ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদে অর্থমন্ত্রীর আগামী অর্থবছরের জন্য তিন লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার বাজেট পেশ অনুন্নয়ন রাজস্ব ব্যয় দুই লাখ ১৫ হাজার ৭৪৪ এবং উন্নয়ন ব্যয় এক লাখ ১৭ হাজার ২৭ কোটি টাকা রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা ;###;বিশেষ বৈশিষ্ট্য প্রবৃদ্ধি, উন্নয়

অগ্রযাত্রার বাজেট

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৩ জুন ২০১৬

অগ্রযাত্রার বাজেট

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধিশালী দেশে উন্নীত করতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বৃহস্পতিবার আগামীর পথে অগ্রযাত্রার বাজেট দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের এ ১৮তম বাজেটের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, প্রবৃদ্ধি, উন্নয়ন ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা। সে লক্ষ্যেই অর্থমন্ত্রীর এবারের বাজেটের অগ্রযাত্রা। এ অগ্রযাত্রায় অর্থমন্ত্রী সঙ্গী করেছেন বিনিয়োগকে। অর্থাৎ বিনিয়োগই হবে অর্থমন্ত্রীর অগ্রযাত্রার অন্যতম হাতিয়ার। এজন্য বাজেটে অর্থমন্ত্রী সরকারী এবং ব্যক্তি উভয় খাতের বিনিয়োগের ব্যাপারে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছেন। নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ বর্তমানে জিডিপির ২১-২২ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ আছে। অর্থমন্ত্রী আট শতাংশ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য এই হার ২৭ শতাংশ নিয়ে যেতে চান। এজন্য নতুন বাজেটে তিনি ব্যাপকভিত্তিক অবকাঠামো উন্নয়নের প্রতি জোর দিয়েছেন। গুণগত মান বজায় রেখে সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়নে এগিয়ে এসেছেন। উন্নত অবকাঠামো হলেই ব্যক্তি উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে এগিয়ে আসবে। বাড়বে কর্মসংস্থান। দেশে চাহিদা বৃদ্ধি পেয়ে অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হবে। সেই সঙ্গে বাড়বে প্রবৃদ্ধি। তবে উন্নয়নের জন্য দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন। দক্ষ মানবসম্পদ প্রয়োজন শিল্প-কারখানা পরিচালনার জন্য। সেজন্য প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার জন্য নানা কর্মসূচী গ্রহণের কথা বলেছেন। সমৃদ্ধিশালী দেশ গড়ার অগ্রযাত্রায় অর্থমন্ত্রী নানা সংস্কারে হাত দিতে চান। যাতে অগ্রযাত্রার পথটি সুগম হয়। এ উন্নয়ন অগ্রযাত্রার পথে প্রধান প্রতিবন্ধক হিসেবে তিনি মনে করেন অনিশ্চিত স্থানীয় শাসন ব্যবস্থা। ঘনবসতির স্বল্প আয়তনের এ দেশে ক্ষমতার প্রতিসংক্রম ছাড়া কোন উপায়েই উন্নয়ন উদ্যোগে গতিশীলতা আনা যাবে না। এজন্য স্থানীয় শাসন ব্যবস্থার গুণগত সংস্কারকে অত্যন্ত জরুরী বলে তিনি মনে করছেন। এটা বাস্তবায়নে প্রয়োজন দৃঢ় রাজনৈতিক অঙ্গীকার। এই সংস্কার দ্রুত শুরু করার তাগিদ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। উন্নয়নের অগ্রযাত্রার পথে অর্থমন্ত্রী তার উচ্চাভিলাষকে এবারও সঙ্গী করেছেন। আবারও দিয়েছেন বড় অঙ্কের বাজেট। বাস্তবায়নের ব্যর্থতা তাকে হতাশ করেনি। বরং বাস্তবায়নের ব্যর্থতা চিহ্নিত করে তিনি এবার অগ্রযাত্রার পথে এগুনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বাজেট কাঠামোয় তিনি আমূল পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নিয়েছেন। আগামী বাজেট থেকেই নতুন পরিবর্তিত বাজেট দেখতে পাবে জনগণ। যা দেশবাসীর কাছে সহজ ও বোধগম্য হবে। তবে এই বড় অঙ্কের বাজেটের হিসাব আগামী অর্থবছরে কতটা দক্ষতার সঙ্গে অর্থমন্ত্রী মেলাতে পারবেন সেটাই এখন দেখার বিষয়। বাজেটের আকার ॥ সাত দশমিক দুই শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করে অর্থমন্ত্রী আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য তিন লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন। যা জিডিপির ১৭.