ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

রাস্তায় সিমেন্ট মিশ্রিত তরল বর্জ্য, বৃষ্টিতে কাদা পানি, খানাখন্দ ॥ স্কুলের মাঠে কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড

দুর্ভোগের আরেক এলাকা মৌচাক মোড় থেকে সিদ্ধেশ্বরী সড়ক

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ২৯ মে ২০১৬

দুর্ভোগের আরেক এলাকা মৌচাক মোড় থেকে সিদ্ধেশ্বরী সড়ক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সিদ্ধেশ্বরী বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বের হতেই রাস্তায় সিমেন্টমিশ্রিত তরল বর্জ্য। সঙ্গে জৈষ্ঠ্যের বৃষ্টিতে কাদাপানি তো আছেই। মৌচাক মোড় থেকেই রাস্তা ভাঙ্গাচোরা। গর্তে জমে থাকে পানি। সব মিলিয়ে এ সড়কে ভোগান্তি নিত্যদিনের। স্কুল শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ আরও বেশি। তারা জানিয়েছে, ময়লামিশ্রিত পানির কারণে একদিনের বেশি কাপড় ব্যবহার করা যায় না। আশপাশের ফø্যাটে থাকা বাসিন্দাদের ঘর থেকে বের হলেও পড়তে হচ্ছে কাদাপানির মধ্যে। আছে কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের শব্দদূষণ ও দুর্গন্ধও। এ নিয়ে শিক্ষার্থী, স্থানীয় মানুষ ও পথচারীদের অভিযোগের শেষ নেই। জমছে ক্ষোভও। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বৃষ্টি না হলেও তরল বর্জ্যরে যন্ত্রণা লেগেই থাকে। বছরের পর বছর চলছে এরকম দুর্ভোগ! সিদ্ধেশ্বরী স্কুলের ঠিক বিপরীত দিকে খেলার মাঠ। যেখানে মগবাজার-মৌচাক উড়াল সড়কের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড স্থাপন করছে তমা গ্রুপ। মাঠের তিনদিকে গড়ে তোলা হয়েছে অস্থায়ী স্থাপনা। শুধু সিদ্ধেশ্বরী স্কুলের সামনের গেট খোলা। এ গেট দিয়েই রাতদিন রাস্তায় ঠেলে দেয়া হচ্ছে সিমেন্টমিশ্রিত তরল বর্জ্য। অথচ স্কুলেরই মাঠ এটি। বর্জ্যরে কারণে দিনের পর দিন দুর্ভোগ হলেও এর কোন প্রতিকার মিলছে না। উপায়হীন এলাকার মানুষ সিটি কর্পোরেশন থেকে শুরু করে, প্রকল্পের পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট দফতরসমূহে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা। প্রশ্ন হলো তাহলে কি দিনের পর দিন দুর্ভোগের মধ্য দিয়েই চলতে হবে স্থানীয় বাসিন্দাসহ পথচারীদের? জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিল্লাল জনকণ্ঠকে বলেন, উড়াল সড়কসহ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের নিয়ন্ত্রণ এলজিইডির হাতে। তবে স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা একাধিকবার সার্বিক বিষয় উল্লেখ করে জনদুর্ভোগ কমানোর জন্য এলজিইডিকে চিঠি দিয়েছি। মেয়র মহোদয় এলাকা ভিজিট করে সমস্যা সমাধানে নির্দেশ দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কেও বিষয়টি জানানো হয়েছে কিন্তু কাজ হচ্ছে না। বাস্তবতা হলো জনদুর্ভোগ হলেও আমরা তো উন্নয়ন কাজটি বন্ধ করে দিতে পারি না। যারা কাজটি করছেন তাদের বিষয়টি উপলব্ধি করা উচিত। আমার মনে হয়, ঠিকাদাররা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি এলজিইডিসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করার পরামর্শ দেন। সরেজমিন দেখা গেছে, মৌচাক মোড় থেকে সিদ্ধেশ্বরী সড়কে প্রবেশ মাত্রই দুর্ভোগের শুরু। সিদ্ধেশ্বরী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে গিয়ে দেখা গেছে, মাঠের ভেতরে মিকচার মেশিন দিয়ে কাজ চলছে। রাস্তা থেকে ঢালু করে মাঠের ভেতরে মাটি