ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মিথ্যে মামলায় ১৫ বছর সাজা ভোগ ॥ মুক্তি পেয়েও শঙ্কায়

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ২৮ মে ২০১৬

মিথ্যে মামলায় ১৫ বছর  সাজা ভোগ ॥ মুক্তি পেয়েও শঙ্কায়

এ আর এম মামুন, চরফ্যাশন ॥ ভোলার চরফ্যাশনের নুরাবাদ ইউনিয়নের ফরিদাবাদ গ্রামের শান্ত শিশু আবদুল জলিল, বয়স তার ৯ কি ১০। এর বেশি কিছুতেই নয়। মামলার স্বার্থে লেখা হয়েছে তার বয়স ১৫ বছর। কিন্তু তাও আইনে কাভার দেয়নি। সেই জলিলকে অবশেষে ১৬ বছর পর হাইকোর্ট থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। শুধু কী মুক্তি? সেই সঙ্গে এতগুলো বছরের ক্ষতিপূরণ ৫০ লাখ টাকা! এতগুলো বছর জেলে কাটানোর ক্ষতিপূরণ না হয় টাকায় হলো। কিন্তু বৃদ্ধ অসহায় দরিদ্র পিতা হাসেম আলী তার নাবালক পুত্র জলিলের মুক্তির জন্য যে ভিটেমাটি সব হারিয়ে এই পৃথিবী থেকে চিরতরে বিদায় নিলেন তার ক্ষতিপূরণ কী দিয়ে হবে? কে দিতে পারবে? এই কথাগুলোই আব্দুল জলিলের বৃদ্ধা মা সালেকার মনে বারবার ঘুরে ফিরে আসে। সালেকা বেগমের প্রশ্ন আমার ছেলেকে তো ফিরে পেয়েছি। আবার কোনো ঝামেলা হবে না তো? শিক্ষিত লেখাপড়া জানা প্রতিপক্ষ। তাদের হাত তো অনেক লম্বা। টাকার জোরে সবাইকে কিনে নিতে পারে। সালেকা বেগমের মন দিন রাত এখন এই দুশ্চিন্তায় ঘুরপাক খাচ্ছে। কে তাকে নিশ্চয়তা দিবে যে, তার ছেলের আর কোন ভয় নেই। ১৬ বছর পর হলেও সে ন্যায় বিচার পেয়েছে। দেশে এখনো ন্যায় বিচার আছে। এটাই যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। ভুল মামলায় ভোলার চরফ্যাশনের আবদুল জলিলের যাবজ্জীবন সাজার রায় বাতিল, তাকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য আদালতের নির্দেশের বায় গত বুধবার প্রকাশিত হয়। শুক্রবার জলিলের খোঁজ নিতে গিয়ে জানা যায় ১৬ বছর আগের না জানা যত কথা। স্থানীয়রা জানান, উপজেলার ফরিদাবাদ গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে ঘর তুলে থাকতেন আবদুল জলিলের পিতা-মাতা হাসন আলী ও সালেকা বেগম। মাত্র ১২ শতক জমিতে একটি কুড়ে ঘর। কিন্তু বাড়ির অন্য শরিকদের লোভ ওই জমির ওপর। বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখিয়েও কোন কাজ হয়নি। প্রতিদিন নানাভাবে উৎপাত চলতেই থাকছে হাসেম আলী ও তার সন্তানদের ওপর। স্ত্রী ৩ ছেলে আর ৩ মেয়ের সংসার নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন দিনমজুর হাসেম আলী। এমনি অবস্থায় একদিন ওই বাড়ির মাওলানা জাফরের ৫ থেকে ৬ বছরের শিশুকন্যা পুকুর পাড়ে ছোট্ট একটি গাছে চড়ার সময় পড়ে গিয়ে ব্যথা পায়। তার চিৎকারে বাড়ির লোকজন এসে দেখে রক্তাক্ত মেয়েটি কাঁদছে। অদূরের বিলের মধ্যে হাসেম আলীর ৮ থেকে ৯ বছরের ছেলে আবদুল জলিল ছাগলকে ঘাস খাওয়াচ্ছিল। ব্যস, জলিলের বিরুদ্ধে চরফ্যাশন থানায় মামলা করা হলো ধর্ষণের।
×