ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছেন

হাসপাতালে আনন্দেই কাটছে ট্রি-ম্যান বাজনদারের

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ৪ জুন ২০১৬

হাসপাতালে আনন্দেই কাটছে ট্রি-ম্যান বাজনদারের

নিয়াজ আহমেদ লাবু ॥ অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর চিকিৎসকের আন্তরিক চিকিৎসা সেবায় ক্রমেই সুস্থ হয়ে উঠছেন বাংলাদেশে প্রথম ট্রি-ম্যান (হিউম্যান পারপোরিয়াস ভাইরাস) রোগী আবুল বাজনদার। ইতোমধ্যে বৃক্ষমানব আবুলের হাত-পায়ে তিন দফা সফল অস্ত্রোপচার হয়েছে। সেখানে শিকড়গুলো কেটে ফেলা হয়েছে। সুস্থতার পথে এগিয়ে চলছেন তিনি। পাঁচ মাস ধরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন তিনি। স্ত্রী হালিমা ও মা আমিনা বেগমের সঙ্গে হাসি-আনন্দেই দিন কাটছে তার। অপেক্ষার প্রহর গুনছে কখন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাবেন। প্রধানমন্ত্রী সব সময় তার খোঁজখবর নিচ্ছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ অনেকে তাকে সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন। জাতীয় বার্ন ইউনিট প্রকল্প সমন্বয়ক ডাঃ সামন্তলাল সেন জনকণ্ঠকে জানান, প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম, অধ্যাপক রায়হানা আউয়াল ও অধ্যাপক মোঃ সাজ্জাদ খন্দকারসহ ৯ সদস্যের একটি চিকিৎসক দল আবুল বাজনদারের সফল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করেছেন। এই নয় সদস্য ছাড়া এ অপারেশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন যৌন ও চর্ম রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক কবির চৌধুরী। তিনি জানান, ইতোমধ্যে তার দু’হাত এবং পায়ে তিনদফা অস্ত্রোপচার করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, আরও ১ বছর তার চিকিৎসা প্রয়োজন। তবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে ২-৩ বছর লাগতে পারে আবুলের। ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের পঞ্চম তলার ৫১৫ নম্বর কক্ষে ট্রি-ম্যান রোগে আক্রান্ত আবুল বাজনদার তার অনুভূতি ব্যক্ত করে জানান, আমি সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে চাই। মা, স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে সৎভাবে উপার্জন করে বাঁচতে চাই। তিনি জানান চিকিৎসক, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী আমার খোঁজখবর নিচ্ছেন। কয়েকদিন আগে আমার চিকিৎসক কবির স্যার (তার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডাঃ কবির চৌধুরী) গ্রামে তিনকাঠা জমি ও ঘর করার জন্য ৬ লাখ টাকা দিয়েছেন। আমি দোয়া করি। খোদা যেন তাদের ভাল রাখেন। সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে আবুল বাজনদার জানান, আমি আগের চেয়ে অনেকটা ভাল আছি। বিছানায় শুয়ে অনেক কথাই মনে করি। আমার সন্তান (জান্নাতুল ফেরদৌস তাহেরা) সব সময় বলে আব্বু বাড়ি চল, বাড়ি যাই। তখন আমার মনে হয়, সুস্থ হয়ে এলে কি আমি বাড়ি যেতে পারব? এ সময় তার স্ত্রী হালিমা ও মা আমিনা বেগম পাশেই ছিলেন। শুক্রবার সকালেও হাসপাতালের বেডে আবুল বাজনদার পুরো হাতে-পায়ে ব্যান্ডেজ মোড়ানো অবস্থায় স্ত্রী হালিমার সঙ্গে খোশ মেজাজে গল্প করছিলেন। ঢুকতেই তিনি বলেন, আমি সুস্থ আছি। ভাল আছি। আপনারা দোয়া করবেন। কয়েকদিন পর পর ব্যান্ডেজ খুলে ড্রেসিং করা হচ্ছে। স্যারেরা বলেছেন, পুরো সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় বাড়ি ফিরে যেতে এক বছর সময় লাগবে। ডাঃ সামন্তলাল সেন জানান, বাজনদারের সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক। ড্রেসিং করা হচ্ছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রিপোর্ট দেখে ওষুধ-পথ্য দেয়া হচ্ছে। জানা গেছে, খুলনার পাইকগাছার সরলবাতিখালি গ্রামের মানিক বাজনদারের ছেলে আবুল বাজনদার আট ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট। ঘরে রয়েছে জান্নাতুল ফেরদৌস তাহেরা নামে একটি কন্যাসন্তান। বিরল রোগ ‘ট্রি-ম্যান সিনড্রোম’ (চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এপিডার্মোডিসপাসিয়াভের সিফারমিস)-এর চিকিৎসার জন্য গত ৩০ জানুয়ারি ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তি হন খুলনার ভ্যানচালক আবুল বাজনদার। তার দুই হাতে প্রায় ১০ কেজি ওজনের আঁচিল ছিল। পায়েও প্রায় কাছাকাছি ওজনের আঁচিল ছিল। পেশায় ভ্যানচালক আবুলের চিকিৎসার খরচ দিচ্ছে সরকার। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সপ্তাহখানেক পর ‘ট্রি-ম্যান’ আবুল বাজনদারের প্রথম অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন হয়। প্রথম দফায় ডান হাতের পুরো পাঁচটি আঙ্গুলে অস্ত্রোপচার করা হয়। কেটে ফেলা হয় তার ডান হাতে গজানো ‘শিকড়’র মতো দেখতে আঁচিলগুলো। অস্ত্রোপচারের পর আঙ্গুলগুলো নাড়াতে পারছেন আবুল। দুই পায়েও অস্ত্রোপচার করে আঁচিলগুলো কেটে ফেলা হয়। এর পর থেকে পা-ও নাড়াচড়া করতে পারছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, আবুল বাজনদারের মতো বিশ্বে এ রোগে আক্রান্ত মাত্র দুজনকে পাওয়া গেছে। একজন রোমানিয়ার, অন্যজন ইন্দোনেশিয়ার। গণমাধ্যমে আসা ইন্দোনেশিয়ার বৃক্ষমানব গত ৩০ জানুয়ারি মারা গেছেন। এইচপিভি একগুচ্ছ ভাইরাসের নাম; যা শরীরের ত্বক ও আর্দ্র ঝিল্লিতে সংক্রমিত হয়। এ পর্যন্ত একশ’র বেশি ধরনের এইচপিভি ভাইরাসের হদিস পাওয়া গেছে। এর মধ্যে অন্তত ৩০ ধরনের এইচপিভি জননেন্দ্রীয়কে আক্রান্ত করতে পারে। সব ধরনের এইচপিভিই শরীরে আঁচিলের কারণ। এ সংক্রমণ খুব দ্রুত গতিতে ত্বকের বাইরের স্তরে ছড়িয়ে পড়ে।
×