ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার

হবিগঞ্জের ৩ ভাইয়ের মামলার রায় আজ

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১ জুন ২০১৬

হবিগঞ্জের ৩ ভাইয়ের মামলার রায় আজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে হবিগঞ্জের দুই সহোদর মহিবুর রহমান বড় মিয়া ও মুজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়া এবং তাদের চাচাত ভাই আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে মামলার রায় আজ ঘোষণা করা হবে। অন্যদিকে নোয়াখালী জেলার সুধারাম থানার ৫ রাজাকারের বিরুদ্ধে অভিযোগের (চার্জের) উপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। আদেশের জন্য ২০ জুন দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মঙ্গলবার এ আদেশগুলো প্রদান করেছেন। আজ হবিগঞ্জের তিন ভাইয়ের রায় ঘোষণা করা হবে। এর আগে প্রসিকিউশন ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে গত ১১ মে আদালত মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখে। তিন আসামি বানিয়াচং উপজেলার মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া, তার ছোট ভাই মুজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়া এবং তাদের চাচাত ভাই আব্দুর রাজ্জাক এ মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণের মতো ৪টি অভিযোগ আনা হয়েছে। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন ও রেজিয়া সুলতানা চমন। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী গোলাম কিবরিয়া, পারভেজ হোসেন ও এম. মাসুদ রানা। প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন জনকণ্ঠকে বলেন, এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ১২ জন এবং আসামিপক্ষে সাত জনের সাক্ষ্য শুনেছে আদালত। গত বছর ২৯ সেপ্টেম্বর যুদ্ধাপরাধের চার ঘটনায় অভিযোগ গঠনের মধ্যে দিয়ে এই তিন ভাইয়ের বিচার শুরু করে আদালত। সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় ২১ অক্টোবর। আসামিদের মধ্যে মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া (৬৫) হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলাধীন খাগাউড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। তার ভাই মুজিবুর রহমান আঙ্গুর (৬০) বর্তমান চেয়ারম্যান। দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তদন্ত শুরু করে প্রসিকিউশনের তদন্ত দল। তদন্তের সময় ২১ জনের বক্তব্য শুনেন তদন্ত কর্মকর্তা। মুক্তিযুদ্ধের সময় খাগাউড়া গ্রামে নেজামে ইসলামের এমএনএ সৈয়দ কামরুল আহসানের বাড়িতে রাজাকার ক্যাম্প ও টর্চার সেল ছিল। আর তাদের বড় ভাই কলমধর ছিলেন খাগাউড়া ইউনিয়ন শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান এবং ছোট ভাই মোস্তফা ছিলেন রাজাকার কমান্ডার। প্রসিকিউশনের আবেদনে ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনাল দুই সহোদরের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। ওইদিনই বানিয়াচং থেকে তাদের গ্রেফতার করে স্থানীয় পুলিশ। ১২ ফেব্রুয়ারি তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। অন্যদিকে গত বছরের ১৭ মে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির দু’দিন পর মহিবুর-মুজিবুরের চাচাত ভাই রাজ্জাককে মৌলভীবাজারের আথানগিরি পাহাড় থেকে গ্রেফতার করা হয়। ওইদিনই ট্রাইব্যুনালে তিনজনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় প্রসিকিউশন। ট্রাইব্যুনাল ৩১ মে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয়। চার অভিযোগ(চার্জ) ॥ চার্জ ১ : বলা হয়, ১৯৭১ সালের ১১ নবেম্বর বানিয়াচং উপজেলায় অভিযান চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধা আকল আলী ও রজব আলীকে হত্যা করে লাশ গুম করে আসামিরা। চার্জ ২ : আসামিরা পাকিস্তানী বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মেজর জেনারেল এমএ রবের বাড়িতে হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজ করে। চার্জ ৩ : একই দিন খাগাউড়া এলাকার উত্তরপাড়ায় আসামিদের সহযোগিতায় পাকিস্তানী বাহিনী মঞ্জব আলীর স্ত্রী ও আওলাদ ওরফে আল্লাত মিয়ার ছোট বোনকে ধর্ষণ করে। পরে আল্লাত মিয়ার বোন বিষপানে আত্মহত্যা করেন। চার্জ ৪ : একাত্তর সালের ভাদ্র মাসের যে কোন একদিন আনছার আলীকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন চালায় আসামিরা। ওই নির্যাতনে পঙ্গু হন আনছার আলী। নোয়াখালীর ৫ রাজাকার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে নোয়াখালী জেলার সুধারাম থানার ৫ রাজাকারের বিরুদ্ধে অভিযোগের (চার্জের) উপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। আদেশের জন্য ২০ জুন দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মঙ্গলবার এ আদেশ প্রদান করেছে। পাঁচ আসামির মধ্যে এই মামলায় আটক আছেন- আমীর আহম্মেদ ওরফে আমীর আলী, মোঃ ইউসুফ, মোঃ জয়নাল আবেদীন ও মোঃ আব্দুল কুদ্দুস। পলাতক রয়েছেন আবুল কালাম ওরফে একেএম মনসুর। ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশন পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর জাহিদ ইমাম। অন্যদিকে আসামি পক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট মাসুদ রানা।
×