ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

স্বেচ্ছাচার কাম্য নয়

প্রকাশিত: ০৩:৩২, ২ জুন ২০১৬

স্বেচ্ছাচার কাম্য নয়

শুনতে রূঢ় শোনালেও বাস্তবতা হচ্ছে যার কাজ তাকেই সাজে, দক্ষতা যোগ্যতা ছাড়া কাজ পাওয়ার চেষ্টা সুনীতি নয়। আর যারা এই কাজ পাইয়ে দেন তারা নিশ্চিতভাবে অনিয়মই করেন। প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ও প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা বিনা বিশেষায়িত কোন কর্ম সম্পাদিত হতে পারে না। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র বলে নয়, শিক্ষক প্রশিক্ষণের কাজ শিক্ষা প্রদানের প্রকল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এমন সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে করা সম্ভব হতে পারে না। এটি অযোগ্য প্রতিষ্ঠানের পাওয়া সমীচীন নয়। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে তাদেরই কথিত আগ্রহে এবং নিয়মবিরুদ্ধভাবে যে কাজ বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রকে পাইয়ে দেয়া হচ্ছে সেটির জন্য ওই প্রতিষ্ঠানের বিশেষ তৎপরতা ও তদবির ছিল না- এটা জোর দিয়ে কি বলা যাবে? দেশের লাখো শিক্ষার্থীর মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ জাগানোর কৃতিত্বের দাবিদার উক্ত প্রতিষ্ঠানের নীতিনৈতিকতা নিয়ে যদি এখন কোন কোমলমতি স্কুলশিক্ষার্থী প্রশ্ন তোলেন, তবে প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার, যিনি একজন সাবেক শিক্ষক, কী জবাব দেবেন? এটা ঠিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ জাগানো এবং বহু বইয়ের সঙ্গে তাদের পরিচয় করিয়ে দেবার কারণে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র-প্রধান আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেছেন। কিন্তু শিক্ষক প্রশিক্ষণের কাজে তো প্রতিষ্ঠানটি একেবারেই অনভিজ্ঞ। জনকণ্ঠে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে- পদ রক্ষায় বিশ্বব্যাংককে তুষ্ট করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সেকেন্ডারি এডুকেশন কোয়ালিটি এ্যান্ড এ্যাকসেস এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্টের (সেকায়েপ) ৪৪ কোটি টাকা অপচয়ের আয়োজন চলছে। এ লক্ষ্যে প্রকল্পের পরিচালকসহ কয়েক কর্মকর্তার বদৌলতে কোন দরপত্র ছাড়াই সরকারী ক্রয়নীতি লঙ্ঘন করে শিক্ষক প্রশিক্ষণসহ কমিউনিটি মবিলাইজেশনের কাজ দেয়া হচ্ছে সম্পূর্ণ অদক্ষ প্রতিষ্ঠান বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রকে। গণিত, ইংরেজী এবং বিজ্ঞান বিষয়ে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি এবং শিক্ষা কার্যক্রমে নিয়োগের জন্য প্রকল্প কর্তৃপক্ষের আহ্বান করা আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে তিনটি প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচিত করা হয়। এর মধ্যে ইংরেজীর জন্য ব্রিটিশ কাউন্সিল, গণিতের জন্য ফিলিপিন্সের এমসিএস ও বিজ্ঞানের জন্য দেশীয় ইএডিএস প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন করা হয়। অথচ নির্বাচিত তিনটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানকে বাদ দেয়া হয়েছে। যদিও প্রকল্প পরিচালক দাবি করেছেন, টেন্ডার না হলেও সরকারী কোন নিয়ম লঙ্ঘন হয়নি। এটি এক আজব কথা! একই সঙ্গে তিনি বলছেন, ‘বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এ প্রকল্প চলে। বিশ্বব্যাংকই চেয়েছে এই কাজটা বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র করুক।’ তারা করলে কাজ ভাল হবে বলে বিশ্বব্যাংক চিঠি দিয়ে জানিয়েছে বলেও দাবি করেন পরিচালক। শিক্ষকের মনকে রুচিস্নিগ্ধ ও উন্নত করে তোলা গেলে ছাত্রসমাজও তার স্পর্শে সম্পন্ন হয়ে উঠতে পারে, এই লক্ষ্য সামনে রেখে ২০১১ সাল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের সঙ্গে যৌথ-উদ্যোগে প্রতিবছর দেশের ৫৮টি পিটিআইয়ের দশ হাজার প্রশিক্ষণার্থীর সবার জন্য ২০টি করে বই পড়ানোর কর্মসূচী হাতে নেয় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। এটিকে কি আমরা শিক্ষক প্রশিক্ষণের কাজ পাবার যোগ্যতা হিসেবে ধরব? সত্যি সেলুকাস কী বিচিত্র এ দেশ! আমরা আশা করব, শিক্ষক প্রশিক্ষণের মতো একটি সুদূর প্রভাব বিস্তারকারী গুরুত্ববহ কাজ নিয়মনীতি মেনে সুযোগ্য প্রতিষ্ঠানকেই দেয়া হবে। শিক্ষা নিয়ে স্বেচ্ছাচার কাম্য নয়।
×