ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

এ কেমন আচরণ!

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ৪ জুন ২০১৬

এ কেমন আচরণ!

নিজ তালিকা অনুসারে প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তা নিয়োগ না দেয়ায় চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে মারধর করেছেন স্থানীয় এমপি। বুধবার বাঁশখালী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে ডেকে নেন স্থানীয় এমপি। এক পর্যায়ে কার্যালয়ের দরজা বন্ধ করে নির্বাচন কর্মকর্তাকে মারধর করেন তিনি। কিছুদিন আগে তার নিজ এলাকায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণকে কেন্দ্র করে চার গ্রামবাসী নিহত হওয়ার ঘটনায় ব্যাপক সমালোচিত হন এই সাংসদ। এমনকি সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে ত্রাণ দেয়া নিয়ে দলীয়করণের অভিযোগও তার বিরুদ্ধে ওঠে। এ ছাড়া নানা সময়ে দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের ওপর তার উগ্র আচরণের কথা শোনা যায়; যা কোন সভ্য দেশে চলতে পারে না। এতদিন মুখ বন্ধ থাকলেও বুধবারের ঘটনার পর এই এমপির বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের অভিযোগ এসেছে স্থানীয়দের কাছ থেকে। এই এমপির আমলনামা সম্পর্কে সরকারী দলের উচ্চ পর্যায় ওয়াকিবহাল নয়, তাও বিশ্বাসযোগ্য নয়। দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে এতদিন কেন তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কোন ব্যবস্থা নেয়া হলো না, তাকে সতর্ক করা হলো না, সেটাই প্রশ্ন। নির্বাচন কর্মকর্তাকে মারধরের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। একই সঙ্গে বাঁশখালীর সব কটি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। এমপি এবং তাদের আত্মীয়-স্বজনের এরকম ঔদ্ধত্যের দৃষ্টান্ত অতীতেও আমরা দেখেছি। কিছুদিন আগে এক মহিলা এমপির ছেলে মদ্যপ অবস্থায় গুলি চালিয়ে দুজন মানুষের প্রাণ হরণ করেছে, গাইবান্ধার এক এমপি স্বয়ং একটা শিশুকেও গুলিবিদ্ধ করেছেন। কক্সবাজারের এক এমপির কথা তো সবারই জানা। জনপ্রতিনিধি হিসেবে একজন সাংসদ কেবল আইন প্রণেতাই নন, আইনের রক্ষকও। নির্বাচিত হওয়ার পর সাংসদ শপথ নিয়েছেন ব্যক্তিস্বার্থে কিছু করবেন না এবং সংবিধান অনুযায়ী তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন। বাঁশখালীর সাংসদ সেই শপথ কেবল ভঙ্গই করেননি, প্রজাতন্ত্রের অফিসে বসে প্রজাতন্ত্রের এক কর্মকর্তাকে মারধর করে ফৌজদারি অপরাধ করেছেন। প্রজাতন্ত্রের কোন কর্মকর্তাকে আঘাত করা মানে প্রজাতন্ত্রকেই আঘাত করার শামিল। এই ঘটনায় সাংসদ একাধিক অপরাধ করেছেন। তিনি প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তা নিয়োগের তালিকা নির্বাচন কর্মকর্তার অফিসে পাঠাতে পারেন না। কিন্তু তিনি পাঠিয়েছেন। তিনি নির্বাচনের বিষয়ে কথা বলতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে কোন সরকারী অফিসে ডেকে পাঠাতে পারেন না। তাও করেছেন সেই কর্মকর্তার অনুপস্থিতিতে। কে বা কারা নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন সেটা সম্পূর্ণ নির্বাচন কমিশনের বিষয়। এখানে সাংসদ কথা বলতে পারেন না। তালিকার কারও ব্যাপারে আপত্তি থাকলে তথ্য-প্রমাণসহ আপত্তি জানাতে পারেন। এটাই আইনানুগ পদক্ষেপ। তিনি তা করেননি। তার সবচেয়ে গর্হিত কাজটি হলো প্রজাতন্ত্রের এক কর্মকর্তাকে মারধর করা। জনগণ তাকে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা দিলেও আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার ক্ষমতা দেয়নি। এটি নির্বাচনী কাজে সুস্পষ্ট বাধা দান। অবশ্য সাংসদ মারধরের কথা অস্বীকার করেছেন। তবে মিডিয়ার তথ্য মতে নির্বাচন কর্মকর্তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসাও নিতে হয়েছে। ভয়ে তিনি চট্টগ্রামে চলে আসতে বাধ্য হয়েছেন। আসলে কতিপয় সাংসদ যেভাবে আইন হাতে তুলে নিচ্ছেন, সরকারী কর্মকর্তা থেকে শুরু করে স্কুল শিক্ষককে মারধর বা অপমান করছেন, তাতে দেশে আইনের শাসন চরম ব্যাহত হবে। আইনের শাসন ভেঙ্গে পড়ুক তা কেউ চায় না, সরকারও না। দেশের বিভিন্ন স্থানে দলীয় কিছু ক্ষমতাধর ব্যক্তি ও পদাধিকারীর অনিয়ন্ত্রিত আচরণে সাধারণ নাগরিকের কাছে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে, সরকারের সাফল্য ম্লান হচ্ছে, তাদের এহেন কা- রুখতে এখনই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
×