উঁচু রাখায় সিমেন্টমিশ্রিত তরল বর্জ্য নামছে। নির্মাণকাজে যুক্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, তাদের যেভাবে নির্দেশনা দেয়া আছে সেভাবেই কাজ করছেন। মাঠের ভেতরে কাজের পরিবেশ ঠিক রাখতে সিমেন্টমিশ্রিত পানি রাস্তায় ফেলা হচ্ছে বলে জানান তারা। তাছাড়া মাঠে এরকম বর্জ্য ফেলার কোন ব্যবস্থা নেই। তবে প্রকল্পের নির্মাণকাজ শেষ হলে দুর্ভোগও কমে আসার কথা জানান নির্মাণ শ্রমিকরা। তরলমিশ্রিত বর্জ্যরে কারণে সৃষ্ট জনদুর্ভোগের প্রতিকার চেয়ে ২০১৪ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অঞ্চল-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর আনুষ্ঠানিক আবেদন করা হয় স্থানীয় পাটিও ফ্ল্যাট ওনার্স ওয়েলফেয়ার এ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে। এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ রুহুল আমিন স্বাক্ষরিত আবেদনে জনদুর্ভোগের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা হয়। আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ২২ অক্টোবর জনদুর্ভোগ লাঘবে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অঞ্চল-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আনুষ্ঠানিক চিঠি দেন মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার প্রকল্পের পরিচালক মোঃ নাজমুল আলম বরাবর। আবেদনের অনুলিপি পাঠানো হয় তমা গ্রুপসহ সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের কাছেও। আবেদনের দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও প্রতিকার মেলেনি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রক্যেকেই। জনকণ্ঠের পক্ষ থেকে প্রকল্প পরিচালক নাজমুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোন কথা বলতে রাজি হননি। বৃহস্পতিবার সরেজমিন দেখা গেছে, শুধু সিমেন্টের তরলমিশ্রিত পানি নয় সিদ্ধেশ্বরী সড়কে এলোপাতাড়ি করে রাখা হয়েছে কয়েকটি মিকচার মেশিনের গাড়ি। এতে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে মৌচাক মোড় থেকেই। এছাড়াও রাস্তার উপর পণ্য পরিবহনের জন্য ট্রাক, ওয়াগন রাখারও অভিযোগ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সিদ্ধেশ্বরী সড়কের সুফিয়া ফার্মার ইউসুফ জানান, প্রতিদিনই তরলমিশ্রিত কাদা মাড়িয়ে এলাকাবাসীকে রাস্তা দিয়ে চলতে হচ্ছে। শিক্ষার্থীরাও এ নিয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। সিদ্ধেশ্বরী বুক সেন্টারের কাজল জানালেন, সবাই এ সমস্যার প্রতিকার চায় কিন্তু কারা প্রতিকার করবেন। দুই বছরের বেশি সময় কাদাপানির দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কোথাও কাদা পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত গিয়ে ঠেকছে। সিদ্ধেশ্বরী স্কুলের শিক্ষার্থী সুজন জানায়, ময়লামিশ্রিত পানির কারণে একটি পোশাক এক দিনের বেশি ব্যবহার করা যায় না। রাস্তায় গেলেই ময়লায় প্যান্ট ভরে যায়। স্থানীয় বাসিন্দা রঞ্জু জানালেন, এলাকাবাসী এক হয়ে তমা গ্রুপকে রাস্তায় ময়লা ফেলতে নিষেধ করেছেন। যারা মাঠে কাজ করছেন তাদেরও নিষেধ করা হয়েছে। অপর বাসিন্দা সুমন জানান, এ এলাকায় যারা বসবাস করছেন শুধু তারাই দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন তা নয়। স্কুল শিক্ষার্থী, অভিভাবক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী ও ক্রেতা সবার দুর্ভোগ সমান। অথচ বিষয়টিকে কেউ গুরুত্ব দিচ্ছেন না।
×