই যেমন এখন গ্রীষ্ম বিদায়ের ক্ষণ। প্রাক-বর্ষা। বৃষ্টিও মোটামুটি শুরু হয়ে গেছে। বইছে ঝিরিঝিরি হাওয়াও। কিন্তু বাকি সময়টা রেগে মেগে অস্থির সূয্যি মামা। এত তাপ বিকিরণ করে যে, প্রাণ ওষ্ঠাগত। সহ্য করা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। বাইরে বের হতে না হতেই ঘামে গা ভিজে যাচ্ছে। ত্বকে জ্বালা ধরছে। তবে কেবল বঙ্গদেশে নয়, গোটা দুনিয়াই উত্তপ্ত। আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণতা। একটির পর একটি রেকর্ড ভেঙে খান খান হয়ে যাচ্ছে। রীতিমতো বিপদের মুখে যেন পৃথিবী। মূলত কার্বন নিঃসরণের কারণে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। গবেষণা বলছে, নিঃসরণের এই হার গত সাড়ে ৬ কোটি বছরের মধ্যে এখন সবচেয়ে বেশি। গত বছরের উষ্ণতা নিয়ে অনেক কথা হয়েছিল। সকল রেকর্ড অতিক্রম করেছিল ২০১৫। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা এবং দেশটির সমুদ্র্র ও বায়ুম-ল সংক্রান্ত প্রশাসনের বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে জনা গিয়েছিল, ওই বছর বিশ্বের ভূভাগে ও সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা ছিল দশমিক নয় শূন্য সেলসিয়াস বা এক দশমিক ৬২ ডিগ্রি ফারেনহাইট। চলতি বছর শুরু হতে না হতেই নতুন রেকর্ড। এপ্রিলে গড় তাপমাত্রার চেয়ে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১ ডিগ্রী সেলসিয়াসের উপরে চলে যায়। নাসার মতে, ১৯৫১-১৯৮০ পর্যন্ত বিশ্বে যে গড় তাপমাত্রা ছিল, গত কয়েক মাসে তার থেকে রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। এ অবস্থা চলমান থাকলে ২০১৬ সাল পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণতম বছর হতে পারে বলে আশঙ্কা। বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাবটি সমানভাবেই যেন পড়ছে বাংলাদেশে। আবহাওয়া অফিস জানায়, গত ১০০ বছরে বাংলাদেশের তাপমাত্রা বেড়েছে ১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ড এক গবেষণায় বলেছে, শুধু ঢাকা শহরেই মে মাসের গড় তাপমাত্রা ১৯৯৫ সালের পর ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। শনিবার ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অফিস বলছে, গ্রীষ্ম শেষ ও বর্ষা শুরু হচ্ছে। ঋতু পরিবর্তনের এই মাঝামাঝি সময়টাতে গরম একটু বেশি থাকে। অবশ্য, এই বেশি কত বেশি মানুষ তা টের পাচ্ছে! এখন ষড়ঋতু অনেকটাই খাতাপত্রে। নাতিশীতোষ্ণ সময় গত হয়েছে। চলমান আছে অস্বাভাবিক একটি অবস্থা। এর ফলেই সূর্যের তাপে গা পুড়ে যাওয়ার অবস্থা হচ্ছে। এমনকি যখন সূর্য নেই, তখনও ভ্যাপসা গরম। এই গরমও সহ্য করা কঠিন। গরমের কারণে দুর্ভোগ বাড়ছে। বেড়েই চলেছে। এক জরিপে দেখা গেছে, ২০৩০ সাল নাগাদ বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ১০-১৫ ভাগ এবং ২০৭৫ নাগাদ তা প্রায় ২৭ ভাগ বেড়ে যাবে। আর তা হলে বাতাসে আর্দ্রতার মাত্রা বাড়বে। তাতেই বাড়বে গরম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ শহিদুল ইসলাম অবশ্য এর জন্য মানুষকেই দায়ী করেছেন। তার মতে, হঠাৎ করেই তাপমাত্রা বেড়ে গেছেÑ এমন নয়। মানুষ যা করছে তারই প্রভাব দেখা যাচ্ছে প্রকৃতিতে। এ অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলে জনস্বাস্থ্য, প্রকৃতি ও পরিবেশের ওপর আরও বিরূপ প্রভাব পড়বে। তাই সকলকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। তার মতে, প্রকৃতির প্রতি সহানুভূতিশীল হলে প্রকৃতিও উদার হবে। সেই উদার প্রকৃতিই বাঁচাতে পারে পৃথিবীকে। প্রিয় বাংলাদেশকে।
×