৪ শতাংশ। এতে অনুন্নয়ন রাজস্ব ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ৮৮ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ১৭ হাজার ২৭ কোটি টাকা। উন্নয়ন ব্যয়ের মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) আকার হচ্ছে এক লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এছাড়া, অন্যান্য ব্যয় রয়েছে ৩৪ হাজার ৬১২ কোটি টাকা। বাজেটের অর্থায়নের জন্য মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। এরমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) রাজস্ব আদায় করবে দুই লাখ ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকা। আর এনবিআর বহির্র্ভূত রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৭ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। এছাড়া কর ব্যতীত প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৩২ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। নতুন বাজেটে রাজস্ব উদ্বৃত্তের পরিমাণ বেড়েছে। এ বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা এবং রাজস্ব ব্যয়ের পরিমাণ ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৫ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা। ফলে রাজস্ব উদ্বৃত্তের পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ২৭ হাজার ৮ কোটি টাকা। যা চলতি ২-১৫-১৬ অর্থবছরের চেয়ে ৩ হাজার ১২৪ কোটি টাকা বেশি। এ বছর রাজস্ব উদ্বৃত্তের পরিমাণ ছিল ২৩ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা। রাজস্ব উদ্বৃত্তের পরিমাণ কিছুটা বৃদ্ধি পাওয়ায় উন্নয়ন কর্মকা-ে সরকারের অর্থ যোগানও বেড়ে যাচ্ছে আগামী বছরে। কম আয় এবং বেশি ব্যয়ের কারণে প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৭ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা। যা জিডিপির ৫ শতাংশ। এই ঘাটতি বৈদেশিক উৎস এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সংগ্রহ করা হবে। এরমধ্যে বৈদেশিক উৎস থেকে সংগ্রহ করা হবে ৩৬ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা। আর অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ঋণ গ্রহণ করা হবে ৩৮ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা। আর ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে নেয়া হবে ২২ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। এরমধ্যে জাতীয় সঞ্চয়পত্র থেকে সংগ্রহ করা হবে ১৯ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেট ॥ অর্থমন্ত্রী মনে করেন, এগিয়ে যেতে হলে লক্ষ্য উচ্চাভিলাষী হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু সংস্কার কার্যক্রম আশানুরূপ বাস্তবায়িত না হওয়ায় চলতি অর্থবছর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। এ কারণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৮ শতাংশ কমাতে হয়েছে। অন্যদিকে, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী বিশেষ করে প্রকল্প সাহায্য ব্যবহারে সক্ষমতার ঘাটতিসহ নানাবিধ কারণে সরকারী ব্যয় বাজেট প্রাক্কলন থেকে কম হয়েছে। এসব বিবেচনায় চলতি অর্থবছরের বাজেট সংশোধন করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে রাজস্ব প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৮ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা। এ লক্ষ্যমাত্রা হ্রাস করে সংশোধিত বাজেটে তা এক লাখ ৭৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকায় পুনর্নির্ধাণর করা হয়েছে। পাশাপাশি মূল বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় ছিল ১ লাখ ২ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকা। এরমধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর আকার ছিল ৯৭ হাজার কোটি টাকা। এটা সংশোধন করে উন্নয়ন ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৫ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী কাটছাঁট করে নির্ধারণ করা হয়েছে ৯১ হাজার কোটি টাকা। উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন ব্যয়সহ ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে সর্বসাকল্যে ব্যয়ের পরিমাণ ছিল দুই লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এই ব্যয় কাটছাঁট করে দুই লাখ ৬৪ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকায় সংশোধন করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতির প্রাক্কলন করা হয়েছিল ৮০ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এই বাজেট ঘাটতি বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৮২ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা। যা জিডিপির ৪.৭ শতাংশ। আজ শুক্রবার বিকেল ৩টায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বাজেটউত্তর সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। আর বাজেটের ওপর আলোচনার শেষে আগামী ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পাস হবে নতুন বাজেট।
×