ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ নুরুজ্জামান

ইংল্যান্ডে এ্যান্ডারসন-রাজত্ব

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ২৫ মে ২০১৬

ইংল্যান্ডে এ্যান্ডারসন-রাজত্ব

‘আমি উচ্ছ্বসিত। জিমির জন্য গোটা ইংল্যান্ড জাতিই গর্বিত। সে পরিপূর্ণ এক ফাস্ট বোলার। গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ইংল্যান্ড ক্রিকেটে আলো ছড়িয়ে আসছে। অনেক অনেক জয়ে রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। এই সময়ে ওর বোলিং আমি উপভোগ করেছি। উইকেট শিকারে ‘নাম্বার-ওয়ান’ হওয়াটা তাঁকেই মানায়। আমার বিশ্বাস সে অনেক দূর এগিয়ে যাবে। জিমি দ্রুতই ৪০০ উইকেট শিকার করবে।’ গত বছর এপ্রিলে ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক (৩৮৪) হওয়ার সময় বলেছিলেন ইয়ান বোথাম। ৩৮৩ শিকার নিয়ে তার আগে পর্যন্ত ওপরে ছিলেন স্যার বোথামই (১৯৭৭-১৯৯২)। ভবিষ্যদ্বাণী ফলতে দেরি হয়নি। প্রথম ইংলিশ বোলার হিসেবে ৪শ’র ল্যান্ডমার্ক পেরিয়ে এ্যান্ডারসনের নামের পাশে এখন ৪৪৩ উইকেট। হেডিংলিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চলমান সিরিজের প্রথম টেস্টে নিয়েছেন ১০ উইকেট (৫+৫)। শেষ ব্যাটসম্যান শামিন্দা ইরাঙ্গাকে আউট করে রেকর্ড বইয়ে নিজেকে আরেক ধাপ ওপরে তুলে নেন এ্যান্ডারসন। ৪৫ রান দিয়ে ম্যাচে নিয়েছেন ১০ উইএকট। বোলিং গড় ৪.৫Ñ ১৯৬১ সালে ফ্রেড ট্রম্যানের পর যা ইংলিশ পেসারদের মধ্যে সেরা। এর মধ্য দিয়ে গ্রেট কপিল দেবকে টপকে ইতিহাসে সর্বাধিক শিকারির তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে উঠে এসেছেন ইংলিশ পেসার। ১১৪তম টেস্টে এ্যান্ডারসনের উইকেট এখন ৪৪৩। ৪শ’র ক্লাবে তিনিই সবার ওপরে। কপিলের উইকেট ৪৩৪টি। ৮০০ উইকেট নিয়ে সবার ওপরে সাবেক লঙ্কান স্পিনার মুত্তিয়া মুরলিধরন! কেবল পেসারদের হিসেবে ধরলে এ্যান্ডারসন এখন টেস্ট ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। তাঁর ওপরে কোন দুজন পেসার আছেন? ক্রিকেটপ্রেমীদের সেটি অনুমান করে নিতে কষ্ট হওয়ার কথা নয়। সাবেক অস্ট্রেলিয়ান গ্লেন ম্যাকগ্রা (৫৬৩ উইকেট) ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি ফার্স্ট বোলার কোর্টনি ওয়ালশ (৫১৯)। দুজন আছেন চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে। পেসার-স্পিনার মিলিয়ে হিসেব করলে এ্যান্ডারসন ছয় নম্বরে। সেরা তিনটি স্থান তিন কিংবদন্তি স্পিনার মুরালিধরন (৮০০), শেন ওয়ার্ন (৭০৮), অনিল কুম্বলের (৬১৯)। বয়স ৩৪ ছুঁই ছুঁই, এ্যান্ডারসনের পক্ষে তালিকায় হয়ত খুব বেশি ওপরে ওঠা সম্ভব নয়। ওয়ালশের চেয়ে ৭৯ উইকেট পিছিয়ে তিনি। তবে যে কীর্তি গড়েছেন, সেটিই বা কম কী। অনেকের চোখে এ্যান্ডারসন সব সময়ের সেরা ইংলিশ বোলারদের একজন, তাঁর সুইং বোলিংও শিল্পের স্বাদ দিয়ে যায়। সেই শিল্পের স্বীকৃতি এ্যান্ডারসন পেলেন রেকর্ড বইয়েও। ক্যারিয়ার শেষে যখন দেখবেন, কপিল দেব, রিচার্ড হ্যাডলি (৪৩১), শন পোলকদের (৪২১) মতো বোলারদের পেছনে ফেলে এসেছেন, একটু গর্ব তো হবেই। গ্রেট অলরাউন্ডার বোথাম ১৯৭৭ থেকে ১৯৯২ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের হয়ে ১০২ টেস্ট (৩৮৩ উইকেট, ৫২০০ রান) ও ১১৬ ওয়ানডে (১৪৫ উইকেট, ২১১৩ রান) খেলেন। ১৯৮৫ সালে বব উইলিসকে টপকে (৩২৫) সর্বোচ্চ শিকারির তালিকায় নাম লিখিয়েছিলেন সাবেক ডানহাতি মিডিয়াম পেসার। পেসার হিসেবে সর্বোপরি টেস্ট ইতিহাসের তৃতীয় সর্বোচ্চ শিকারি এ্যান্ডারসন। সামনে কেবল ম্যাকগ্রা ও ওয়ালস। আধুনিক সময়ে সুইংয়ের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত এ্যান্ডারসনের টেস্ট অভিষেক ২০০৩ সালে। ক্রিকেট মক্কা লর্ডসে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে জীবনের প্রথম ইনিংসেই নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। এ পর্যন্ত ইনিংসে ৫ উইকেটে নিয়েছেন ২০ বার, সেরা ৭/৪৩। ম্যাচে ১০ উইকেট ৩ বার, সেরা ১১/৭১। কোচ এ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের পরিচর্যায় (২০০৯-২০১১ মৌসুমে) টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে ওঠে ইংল্যান্ড। ইংলিশ ক্রিকেটের পুনর্জন্ম বলা হয় ওই সময়টাকে। যেখানে মাঠে দলটির সাফল্যের অন্যতম রূপকার এই এ্যান্ডারসন। অধিনায়ক এ্যান্ড্রু স্ট্রস ও কোচ ফ্লাওয়ারের তুরুপের তাস ছিলেন তিনি। স্ট্রস-ফ্লাওয়ার, দুজনের কেউই আর ইংল্যান্ড ক্রিকেটের সঙ্গে নেই। কিন্তু সেআ তার এখনও এ্যান্ডারসনকে ভুলতে পারেন না। সাবেক ইংলিশ কোচ ফ্লাওয়ার যেমন বলেন, ‘আমি বরং ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের জন্য জিমিকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে দেখে কিছুটা হতাশই হয়েছি। মাঝে ইনজুরি, ফর্মহীনতা, দলের দৈন্য ওকে ভুগিয়েছে। ইংল্যান্ডের হয়ে বল হাতে সর্বোচ্চ সিংহাসনে বসাটা ওকেই মানায়। ও দেশটির ক্রিকেটের জন্য একটা বড় সম্পদ। যে খেলা চালিয়ে যাওয়া অবস্তাতেই বসল কিংবদন্তির কাতারে। আমি মনে করি একদিন সে ৫শ উইকেটের গ-িও পেরিয়ে যাবে।’ তবে এজন্য দল হিসেবে ইংল্যান্ডকে গুছিয়ে উঠতে হবে বলেও মনেকরেন তিনি। ফøাওয়ার আরও যোগ করেন। ‘আমি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, ইংল্যান্ডে প্রতিভার কোন ঘাটতি নেই। প্রয়োজন কেবল সঠিক পরিচর্যা। মাঠের বাইরে স্থিতিশীলতাও জরুরী। যখন দল হিসেবে ইংল্যান্ড ভাল করবে, বোলিংয়ে এ্যান্ডারসন একজন বড় মাপের পার্টার পাবে, তখন ও আরও ভাল করবে।’ নেতৃত্ব থেকে দেখার অভিজ্ঞতা থেকে সাবেক তারকা স্ট্রস বলেন, ‘জিমি কেবল গায়ের জোরে নয়, বল করার সময় মাথাটাও খাটাতে পারে। অধিনায়ক থাকাকালে আমি স্পষ্ট সেটা দেখতে পেতাম। অনেক অনেক ম্যাচে ও একাই খেলার মোড় ঘুড়িয়ে দিয়েছে। বল হাতে রয়েছে দারুণ কারুকাজ। দল হিসেবে ইংল্যান্ড গুছিয়ে উঠতে পারলে এ্যান্ডারসন আরও বহুদূর যাবে। আমি ওর সাফল্য কামনা করছি।’ হেডিংলিতে প্রতিপক্ষ অধিনায়ক এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের বাহবাহও পেয়েছেন এ্যান্ডারসন। লঙ্কাপতি বলেন, ‘সে সবসময়ই পার্থক্য গড়ে দেয়া পেসার। আমরা আগে থেকেই ওকে নিয়ে পরিকল্পনা করেছি। বোথামকে ছাড়িয়ে যাওয়ায় ওকে শুভকামনা জানাই। তবে আমাদের চেষ্টা থাকবে পরের ম্যাচগুলোতে ঠিকমতো তাঁকে প্রতিহত করা।’
×